বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বোর্ড সভা চলছে। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই বোর্ড সভা শুরু হয়। প্রায় ছয়মাস পরে বিসিবির এই বোর্ড সভা বসছে। এবারের সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান খুঁজবে বিসিবি। সবমিলিয়ে বিসিবির এই বোর্ডসভায় ১২টি এজেন্ডা আছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইস্যূর দিকেই সবার নজর।
এই তিনটি বিষয় হলো, জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব। সাকিব-তামিমের ভবিষ্যৎ এবং বিশ্বকাপে ব্যর্থতায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট।
জাতীয় দলের বর্তমান নির্বাচক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরেই। কিন্তু নতুন করে এই নির্বাচক প্যানেল গঠন করতে না পারায় বিসিবি মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেলই বহাল রাখে, মৌখিক চুক্তিতে। নির্বাচক প্যানেলে বদল আনার জন্য বিসিবি চেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু প্রধান নির্বাচক হিসেবে কোনো বিকল্প না থাকায় সেই পদে নান্নুকে রাখতে একপ্রকার বাধ্যই হয়।
জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু লম্বা সময় ধরে দায়িত্বে আছেন। সময়ের হিসেবে প্রায় ১২/১৩ বছর ধরে এই নির্বাচক হিসেবে রয়েছেন মিনহাজুল। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে তিনি প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসেন। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক নির্বাচক হিসেবে আলোচিত হয়েছেন। সমালোচিতও হয়েছেন। নির্বাচক হিসেবে তিনি পুরোমাত্রায় স্বাধীনতা পাচ্ছেন কিনা-সেই প্রশ্নও উঠেছিল। ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পর বিসিবি নির্বাচক প্যানেলে বদল আনার জন্য প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পারফেক্ট বিকল্প না থাকায় বিসিবি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত নান্নুকে তার পদ থেকে সরানোর জন্য বিসিবি একটা তরিকা সম্ভবত পেয়ে গেছে।
নির্বাচক প্যানেলে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে সরিয়ে তার চেয়ারটা হাবিবুল বাশার সুমনকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিসিবি। নান্নুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেলে হাবিবুল বাশার নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই প্যানেলের তৃতীয় নির্বাচক হলেন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। নতুন নির্বাচক প্যানেলে নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেন সাবেক ওপেনার হান্নান সরকার। যিনি বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গেই। তারই পুরস্কার হিসেবে তাকে এখন সিনিয়র দলের নির্বাচক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করছে বিসিবি।
বিসিবির সভা শেষে নির্বাচক প্যানেল নিয়ে এমন একটা ঘোষণাই সম্ভবত আসতে যাচ্ছে।
জাতীয় দলের অধিনায়ক কে হচ্ছেন, সেই প্রশ্নেরও একটা সমাধান খুঁজবে বিসিবি এই সভায়। তিন ফরমেটের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এখন সব ফরমেটে খেলার জন্য সময় বের করতে পারবেন কিনা- সেই প্রশ্নও উঠেছে।
যে কোনো সিরিজ এলেই সাকিবের তাতে খেলা বা না খেলা নিয়ে এই যে অনিশ্চয়তার তৈরি হয়- সেই ধারাবাহিক ‘চিত্রনাট্যে’ বিসিবিও বিরক্ত। তাই বিসিবি এবার কোনো স্টপগ্যাপ অধিনায়কত্বের চিন্তা করছে না। লম্বা সময়ের জন্য কাউকে অধিনায়ক করার কথা ভাবছে। সেই লম্বা সময়টা হতে পারে অন্তত একবছর। আর এই অধিনায়ক পদে বিসিবির সম্ভাব্য পছন্দ হচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তামিম ইকবাল আর জাতীয় দলে ফিরবেন কিনা- সেই গ্যারান্টি নেই। তিনি নিজেও পরিষ্কার করে কিছু জানাননি। বিসিবিও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তবে সার্বিক যে পরিস্থিতি এবং তামিম ইকবালের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে তিনি সম্ভবত আর জাতীয় দলে ফিরছেন না। আর ঠিক এই কারণেই বিসিবির সঙ্গে তার যে আর্থিক চুক্তি ছিল সেখান থেকে নিজেকে তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সোজা কথা তিনি এখন ফ্রি ক্রিকেটার। বিসিবির চুক্তিতে নেই।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর বিসিবি তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটির কাজ ছিল বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করা। সেই কাজটি করতে গিয়ে কমিটি লম্বা সময় নিয়েছে। অনেকের সঙ্গে কথা বার্তা বলেছে। সবার শেষে কথা বলেছেন সাকিব ও তামিমের সঙ্গে। তবে এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনের সময়ে কি কাজে লাগবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আরেকটি বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ এখন মাত্র তিন মাসের দূরুত্বে দাড়িয়ে। কোনো সন্দেহ নেই তামিম-সাকিবের দ্বন্দ্ব, ঝগড়াঝাঁটি এবং বিভিন্ন সাক্ষাতকারে একে-অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগারের যে বাজে উদাহরণ তারা প্রদর্শন করেছেন সেটা পুরো বাংলাদেশ দলের ওপর নেতিবাচক একটা প্রভাব ফেলেছে। খোদ বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন সেটা স্বীকারও করেছেন। এই বিষয়গুলো কি বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তাদের রিপোর্টে তুলে ধরার সাহস দেখাতে পারবেন? বিসিবি কি এই রিপোর্ট প্রকাশ করার মতো দৃঢ়তা দেখাতে পারবে?
এইসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে বিসিবির সভা শেষে।