এমন সেঞ্চুরিতে তামিম নিজেই স্বপ্নের ঘোরে!

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 22:51:16

পুরো টুর্নামেন্টের প্রথম ১৩ ম্যাচে তার মাত্র দুটো হাফসেঞ্চুরি। এর মধ্যে আবার তিনবার শূন্য রানে আউটের ইনিংসও আছে। ব্যাটসম্যানের নাম যখন তামিম ইকবাল তখন এতো অল্প’তে সন্তুষ্ঠ হওয়া তাকে মানায় না। তামিমও সন্তুষ্ঠ ছিলেন না। তবে সব দুঃখ-অসন্তোষ ভুলিয়ে দিলেন তামিম বিপিএলের ফাইনালে। টুর্নামেন্টে নিজের ১৪ নম্বর ম্যাচে খেললেন মন মাতানো এক ইনিংস।

৬১ বলে হার না মানা ১৪১ রান। ১০ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কা! স্ট্রাইক রেট ২৩১.১৪!
টি-টুয়েন্টিতে ‘বিগ ম্যাচে’ এমনসব ইনিংস খেলার জন্য মুলত ক্রিস গেইলই বিখ্যাত। গেলোবারের ফাইনালে এই ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষেই রংপুরের হয়ে গেইল ১৮ ছক্কায় অবিশ্বাস্য ১৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। আর এবারের ফাইনালে সেই ঢাকার বিপক্ষেই ব্যাট হাতে একই কান্ড ঘটালেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তামিম ইকবাল।
পুরো টুর্নামেন্টে নরম-শরম ব্যাটিং করা তামিম ইকবাল ফাইনালেই খেলে দিলেন স্বপ্নের ইনিংস। বিপিএলের ইতিহাসে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। এক ম্যাচে বাংলাদেশি কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান।

নেহাত ভাষার প্রয়োগে বোঝানো যাবে না ফাইনালে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির সৌন্দর্য, মাহাতœ্য! অবাক করার বিষয় হলো তামিম নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না কি করে এমন দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরির দেখা মিললো!

১৭ রানে দলকে জেতানোর পরে লম্বা সময় ধরে চলা ড্রেসিংরুমে আনন্দ-উল্লাস ও কেক কেটে মূহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখার পর সংবাদ সম্মেলনে এসেও তামিম নিজেই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না স্বপ্নের ঘোরে আছেন নাকি বাস্তবতায়-‘ আমি এখনো স্বপ্নের ঘোরে আছি। নিজেই এখনো বুঝতে পারছি না কিভাবে এমন ইনিংস খেললাম। ম্যাচের হাইলাইটস দেখলে এখন হয়তো বুঝতে পারবো হ্যাঁ, আমি সত্যিই এমন একটা ইনিংস খেলেছি। এনামুল হক বিজয় যখন আউট হয়েছিলো তখন আমি একটু তেতে ছিলাম। পরে নিজেকে শান্ত করেছি। নিজেকে বলেছি, আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আর আমার ইনিংসটা...হাইলাইটস দেখার পর বলতে পারবো কেমন করে এমন ইনিংস খেলেছি!’

ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়ে সবাই খেলার মাঠে এমনকিছু একটা করার স্বপ্ন দেখে। ফাইনালে আসলে তামিম কি ভাবনা নিয়ে নেমেছিলেন এই প্রসঙ্গে তার উত্তর-‘সত্যি কথা বলতে কি আমি কখনো চিন্তাই করিনি যে এমন একটা ইনিংস খেলবো। ব্যাটিং নিয়ে আমি একটাই কথা বলতে চাই, ইনিংস জুড়ে আমার পরিকল্পনাটা বেশ ভাল ছিলো। বারবার শুধু একটাই চিন্তা ছিলো আমার, সাকিব বা নারায়নকে উইকেট দেয়া যাবে না। আর তাই আমি পুরো ইনিংস জুড়ে নারায়ানকে খেলেছি তেমন কোন ঝুঁিক না নিয়ে। সাকিব ও নারায়ন ঢাকার বোলিং লাইনআপে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই টুর্নামেন্টে ঢাকার সাফল্যের  পেছনে এই দুই স্পিনারের সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো। আমি মুলত পেস বোলারদের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ফাইনালের উইকেটটা দুর্দান্ত ছিলো। এই উইকেটে দুশো রানও একসময় কম মনে হচ্ছিলো। ঢাকার ব্যাটিংয়ের সময় একসঙ্গে দুতিনটা উইকেট পড়ে না গেলে আমার মনে হয় আমাদের এই দুশো ছুঁই ছুঁই স্কোরকেও তখন অনেক কম মনে হতো।’

