শ্রেয়াস আইয়ারের ক্যাচ নিতেই বাউন্ডারি লাইনে আফিফ হোসেনের দিকে সবার দৌড়। উইকেটে থিতু হওয়া এই ব্যাটারের বিদায়েই যেন স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। এরপর বাকিরা আসা-যাওয়ার মাঝে থাকলেও রোহিত শর্মার 'ওয়াইল্ড কার্ড' এন্ট্রিতে জমে উঠে ম্যাচ। শেষের দিকে তার ২৭ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস ম্যাচে রোমাঞ্চ জাগালেও স্নায়ু চাপে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ৫ রানের জয়ে ২০১৫ সালের পর ফের ভারতকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারাল বাংলাদেশ। ৩৫ রানের জয়ে এখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে লিটন দাসের দল।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ভারত এদিন ওপেনিংয়ে পায়নি রোহিত শর্মাকে। স্লিপে এনামুলের হক বিজয়ের ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাঁহাতের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ভারতীয় দলপতি। ফলে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন বিরাট কোহলি। তবে প্রথম ম্যাচের মতো এদিন ব্যর্থ হন তিনি।
এবাদত হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন কোহলি। সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ব্যাক্তিগত ৫ রানে। কোহলি আউট হওয়ার পরের ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন ধাওয়ানও। মুস্তাফিজুর রহমানের বুক বরাবর বাউন্সারে মেহেদি হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
ধাওয়ান আউট হয়েছেন মাত্র ৮ রানে। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের বল মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ বলে ১১ রান করা ওয়াশিংটন।
তার বিদায়ে ক্রিজে নেমে আইয়ারের সঙ্গে জুটি বাঁধতে শুরু করেন লোকেশ রাহুল। দলকে ৫০'র ওপর নিয়ে গেলেও দলীয় ৬৫ রানে মেহেদি হাসান মিরাজের সোজা বল লাইনের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন এই ব্যাটার। ২৮ বলে ১৪ করে ফেরেন তিনি।
৪ ব্যাটারকে হারিয়ে ধুকতে থাকা ভারতকে সেখান থেকে টেনে নিতে থাকেন শ্রেয়াস ও অক্ষর প্যাটেল।
নিজেদের মধ্যে শতরানের জুটিও গড়ে তোলেন তারা। এরই মাঝে মিরাজকে ৩৫তম ওভারে সামনে এগিয়ে ছক্কা হাঁকান আইয়ার। এর এক বল পর আবারও ছক্কা হাঁকানোর লোভে মিরাজের ফাঁদে পড়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের তালুবন্দি হন আইয়ার। ১০২ বলে ৮২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ভারতীয়।
কিন্তু সপ্তম উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসে এবাদতের ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকিয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন রোহিত। কিন্তু পরের দুই ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও মুস্তাফিজ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ভারতকে উল্টো চাপে ফেলে দেন। ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মাহমুদউল্লাহ'র ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করলেও এবাদতের ক্যাচ মিসে জীবন পান এই ভারতের অধিনায়ক।
এরপরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৯ বলে ২৩ রানের সমীকরণ নিয়ে আসেন রোহিত। চতুর্থ বলে ২ রান নিলে পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি লাইনে জীবন পান রোহিত। তবে সেখান থেকে আসে এক রান। শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করে সমীকরণ এক ওভারে ২০ রানে নিয়ে আসেন এই অলরাউন্ডার।
তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে ডট বল দিয়ে রোহিতকে চাপে ফেলে দেন মুস্তাফিজ। কিন্তু দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪ বলে ১৬ রানের সমীকরণে নিয়ে আসেন তিনি। তৃতীয় বলে স্কোয়ার কাটে আরও এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ আরও জমিয়ে তোলেন রোহিত।
পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মুস্তাফিজকে উল্টো চাপে ফেলেন রোহিত। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। শেষ বলে দারুন মুস্তাফিজের দারুন এক ইয়র্কারে কোন রান নিতে না পারায় ৫ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দলটি।
এর আগে বাংলাদেশের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মেহেদি হাসান মিরাজ। বরং ভারতীয় বোলারদের মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে লাল-সবুজের দলকে এনে দিয়েছেন ২৭১ রানের পুঁজি। খাঁদের কিনারা থেকে দলকে টেনে নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। ১০০ রানে তিনি অপরাজিত থাকলেও মাহমুদউল্লাহ করেন ৭৬ রান। তাদের জুটি ১৪৮ রানের।