২৪ বছর পর নিজেদের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ১৪৭ রানের লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি। অলআউট হয়েছে ১২১ রান তুলতেই। তাতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ রানের হার, আর সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের কবলে পড়তে হয়েছে তাদের।
ঘরের মাঠে এমন পারফর্ম্যান্সের মূলে আছে ব্যাটিং। দলের শীর্ষ দুই ব্যাটার রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি রানে নেই। পুরো সিরিজে ৬ ইনিংসে একটা সেঞ্চুরিও পাননি দুজনের কেউ। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে বারবার বিপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন ঋষভ পান্ত। আজ যখন দারুণ এক ফিফটি করে দলকে মান বাঁচানো এক জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, তখনই তিনি আউট হলেন দুর্ভাগ্যের বলি হয়ে। তা নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে সমালোচনা!
তবে দিনের শুরুর দিকে দৃশ্যটা পুরোপুরি উল্টো হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল। ইনিংসের ১২তম ওভারের প্রথম বলে এজাজ পাটেলকে সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন পান্ত। বল গিয়ে আঘাত হানে তার শরীরে। তার জন্য নিউজিল্যান্ড রিভিউ তো দূরের কথা, আবেদনই তোলেনি আউটের! পরে রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিল, বলটা লেগ স্টাম্পে লাগত, অর্থাৎ আবেদন তুললেই আউট হতে পারতেন পান্ত। তখন ভারতের রান ছিল ৫২, আর বাঁহাতি এই ব্যাটার অপরাজিত ছিলেন ১৬ বলে ২১ রান করে।
সে সময় ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে পান্ত তুলে নেন ১০০ স্ট্রাইক রেটে দারুণ এক ফিফটি। দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের খুব কাছে। তবে এরপরই দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হলো তাকে। এবারও দৃশ্যপটে এলেন ওই এজাজ পাটেলই!
তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পান্ত। আম্পায়ার এই আবেদনে সাড়া না দিলেও নিউজিল্যান্ড খানিক ভেবে রিভিউ নেয়। এবং তখনই আলট্রা এজে দেখা মেলে স্পাইকের। পান্ত আর ভারতের দুর্ভাগ্যটা এখানেই। রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিল বল যখন ব্যাটের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, তখনই ব্যাটের নিচের অংশ লাগছিল তার বুটে। আলট্রা এজের ওই স্পাইক তাই সে শব্দ থেকেও আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। টিভি আম্পায়ারের কাছে অন্য কোনো উপায় না থাকায় তাই তাকে আউট দিতে হয়।
তা দেখেই দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স প্রশ্ন তুলেছেন প্রযুক্তি নিয়ে। তিনি তার এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বিতর্ক! আবারও ‘গ্রে এরিয়া’ সামনে চলে এল। পান্তের ব্যাটে লেগেছিল বলটা? নাকি না? সমস্যা হচ্ছে, বল যখন ব্যাটের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক যখন তার প্যাডে ব্যাট লেগেছে। স্নিকোয় শব্দই ধরা পড়বে। কিন্তু আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব যে ব্যাটটা বলেই লেগেছে? এটা নিয়ে সবসময়ই চিন্তা হতো আমার, আজ এই টেস্ট ম্যাচের একটা বড় মুহূর্তে এটা আবার হলো! হটস্পট কোথায়?’ ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার সরাসরি না দুষলেও বিষয়টা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি জানি ওরা এখন আর হটস্পট ব্যবহার করে না। তা হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হত।’
এরপর সংবাদ সম্মেলনেও অধিনায়ক রোহিত শর্মা প্রশ্ন তুলেছেন বিষয়টি নিয়ে। বলেছেন, ‘আমি জানি না এই বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে কি না। তবে আমাদের এটাই শেখানো হয়েছে যে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ না থাকলে সেই সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। পান্তের উইকেট আমাদের বড় ধাক্কা দিয়েছে। ও ভাল খেলছিল। দেখে মনে হচ্ছিল জিতিয়ে দেবে। এই ধরনের ম্যাচে একটা সিদ্ধান্ত সব বদলে দেয়।’
এই আউট নিয়ে ভারতেও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত। তবে সেটা তো আর ভারতের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা ঢাকতে পারবে না! আর সে কারণেই ভারত নিজেদের ভাগ্যকে দুষতে পারে এখন।