ফুটবল বিশ্বকাপে স্বাগতিকরা সবসময়ই অন্যতম ফেবারিট তকমা পায়। প্রতিষ্ঠিত ফুটবল-শক্তিদের কেউ স্বাগতিক হলে তাদেরকে ধরা হয় শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
তবে এবার কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সে তকমার কিছুই জুটেনি স্বাগতিক কাতারের। অর্জনে কিংবা ফুটবল ঐতিহ্যে ফুটবল পরাশক্তি নয় কাতার। আগে একবারও খেলেনি বিশ্বকাপ। শিরোপার দাবিদার ছিল না তারা, এমনকি কোনো ম্যাচে ছিলও না সেভাবে ম্যাচ জয়ের ফেবারিট। কেবল স্বাগতিক হিসেবে জুটেছিল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ।
সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে পারেনি এশিয়ার দেশটি। মাত্র দুই ম্যাচ খেলে অর্থাৎ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় ঘটেছে তাদের। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরেছে তারা ৩-১ গোলে; প্রতিপক্ষ আফ্রিকার দেশ সেনেগাল।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত গ্রুপের অপর ম্যাচে নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর ১-১ গোলে ড্র করলে শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে স্বাগতিকদের জন্যে। ২৯ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে কাতার; অপর ম্যাচে মুখোমুখি হবে সেনেগাল ও ইকুয়েডর। কাতার ছাড়া বাকি তিন দলেরই সমান সুযোগ রয়েছে রাউন্ড অব সিক্সটিনে উন্নীত হওয়ার।
স্বাগতিকদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ঘটনাটি ফুটবল বিশ্বকাপে নজিরবিহীন না হলেও প্রথম ম্যাচ শেষে বিদায়ের ঘটনা এবারই প্রথম। এরআগে একবার ২০১০ বিশ্বকাপে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল, কিন্তু এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ ছিল না তাদের।
দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা উরুগুয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারলেও শেষ ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়েছিল ২-১ গোলে।
এশিয়ায় প্রথমবার ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপ। জাপান ও কোরিয়া ছিল যৌথ আয়োজক। দেশ দুটি বিশ্বফুটবলের প্রতিষ্ঠিত শক্তি না হলেও কাতারের মতো এভাবে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নেয়নি।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে আটটি দল, তাদের মধ্যে কেবল ব্রাজিল ও স্পেন ছাড়া ছয়টি দলই অন্তত একবার নিজেদের দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপ জিতেছে। ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত একবার মাত্র বিশ্বকাপ জিতেছে, এবং সেটা ১৯৬৬ সালে নিজেদের দেশে। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে, ১৯৩৪ সালে ইতালি, ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি স্বাগতিক হিসেবে জিতেছে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি ১৯৭৪ সালে তাদের দ্বিতীয় শিরোপা নিজেদের মাটিতে জিতেছে।
বিশ্বকাপ আয়োজন করে ১৯৫৮ সালে রানার্স-আপ হয় সুইডেন। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি তৃতীয়, ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া চতুর্থ, এবং ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালের আয়োজক রাশিয়াকোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায়।
এছাড়া আয়োজক দল ফ্রান্স ১৯৩৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৯৫০ সালে ব্রাজিল রানার্স-আপ, ১৯৮২ সালে স্পেন দ্বিতীয় রাউন্ডে, ১৯৯০ সালে ইতালি তৃতীয়, ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় রাউন্ড, ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানি তৃতীয় এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিল চতুর্থ হয়।