১৯৯ রানের বিশাল সঞ্চয় নিয়েও কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্স একসময় বড় টেনশনে পড়ে যায়। ঢাকার ইনিংস যেভাবে সামনে বাড়ছিলো তাতে এই ম্যাচ সাকিবের দলও জিতে নিতে পারতো। ম্যাচের টেনশনের সেই সময়ের উল্লেখ করে তামিম জানান- ‘রান তাড়ায় ঢাকার ব্যাটিংয়ের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিলো। তাছাড়া প্রথম ১২ ওভার পর্যন্ত ওরা প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি পাচ্ছিলো। তবে আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি জানতাম এমন পরিস্থিতিতে যখনই কোন দল বড় রান তাড়া করে তখন একটা দুটো উইকেট তুলে নিতে পারলেই কিন্তু পুরো খেলাটার দৃশ্যপটই বদলে যায়। খেলার বিরতিতেও আমি বারবার এটাই বলছিলাম, একটা বা দুটো উইকেট আমাদের নিতে হবে, তাহলেই খেলার মোড় বদলে যাবে। সৌভাগ্যবশত আমরা ঐ দুটো উইকেটও পেয়ে গেলাম। একটা রানআউটও হলো। আন্দ্রে রাসেল এসেও তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলো। মুলত ঢাকার ব্যাটিংয়ের ঐ জায়গাটায় ম্যাচের মোড় আমাদের দিকে ঘুরে গেলো।’

শুধু ব্যাট হাতে সেঞ্চুরিই নয়। ফাইনালে দুর্দান্ত কায়দায় দুটো ক্যাচও ধরেছেন তামিম। ওয়াহাব রিয়াজের বলে প্রথমে প্রায় ২০ গজ দৌড়ে সাকিব আল হাসানের ক্যাচ লুফেছেন। খানিকবাদে কাইরন পোলার্ডের ক্যাচও সামনে অনেকদুর দৌড়ে তালুতে রাখেন। নিজের সেঞ্চুরির সঙ্গে সেই দুটো ক্যাচকেও অনেক কার্যকর ভাবছেন তামিম- ‘ফাইনালে যে কোন ক্যাচই অনেক বড় চাপ। সেটা সহজ ক্যাচ  হোক না কঠিন ক্যাচ যাই হোক না কেন। আমার ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে বলি, আমি হয়তো বা মাঠে ফিল্ডিংয়ের সময় খুব চটপটে বা দ্রæতগতির না। তবে আমি কখনোই বলকে ভয় করি না। এই কথা যখন বলছি তখন মনে রাখতে হবে এমনদিনও আসবে যেদিন আমার হাত থেকে ক্যাচ মিসও হতে পারে। আবার এমনদিনও আসবে যেদিন আমি খুব ভাল কোন ক্যাচ ধরতে পারবো। মাঠে আমার একটাই লক্ষ্য থাকে সুযোগটা পেলে সেটাকে যেন কাজে লাগাতে পারি।’

সত্যিই তাই! ফাইনালে সুযোগ ছিলো সেঞ্চুরি করার। তামিম সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ২৪ রানে কাজী অনিকের বলে উইকেটকিপার নুুরুল হাসান সোহান কুমিল্লার ওপেনার তামিমের একটা ক্যাচ ফেলে দেন।

ফাইনালে বাকি সময়টায় ঢাকা তামিমকে আর আউটই করতে পারলো না!

এ সম্পর্কিত আরও খবর