এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নিজেদের আধিপত্য কতটা দেখাতে পারবে পাকিস্তান? বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের সম্ভাবনা কতটুকু? ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়েই বা কী ভাবছেন সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি? আইসিসির ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত এক কলামে সেসব নিয়েই কথা বলেছেন এবারের ‘টুর্নামেন্ট অ্যাম্বাসেডর’ শহীদ আফ্রিদি—
পাকিস্তান শেষ কিছু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখিয়েছে তারা যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। ২০২৪ সালে যদিও তাদের ফর্মটা পক্ষে কথা বলছে না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বাজিমাত করার জন্য সব উপাদান দলে আছে।
শেষ দুই বিশ্বকাপের একটায় ফাইনাল আরেকটায় সেমিফাইনাল খেলেছে দলটা। তো দলে প্রতিভাগুলো প্রশ্নাতীত।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কন্ডিশনটা তাদের সঙ্গে মানানসই। দলে অনেক প্রতিভা আছে। বিশেষ করে আপনি যখন বোলিং অ্যাটাকের দিকে দেখবেন, সেটা ওখানে ভালো করা উচিত। ফাস্ট বোলাররা বিশ্বমানের যে কোনো দলের মতোই ভালো, আর দলটায় গভীরতাও অনেক।
ক্লাস বিষয়টা সাম্প্রতিক ফর্মের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সময়ে সময়ে দেখেছি যে টি-টোয়েন্টিতে কয়েক ওভারে খেলাটা বদলে যেতে পারে। আমাদের খেলার ফলটা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে শেষ কিছু দিনে; তার আংশিক কারণ হতে পারে নির্বাচকদের তরুণদের বাজিয়ে দেখা, তাদের প্রতিভা জাহির করার সুযোগ দিচ্ছিলেন তখন।
বিশ্বকাপের আগে সেরা কম্বিনেশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা হয়ে গেলে আমি আশা করব যেন তারা যেন পাওয়ারপ্লেটাকে টার্গেট করে, স্ট্রাইক রেটটা বেশি থাকে, এরপর থেকে ১৪ ওভার পর্যন্ত ইনিংসটা গড়ে নিয়ে যাক। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত ফিনিশিংটা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
এ বছর যে ফলাফলই হয়েছে, দলকে ইতিবাচক একটা মানসিকতা নিয়ে থাকতে হবে। প্রত্যেকের ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। টিমওয়ার্কই ড্রিম ওয়ার্কটা করে দিতে পারে, আর এটাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
ক্যারিবিয়ানে টুর্নামেন্টটা ফিরছে দেখে আমি বেশ রোমাঞ্চিত। ২০১০ সালে সেখানে আমি পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে গিয়েছিলাম। সে টুর্নামেন্টের বেশ কিছু দুর্দান্ত স্মৃতি আছে আমার।
অলরাউন্ডার হিসেবে আমার এটা ভালো লাগছে যে পিচগুলো বোলার-ব্যাটার দুই পক্ষকেই সহায়তা দিচ্ছে। তো সেখানে কে দ্রুত সুযোগটা নিতে পারবে, সেটাই নিয়ামক হয়ে দাঁড়াবে এখানে। ব্যাটারদের জন্য শট সিলেকশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বোলারদের জন্য তাদের লাইন লেন্থ ঠিক রাখাটা জরুরি।
আমেরিকান ক্রিকেটের জন্যও এই টুর্নামেন্টটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে এলে আমিও এখানে বেশ উপভোগই করি। যাদের এখানে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, তাদের বলছি, ক্যারিবিয়ান আর ওখানকার কন্ডিশন একইরকম।
যুক্তরাষ্ট্রে যে সমর্থনটা পাওয়া যায়, তার সবারই বেশ ভালো লাগবে। সেখানে অনেক বেশি প্রবাসীর উপস্থিতি আছে, যারা ক্রিকেটকে অনেক ভালোবাসে। আমেরিকানরা তাদের খেলাগুলোকে বেশ ভালোবাসে, আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল হোক বা বেসবল। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি আগামী কয়েক বছরে সেখানকার মূল ধারার খেলা হয়ে উঠতে পারবে ক্রিকেট, যা বর্তমান ও ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর বিষয় হবে।
যারা আমেরিকান আর এই টুর্নামেন্ট দিয়ে খেলা দেখা শুরু করছেন, তাদের জানিয়ে রাখি ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচটা আমাদের সুপার বোল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে আমার বেশ ভালো লাগত। আমি বিশ্বাস করি এটা খেলাধুলার ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় দ্বৈরথ। আমি যখন ওই ম্যাচগুলো খেলেছি, ভারতীয় ভক্তদের কাছ থেকেও সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি, এমনটা দুই দলের সমর্থকরাই করে থাকেন।
ভারতের বিপক্ষে পরিস্থিতিটার চাপ সামলানোতেই লুকিয়ে আছে সাফল্য। দুই দলে অনেক প্রতিভা আছে। একটা নির্দিষ্ট দিনে কে পারফর্ম করতে পারে তার ওপর নির্ভর করে ফলাফল।
ম্যাচের পরিস্থিতিটা এমনই হবে, টুর্নামেন্টও কমবেশি অমনই হবে। যে দল তাদের স্নায়ুতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে, তারাই শীর্ষে থেকে শেষ করবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বেশ অননুমেয়, এখন তো দলগুলো অনেক নিচে পর্যন্ত ব্যাট করে। আপনার এখন ৮ নম্বরেও একজন ব্যাটার চলে আসছেন, ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন! দলকে জিতিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি আশা করব পাকিস্তানই এবার শিরোপা জিতবে। তবে ফেভারিট কে, এটা ঠিক করাটা বেশ কঠিন।