দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মিরপুরে তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিদায়ী টেস্ট তার যেন বাড়তি কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়া হয় এবং টেস্ট শেষে তিনি দেশের বাইরে যেতে চাইলে সেটা নিয়েও বিমান বন্দরে কোনো ধরনের সঙ্কটে যাতে না পড়তে হয়- সেই নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন সাকিব।
বহুল চর্চিত এই বিষয়টি আপাত একটা সুস্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ছাত্র-জনতার জুলাই অগাস্টের আন্দোলনের সময় নিজের নীরবতার কারণ ব্যাখ্যা করে সাকিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেই আন্দোলনে নিহত ও আহতের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। বিসিবি এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও সাকিবের বিদায়ী টেস্টের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তাই পেয়েছিলেন ক্রীড়ামোদীরা। কিন্তু এরই মধ্যে আবার সাকিবের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন, মিছিল করে তার ছবিতে কালি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সাকিবের এই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে তার মতামত জানান। বিসিবির মিডিয়া সেন্টারে সেই সংবাদ সম্মেলনে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন- ‘সাকিব বাংলাদেশের নাগরিক ও একজন ক্রিকেটার। তার আসা ও যাওয়ার (দেশে) ক্ষেত্রে তো আমি কোনো বাধা দেখি না। তবে দেয়াল লিখন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে যেমনটা আমরা দেখেছি, এটা আসলে ইমোশনের ব্যাপার। আর যারা এটা করছে তাদেরও ওই রাইটসটা আছে গণতান্ত্রিক দেশে, যে কোনো আন্দোলন বা যে কোনো কিছু করার। তবে এক্ষেত্রে আমার কথা থাকবে, কারো নিরাপত্তা যেন আমরা হুমকির মুখে না ফেলি। যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, তাহলে সেটা আইন দেখবে, আমি এই আইনগত বিষয়ে কোনো কমেন্ট করতে পারব না। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।’
সাকিবের নিরাপত্তা ইস্যুর সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সামনে আনেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে যেহেতু এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, সেহেতু আমাদের পরিবেশটাও ভালো রাখতে হবে। না হলে বিদেশি দেশগুলোর বাংলাদেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে।’
সাকিব মাঠে এবং খেলা শেষে দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন এই প্রসঙ্গে নিজের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আসিফ মাহমুদ পরিস্কার জানান, ‘রাষ্ট্রের জায়গা থেকে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করব। তবে আমি মনে করি ইমোশনের জায়গাটা অবশ্যই আছে। যেহেতু একটা বড় মুভমেন্ট হয়েছে, এবং সাকিব আল হাসানের আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল যেটা উনি ক্লিয়ারেন্স (অবস্থান পরিস্কার) দিয়েছেন। তারপরও মানুষের কিছু আবেগ আছে। এটা লজিকাল বা ইলজিকাল সে বিষয়ে যাব না আমি। তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই, এমনটাই দেখা যাচ্ছে। যদিও আইন তার মতো চলে, আমি সেই আইনি বিষয় নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আইন মন্ত্রণালয়ে আসিফ স্যার এই বিষয়ে একটা কথা বলেছেন। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল, এটা ইতোপূর্বেও প্রমাণিত হয়েছে ।বাংলাদেশে এত বড় একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, অভ্যুত্থানের পরে যেটা হয়, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস যদি আমরা দেখি- সেই বিষয় গুলো অনুধাবন করেন আমরা বলতেই পারি আমাদের মানুষ আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাশীল জায়গাটা ধরে রেখেছে। আমি আশা করছি বাংলাদেশের মানুষ তাদের সেই অবস্থান ঠিক রাখবে।’