সিরিজ শেষের গল্পটা তাহলে মাশরাফিই লিখছেন!

ক্রিকেট, খেলা

এম.এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-07-22 05:26:27

গল্পটা প্রায় একই রকম মনে হচ্ছে?

-গল্প, কোন গল্প? কৌতুহলী মাশরাফির পাল্টা খোঁজ।

মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলন করে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে অধিনায়ককে মনে করিয়ে দেয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও তো এমনকিছুই ঘটেছিলো। প্রথম ম্যাচ জিতলেন। দ্বিতীয় ম্যাচ হারলেন। তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজের ট্রফি নিয়ে ফিরলেন।

-এবারের ওয়ানডে সিরিজের গল্পটাও একই রকম উপসংহারের পথে যাচ্ছে, তাহলে?

মিরপুরে ছয় ঘন্টার ম্যাচ শেষের ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে ড্রেসিংরুমের প্রবেশ দরজায় পা রাখা মাশরাফি মৃদু হাসলেন। সেই হাসিতে যা ছড়িয়ে দিলেন অধিনায়ক, তার নাম-আশ্বাস।

জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠের সেই সিরিজে শুধু ম্যাচের বর্ননায় মিল নয়, মাঠে মাশরাফির পারফরমেন্সেও বেশ ভালই মিলমিশ দেখা যাচ্ছে! সেবার সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মাশরাফি ছিলেন দলের সেরা বোলিং পারফর্মার। ১০ ওভারে ১ মেডেন সহ মাত্র ৩৭ রানে ৪ উইকেট। এবারো ঠিক তাই! ১০ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সেরা পারফরমেন্সটাই তারই। সাজ্জুস্য রেখেই দুবারই একেবারে ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্স! কি অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে দ্বিতীয় ম্যাচের হিসেব-নিকেষও। সেবার গায়ানায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হারে শেষ ওভারে এসে। যাতে মাশরাফির বোলিং পারফরমেন্স তেমন আহামরি ধাঁচের কিছু ছিলো না। ৯ ওভারে ৪৪ রান খরচায় মাত্র ১ উইকেট। এবারো মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ শেষ ওভারেই! সামজ্জস্য জানাচ্ছে এই ম্যাচে মাশরাফির পারফরমেন্স কিছুটা খরুচের হিসেবেই পড়ে; ১০ ওভারে ৫১ রানে ১ উইকেট।

সমতা নিয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা ম্যাচটা সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ জিতে। মাশরাফি শেষ সেই ম্যাচে ১০ ওভারে ৬৩ রানে ২ উইকেট পান। বাংলাদেশ গড়ে ৩০১ রানের বড় স্কোর। তামিম সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হাফসেঞ্চুরি পান। মাশরাফি নিজেও ব্যাট হাতে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে করেন ৩৬ রান। স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৪৪। সিলেটে এবারের সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করার জন্য কি জমা রেখেছেন তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি। সিরিজে এখনো তামিমের ব্যাট ‘বড় ইনিংস’ দেখেনি। একই অনুযোগ মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের জন্যও বরাদ্ধ। আর অধিনায়ক তো দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ছিলেন অচেনা; ১১ বলে অপরাজিত ৬! শেষের দুই ওভারে দলের সঞ্চয় মাত্র ৪ রান!

সিরিজের শেষ ম্যাচের জন্যই কি তাহলে অধিনায়ক তার সেরাটা জমা রাখছেন কিনা, কে জানে? নিজের ক্রিকেট জীবনের এখন পর্যন্ত সব কৃতিত্ব, লড়াই করা, পড়ে যাওয়া, আবার উঠে দাড়ানো, হারতে থাকা দলকে জিততে শেখানো, পিছিয়ে পড়েও জিততে জানার গৌরব গাঁথার ক্রিকেটীয় স্ক্রিপ্ট তো অধিনায়ক মাশরাফিই স্বহস্তেই লিখেছেন।

এই সিরিজের উপসংহার লেখাও যে শুধু তাকেই মানায়। জিততে শেখার আনন্দে ইনজুরিকে হারিয়ে ১৮ বছর ধরে এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কি বিপুল সাফল্যের রংয়ে রাঙিয়েছে! ক্রিকেটকে ভালবেসেছে নিঃস্বার্থ ভঙ্গিতে। সন্মানিত করেছে নিজের সবটুকু উজাড় করে। দায় চুকানোর দাবি তুলছি না; তবে স্বয়ং ক্রিকেট তার গোধূলি লগ্নকে মহিমান্বিত করার সুযোগ হারাতে চাইবে না নিশ্চয়ই!

এ সম্পর্কিত আরও খবর