উপভোগ্য ব্যাটিংয়ে রংপুরের জয়, বিদায়ের পথে খুলনা

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 07:39:49

ইনিংসের প্রথম বল থেকে ম্যাচের ১৯ ওভার পর্যন্ত খেলে গেলেন ক্রিস গেইল। কিন্তু রান মাত্র ৫৫। প্রায় পুরোটা জুড়েই ব্যাটিংয়ে থেকে বল খেললেন মাত্র ৪০ টি! তারপরও রংপুর রাইডার্স ১৮২ রানের বিশাল টার্গেট টপকে গেলো অনায়াস ভঙ্গিতেই। ম্যাচ জিতলো ৬ উইকেটে।

৫ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে ক্রিস গেইলের ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংসকে ঠিক ঝড়ো বলার উপায় নেই। কিন্তু ব্যাট হাতে এই ম্যাচে অ্যালেক্স হেলস ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিংয়ের উপমা জানতে আপনাকে অভিধানের পাতা উল্টাতে হবে! গেইল খেললেন ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট। আর হেলস এবং ডি ভিলিয়ার্স ব্যাটিংয়ে যেন সুনামি বইয়ে দিলেন!

স্কোরবোর্ড জানাচ্ছে ৩ বল বাকি থাকতে এই ম্যাচ জিতেছে রংপুর। ম্যাচ গড়িয়েছে শেষ ওভারে। তবে এই ব্যবধান দেখে যদি কেউ ভেবে থাকেন বড় স্কোরের ম্যাচটা জমেছে; তবে তিনি ঠকবেন নিশ্চিত! ঠিক যাকে বলে তারিয়ে তারিয়ে জয়; এমন ভঙ্গিতেই খুলনার বিপক্ষে এই ম্যাচটা উপভোগ করে জিতেছে রংপুর।

জয়ের জন্য ১৮৮ রান তাড়া করতে নামা রংপুর রাইডার্স শুরুর ওভার থেকে বলের সুতো খুলে ফেলার স্টাইলের ব্যাটিং শুরু করে। আর এই নির্দয় পিটুনির ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেন অ্যালেক্স হেলস। অন্যপ্রান্তে ক্রিস গেইল শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে সেটা দেখেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে রংপুর রাইডার্সের স্কোরবোর্ডে রান জমা হয় কোন উইকেট না হারিয়ে ৫৮। এই রানের মধ্যে ৫৪ রানই অ্যালেক্স হেলসের। তাও আবার মাত্র ২৬ বলে। অন্যপ্রান্তে ক্রিস গেইল তখন শুধু ‘হেলস ঝড়’ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। গেইলের রান তখন মাত্র ১০ বলে ৪!

প্রথম উইকেট জুটিতে রংপুর তুললো ৭৮ রান। যেখানে হেলসের অবদান ৫৫। গেইলের মাত্র ২৩! ওয়ান ডাউনে এলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এসেই ছক্কা-চারের ঝড়! দেখতে না দেখতে গেইলের চেয়ে বেশি রান ভিলিয়ার্সের! ১০ ওভারেই ৯৯ রানে পৌছে গেলো দলের ইনিংস। সামনে যাকেই পাচ্ছেন তাকেই হাঁকাচ্ছেন মি. থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী! যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিলো ১৫ ওভারের মধ্যেই টার্গেট ছাড়িয়ে যাবে রংপুর। খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসে থামালেন ‘ভিলিয়ার্স ঝড়’। ততক্ষনে অবশ্য তার নামের পাশে যোগ হয়েছে ২৫ বলে ৪১ রান। যাতে আছে ৪ ছক্কা, ৩ বাউন্ডারি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে গেইল-ভিলিয়ার্সের যোগাড় ৪৩ রান। যেখানে ভিলিয়ার্স করলেন ৪১। গেইল বাকি ২!

ভিলিয়ার্স যখন ফিরলেন তখন ম্যাচ জিততে রংপুরের চাই ৪৬ বলে ৬২ রান। হাতে জমা ৮ উইকেট। ক্রিস গেইল তখনো ফুঁসতেই শুরু করেননি! আমেজ জমাতেই যেন ম্যাচটা আরেকটু শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন গেইল। ২ ওভারে ৮ রানে ১ উইকেট তুলে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ তখন খুলনার সেরা বোলার। কিন্তু নিজের তিন নম্বর ওভারে এসে মাহমুদউল্লাহর বোলিংয়ের সেই হিসেব পুরো বদলে গেলো! সেই ১৮ নম্বর ওভারে গেইল মাহমুদউল্লাহকে তিন ছক্কা হাঁকালেন। ওভারে রান উঠলো ২০। যার ১৯ রানই গেইলের। পরের ওভারে জুনায়েদ খানের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে গেইল যখন বাউন্ডারি লাইনের কাছে ক্যাচ আউট হলেন তখন ম্যাচ জয় থেকে ১১ রান দুরে দাড়িয়ে রংপুর।

শেষ ওভারে সেই টার্গেট কমে দাড়ালো ৬ রানে। ওভারের প্রথম বলেই মোহাম্মদ মিঠুন স্ট্যাম্পড! তবে ইয়াসির শাহ’র করা সেই ওভারে নাটকীয় কিছুর অপেক্ষায় থাকা খুলনা আরেকটি ছক্কা দেখলো; আর সেই ছক্কায় ম্যাচে রংপুরের ৬ উইকেটের জয়।

খুলনার ব্যাটিংয়ে বীরত্ব যা দেখানোর তা দেখালেন দলের মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ব্রেন্ডন টেইলর, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহ এবং শেষের দিকে ডেভিড ভিসার ব্যাটে ১৮১ রানের বড় সঞ্চয় তুলে খুলনা। কিন্তু হেলস, গেইল ও ভিলির্য়াস একসঙ্গে যে ম্যাচে জ্বলে উঠেন, সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষের সব বড় রানই যে তখন মামুলি হয়ে যায়! টুর্নামেন্টে দু’বারের মোকাবেলায় দু’বারই খুলনাকে হারালো রংপুর।

রংপুরের ব্যাটিং মাস্তানির এই ম্যাচে ফরহাদ রেজার বোলিংয়ের কৃতিত্বের কথা বলাই হলো না! ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ফরহাদ রেজা এই ম্যাচে বল হাতে দলের সেরা পারফর্মার। ম্যাচ সেরাও তিনি।

৮ ম্যাচে ১ জয় ও ৭ হারে খুলনা টাইটানসের জন্য এবারের বিপিএল প্রায় শেষই হয়ে গেলো। আর ৮ ম্যাচে সমান চার জয় ও হারে রংপুরের সুপার ফোরের স্বপ্ন আরো রঙিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: খুলনা টাইটানস: ১৮১/৬ (২০ ওভারে, টেইলর ৩২, শান্ত ৪৮, মাহমুদউল্লাহ ২৯, ভিসা ৩৫, ফরহাদ রেজা ৪/৩২, মাশরাফি ১/১৭)। রংপুর রাইডার্স: ১৮৩/৪ (১৯.৩ ওভারে, গেইল ৫৫, হেলস ৫৫, ভিলিয়ার্স ৪১, মিঠুন ১৫, রুশো ১০*, ইয়াসির শাহ ২/৪৭)। ফল: রংপুর রাইডার্স ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা: ফরহাদ রেজা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর