বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক বর্ণিল অধ্যায়ের ইতি ঘটতে চলেছে। আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন সাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টির শেষ ম্যাচটা ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। আগামীকাল কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি সাকিব। তার আগে আজ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসেছিলেন। সেখানেই নিজের বিদায়সহ আরও অনেক বিষয়ে কথা বললেন তিনি।
সে সংবাদ সম্মেলনের চুম্বকাংশ স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–
বিদায় প্রসঙ্গে–
যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি খেলতে পারি তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
নিজের ব্যাটিং নিয়ে–
শেষ টেস্ট ম্যাচে (চেন্নাইয়ে) ব্যাটিংয়ে আমি ভালো ফিল করেছি। উভয় ইনিংসেই। ভালোই ব্যাটিং করছিলাম। দুভার্গ্যবশত সেই ইনিংসগুলো বড় করতে পারিনি। সেই জায়গা থেকে পরের টেস্টে চেষ্টা থাকবে যেন সুযোগ পেলে ইনিংসটা বড় করতে পারি।
আঙুলের চোট বিষয়ে–
আমি শেষ চার পাঁচ মাস ননষ্টপ ক্রিকেটের মধ্যেই আছি। এই সময়ের মধ্যে কেউ দেখে নাই যে কোনো কিছু ঘটার মতো (আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে) কিছু হয়েছে কিনা? শুধু এই ম্যাচে খেলার সময় আমার কাছে স্পিন আঙ্গুল খানিকটা আড়ষ্ট মনে হয়েছে। তার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন আমি ভারত সফরে দেরিতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। তাই স্বাভাবিকভাবে ওভাবে দলের সঙ্গে ট্রেনিং করার সুযোগ হয়নি। দ্বিতীয় আরেকটা কারণ হতে পারে যে কাউন্টিতে আমি অনেক লম্বা স্পেল বোলিং করেছি। অনেক বেশি ওভার করেছি। লম্বা সময়ে পরে ম্যাচে এতো বেশি ওভার বোলিং করায় সম্ভবত শরীর একটু টাইট ছিল। হয়তো বা স্পিন আঙ্গুল একটু টাইট ছিল। নয়তো বা স্ট্রেন্থ একটু কমে গিয়েছিল। রিদমটা যেমন দরকার ছিল সেটা হয়তো বা ছিল না। এমন অনেককিছুই হতে পারে। এসব কারণেই আমি মনে করি চেন্নাই টেস্টে আমার বোলিংটা তেমন ভালো হয়নি।
পারফর্ম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন প্রসঙ্গে–
যে কোনো ক্রিকেটার যদি তার আশানুরূপ পারফরমেন্স না করে তাহলে এমন কথাগুলো উঠতেই পারে। আর এটা খুবই স্বাভাবিক বলেই আমি মনে করি। অস্বাভাবিক কিছু না। মানুষ এটা অনুভব করতেই পারে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ হয়তো বেশিকিছু আশা করে এজন্যই হয়তো বা এমন চিন্তা করে। যখন আপনি একটা নির্দিস্ট লেভেলে পারফরমেন্স করবেন তখন সেখান থেকে সরে গেলে মানুষ তো তখন প্রশ্ন তুলবেই।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে–
এখন পর্যন্ত আমি অ্যাভেইলেভল। যেহেতু এখন দেশের যে পরিস্থিতি তাতে সবকিছুই আমার ওপরই নির্ভর করে না। স্বাভাবিকভাবেই আমি এই জিনিষগুলো বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের কাছে আমি আমার পরিকল্পনা জানিয়েছি। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজ নিয়ে আমার পরিকল্পনা তাদের জানিয়েছি। আমি ফিল করেছি দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সামনের মাসে টেস্ট সিরিজটা আমার শেষ সিরিজ হবে। ওভাবেই আমি ফারুক ভাই (বিসিবি সভাপতি) এবং নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি সুযোগ থাকে আমি যদি দেশে গিয়ে খেলতে পারি তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। বোর্ড এই বিষয়টা জানে। তারা এই বিষয়টা কিভাবে সুন্দর করে অ্যারেঞ্জ করা যায় সেই চেষ্টা করছে। যাতে করে আমি দেশে গিয়ে খেলতেও পারি এবং নিরাপদও বোধ করি। আবার একই সঙ্গে যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে এবং দেশের বাইরে বের হতেও আমার যেন কোনো সমস্যা না হয়– এই বিষয়টা বোর্ড খেয়াল করছে এবং এই বিষয়ের সঙ্গে সর্ম্পকিত যারা আছেন, তারাও এটা দেখছেন। আমি অপেক্ষায় আছি তারা আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। যে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি হয়তো খুব ভালোভাবে অন্তত টেস্ট ক্রিকেটটা ছাড়তে পারি।
নিজের অবসর নিয়ে–
আমার মনে হয় নতুন নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদেরকে দেখার এবং পরখ করার এটাই সবচেয়ে বড় সময় কিম্বা সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজের পর আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ আছে। আমার মনে হয় ২০২৬ সালের দিকে তাকাই তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে ভালো দিক। এটা আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমরা সবাই একমতও।