চট্টগ্রামের উইকেটে বোলারদের হোমওয়ার্ক

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম থেকে | 2023-08-30 13:29:28

মাঠে এসেই ঢাকা ডায়নামাইটসের হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও বোলিং কোচ তালহা জুবায়ের সোজা ২২ গজের উইকেট চলে এলেন। উইকেটের চারপাশে দড়ি ঝুলিয়ে তখনো পরিচর্যায় ব্যস্ত কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। দুজনেই তার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। বেশ খানিকক্ষণ সময় উইকেটের দিকে তাকিয়ে এর ‘চরিত্র’ বোঝার চেষ্টা করলেন ঢাকার দুই কোচ।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলতি বিপিএলে সব দল খেললেও এখন পর্যন্ত ঢাকা ডায়নামাইটস কোন ম্যাচ খেলেনি। সোমবার, ২৭ জানুয়ারির রাতে এখানে প্রথম ম্যাচ খেলবে ঢাকা। প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্স। এই মাঠে এবারের বিপিএলে কোন ম্যাচ না খেললেও এখানকার উইকেট সম্পর্কে বেশ ভালই জানা ঢাকার টিম ম্যানেজমেন্টের। এখানে খেলা চারটি ম্যাচের পুরোটা জুড়েই ঢাকা চোখ রেখেছিলো টিভির পর্দায়। উইকেট এখানে কেমন আচরণ করবে এবং ব্যাটিং সহায়ক এই উইকেটে দলের বোলারদের কি কৌশল নিতে হবে-তা নিয়ে বেশ ভালই হোমওয়ার্ক করেছে ঢাকাও।

এই প্রসঙ্গে ঢাকার হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন-‘এই ধরনের উইকেটে সাধারনত দেখা যায় বল ব্যাটে আসছে বেশ ভালভাবে। তখন বোলারদের জন্য লাইন এবং লেন্থ বজায় রেখে বোলিং করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়। এমন উইকেটে কোন বোলার যদি এক্সপ্রেস গতিতে বল করে সেক্ষেত্রে হয়তো তার গতির জোরে পার পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু মিডিয়াম পেস বোলার বা যাদের বোলিংয়ে বেশি পেস নেই, তেমন বোলার যদি এখানে মনে করে গায়ের শক্তিতে বল করবে, তবে সে এখানে নিশ্চিতভাবে পিটুনি খাবে। এই ধরনের উইকেটে বোলারদের জন্য আরেকটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বলে বৈচিত্র আনা। তবে আমি আবারও বলবো বোলারের লেন্থটাই এখানে তার সাফল্য-ব্যর্থতা মুলত ঠিক করে দেবে। স্পিনারদের ক্ষেত্রে একই বিষয়। ধরুণ কোন স্পিনার বেশ বৈচিত্র আনার চেষ্টা করলো, কিন্তু তার লেন্থ ঠিক রইলো না। নিশ্চিত জানবেন তার বল গ্যালারিতে আছড়ে পড়বে! এই উইকেট থেকে বোলারদের সহায়তা পাওয়ার মতো তেমনকিছু নেই।’

চট্টগ্রামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে এখন পর্যন্ত হাতে গোনা যে কয়েকজন পেস বোলার সাফল্য পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। চিটাগংয়ের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জেতা ম্যাচে মাশরাফি ৩৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। এমন উইকেটে বোলারদের সাফল্য পেতে হলে কি করতে হবে সেই হোমওয়ার্ক সম্পর্কে মাশরাফির ব্যাখাটা এমন-‘এই উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু নেই। ম্যাচের দ্বিতীয়ভাগে অর্থাৎ দ্বিতীয় ইনিংসে বোলাররা যেন প্রস্তুতি নিয়েই নামে যে ব্যাটসম্যানরা ব্যাট চালাবে। ম্যাচের প্রথমভাগে হয়তো বল এখানে কিছুটা গ্রিপ করবে। তবে দ্বিতীয়ভাগে উইকেট পুরোদুস্তর ব্যাটিং সহায়ক। এই উইকেটে বোলারদের সাফল্য নির্ভর করে সে কোন পরিকল্পনা নিয়ে নামছে সেটার ওপর। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া এই উইকেটে বল করা সম্ভব না। পরিকল্পনা করলেন একরকম, আর বোলিং করলেন আরেক ধরনের-তাহলে এই উইকেটে আপনার একটাই পরিচয় হবে; খরুচে বোলার। এই উইকেটে বোলারদের বাঁচতে হলে গুডলেন্থে বল রাখতে হবে। ব্যাটসম্যানদের গেঁড়ে বসার সুযোগ দেয়া যাবে না। ব্যাটসম্যানদের হিটিং জোনে বল দেয়াই যাবে না। একটু টেনে বল করতে হবে। তাই বলে শর্ট বলও দেয়া যাবে না। কারণ উইকেটের পেস ব্যবহার করে তখন ব্যাটসম্যান শর্ট বলের সুবিধাটা নিতে পারে।’

চট্টগ্রামের উইকেট ঢাকা ডায়নামাইটসের বোলার রুবেল হোসেনের জন্য খুব অপরিচিত কিছু নেই। এই মাঠে আর্ন্তজাতিক ম্যাচে বল করার বেশ ভাল অভিজ্ঞতা আছে রুবেলের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই রুবেল জানেন এখানে সাফল্য পেতে হলে কিভাবে এগুতো হবে। সেই প্রসঙ্গে ঢাকার অনুশীলন পর্ব শুরুর আগে রবিবার দুপুরে রুবেল বলছিলেন-‘সুন্দর ব্যাটিং উইকেট। এখানে বুদ্ধি খাটিয়ে বোলিং করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের ‘‘রিড’’ করে  বোলিং করা উচিত। সন্দেহ নেই এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবে। আগে টিম পরিকল্পনা জানতে হবে। সেই পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই এখানে বোলিং করতে হবে। জানা কথা ব্যাটসম্যানরা এখানে শটস খেলবে। তবে বোলাররাও যাতে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খেলতে পারে তেমন বোলিংই করতে হবে।’

আঁটঘাঁট বেধে ব্যাটম্যানদের থামাতে বোলারদের এই হোমওয়ার্ক কাজে দিলো কিনা সেটা জানতে সোমবার রাত সাড়ে দশ’টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেদিনের ম্যাচ শেষের সময় ওটাই!

এ সম্পর্কিত আরও খবর