শুরু হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। টানা এক মাস চলবে এ মহাযজ্ঞ। ফুটবলের এই আসর থেকে উঠে আসবেন ভবিষ্যতের তারকা। আবার অনেকের কাছে এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্ব ফুটবলের এই বড় আসরে খেলোয়াররা তাদের তুল ধরতে কার্পণ্য করবেন না।
ফুটবল প্রেমীরা তাদের পছন্দের খেলোয়ারদের ফ্রি কিক, ডাবলিং দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। কোন কোন খেলোয়ার আবার বিশ্বকাপের আসর থেকে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিবেন।
তবে এবার কোন কোন ফুটবলারের দিকে দর্শকদের নজর থাকবে, বা মাতাতে চলেছেন বিশ্বকাপ; চলুন তাদের জেনে নেওয়া নেই।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
বিশ্বকাপের আগে ম্যান ইউ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনায় আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। তবে এসব কিছু বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। পর্তুগালের হয়ে সর্বাধিক ১১৭টি গোল করেছেন। ৩৭ বছরেও তিনি গোলের সামনে সব সময়ই বিপজ্জনক। প্লেমেকারের ভূমিকাতেও সফল। পর্তুগালের সাফল্য নির্ভর করবে তাঁর উপরেই। এটা শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে তার।
হাকিম জিয়েখ
আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারেন মরক্কোর হাকিম জিয়েখ। নির্ভুল পাস বাড়ানোর দক্ষতা, গতি, ড্রিবলিং, টেকনিক্যাল নানা বিষয়ের দক্ষতার পাশাপাশি অসাধারণ ফ্রি কিক নিতে পারদর্শী। চেলসির এই উইঙ্গারের ওপর নির্ভর করবে মরক্কোর শেষ ১৬-তে পৌঁছানো। মরক্কোর হয়ে ১৭টি গোল রয়েছে তাঁর নামের পাশে।
লিওনেল মেসি
রোনাল্ডো, নেইমার, লেওয়ানডস্কিদের মতো এটা শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসির। মেসির বয়স এখন ৩৫। আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা জেতানোর পর মেসি চাইবেন অধরা বিশ্বকাপ ছুঁতে। সাতটি ব্যালন ডি'অর খেতাবজয়ী মেসির দিকে স্বাভাবিকভাবেই থাকবে বিশ্ব ফুটবলের নজর।
নেইমার
নেইমারের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ব্রাজিলের সাফল্য। ২০ বছর পর ফের ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দিতে মরিয়া থাকবেন নেইমার। এটি তাঁরও শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। স্ট্রাইকার, উইঙ্গার, মিডফিল্ডার- সব জায়গাতেই দুরন্ত খেলেন। নেইমারকে বিশ্বকাপে সামলাতে হবে প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের কড়া ট্যাকল। ব্রাজিলের হয়ে এখনও অবধি ৭৫টি গোল রয়েছে নেইমারের।
কিলিয়ান এমবাপে
ফ্রান্স এবারের বিশ্বকাপে নামবে খেতাব দখলে রাখার লক্ষ্যে। চোটের কারণে একাধিক ফুটবলার ছিটকে গিয়েছেন। পিএসজিতে নেইমার, মেসির সঙ্গী এমবাপে আসন্ন বিশ্বকাপে হয়ে উঠতে পারেন মহাতারকা। ২৩ বছরের এমবাপে ইতিমধ্যেই দেশের হয়ে ২৮টি গোল করে ফেলেছেন। দুই উইং ধরেই আক্রমণ শানাতে দক্ষ। আচমকাই গতি বাড়িয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। ফলে তিনি ফ্রান্সকে ফের খেতাব জিতিয়ে নিজেকে বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে আরও উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পাবেন।
হ্যারি কেন
ইংল্যান্ডের হ্যারি কেনের পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে বিশ্বকাপে প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বাধিক গোলের নিরিখে ওয়েন রুনির ৫৩টি গোলের রেকর্ড ধরে ফেলবেন দুবার বল জালে জড়াতে পারলেই। সেন্ট্রাল মিডফিল্ড হোক বা একমাত্র স্ট্রাইকার যে কোনও ভূমিকায় প্রতিপক্ষ রক্ষণকে নাস্তানাবুদ করতে দক্ষ এই ক্যাপ্টেন।
রবার্ট লেওয়ানডস্কি
পোল্যান্ডের রবার্ট লেওয়ানডস্কি নিজের শেষ বিশ্বকাপটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন। তাঁর বয়স এখন ৩৪। বার্সেলোনার হয়ে ১৯টি ম্যাচে ১৮টি গোল করেছেন। জার্মানির বুন্দেশলিগায় সাত সিজনে সর্বাধিক গোল করার নজির গড়েছেন। ২০২০-২১ সিজনে তিনি ৪১টি গোল করেছেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্টার-ফরওয়ার্ডদের একজন।
মিচি বাতশুয়াই
বেলজিয়াম দলে কেভিন ডি ব্রুইন, ইডেন হ্যাজার্ডদের মতো তারকারা রয়েছেন। তবে ফুটবলপ্রেমীদের নজর কাড়তে পারেন মিচি বাতশুয়াই। বেলজিয়ামের হয়ে ২৬টি গোল করেছেন। গতি তাঁর প্রধান অস্ত্র।
ফ্যাবিনহো
ব্রাজিলের ২৯ বছরের মিডফিল্ডার ফ্যাবিনহো সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য দুঃখ হবে। তবে সম্প্রতি অফ ফর্মে আছেন। ব্রাজিলের হয়ে ২৮টি ম্যাচে গোল নেই। ব্রাজিলের হেড কোচ তিতে আক্রমণভাগে ৯ জন ফুটবলার রেখে দল গড়েছেন। তবে স্ট্রাইকারদের বল বাড়াতে ফ্যাবিনহো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গ্যারেথ বেল
এবারের বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারে ওয়েলস। আর সেই দলের প্রধান স্তম্ভ গ্যারেথ বেল। ফর্মে থাকলে তিনি বিধ্বংসী, সে কারণেই বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সুপারস্টার বেল। রিয়াল মাদ্রিদে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া ও ব্যক্তিগত কারণে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়েছেন। সেখানে প্রিমিয়ার লিগ বা লা লিগার মতো কঠিন প্রতিপক্ষ পাবেন না। তারই ফাঁকে বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে নিজেকে উজাড় করে দেবেন নিশ্চিতভাবেই।