‘ক্যাচ মিস মানেই ম্যাচ মিস’– কথাটার প্রমাণ আরও একবার দিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে আজ তার দেওয়া একটা ক্যাচের সুযোগ নষ্ট করেছিল বাংলাদেশ। ‘দ্বিতীয় জীবন’টা তিনি কাজে লাগালেন খুব ভালোভাবে। সেঞ্চুরি করে তবে থামলেন। তাতে ভর করে আফগানিস্তানও বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করল হেসেখেলে, ৫ উইকেট হাতে রেখে।
প্রথম ম্যাচে ৯২ রানে হেরে বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল খাদের কিনারে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৮ রানে জিতে সিরিজে ফিরে এসেছিল। তাতে তৃতীয় ম্যাচটা বনে গিয়েছিল অঘোষিত ফাইনাল। সে ম্যাচে ৫ উইকেটের এই হারের ফলে বাংলাদেশ আফগানদের কাছে টানা দ্বিতীয় সিরিজ শেষ করল হারের তিতকুটে স্মৃতি নিয়ে।
২৪৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে আফগানিস্তান শুরুটা করেছিল ভালো। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে সেদিকউল্লাহ আতালকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ ফিরেছিল ম্যাচে। এর একটু পরই এসেছিল সুযোগটা।
মুস্তাফিজুর রহমানের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল গুরবাজের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পয়েন্টে থাকা বদলি ফিল্ডার রিশাদ হোসেনের হাতে। তবে তিনি সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটা তালুবন্দি করতে পারেননি। তা তার হাত ফসকে বেরিয়ে যায়।
গুরবাজ এর আগে থেকেই রুদ্ররূপ ধারণ করে ছিলেন। শরিফুলকে গুনে গুনে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। সেবার ‘জীবন’ পেয়ে যেন আরও সতর্ক হয়ে দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকেন জয়ের দিকে।
তবে গুরবাজকে একের পর এক সুযোগ উপহার এরপরও দিয়েছে বাংলাদেশ। দুবার রানআউটের ‘হাফ চান্স’, একবার স্টাম্পিংয়ের সুযোগও নষ্ট হয়েছে দলের। সেসব সুযোগ দুই হাতে লুফে নিয়েছেন গুরবাজ।
মাঝে একটা ধস নেমেছিল আফগান ইনিংসে। তবে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে সে ধসটা সামাল দিয়েছেন। পথিমধ্যে পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। শতকের পরপরই অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন বাউন্ডারি লাইনে, জাকির হাসান এবার কোনো ভুল করেননি।
ক্যাচটা যখন তুলেছিলেন ২৪ রানে, ক্রিকইনফোর হিসেব মতে তখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। ৫ চার আর ৭ ছক্কায় ১২০ বলে ১০১ রান করে যখন ফিরছেন তিনি, তখন ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট আফগানরা। দলের প্রয়োজন ছিল ৬৮ বলে ৬১ রান। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা তখন নেমে এসেছিল ২০ শতাংশের আশেপাশে।
সেটা তো গানিতিক হিসেব। আদতে ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে গেছে মিরাজের দল। তবু আশা ছিল, যদি ‘মিরাকল’ হয়! হাঁসফাঁস করতে থাকা গুলবাদিন নাইবকে ফিরিয়ে তার একটা আশাও জাগিয়েছিলেন নাহিদ রানা। তবে সব আশা আর সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দেয় মোহাম্মদ নবি আর আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের জুটি। গুরবাজের সেঞ্চুরি জুটির সঙ্গী ওমরজাই ম্যাচ শেষ করে তবেই ফিরেছেন সাজঘরে, ওপাশে মোহাম্মদ নবি ২৭ বলে ৩৪ রানের ঝলমলে এক ক্যামিও খেলেছেন। এসবের মিশেলেই বাংলাদেশ পোড়ে আফগানদের বিরুদ্ধে টানা দ্বিতীয় সিরিজ হারের যন্ত্রণায়।
এর আগে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদউল্লাহর ৯৮ আর মেহেদি হাসান মিরাজের ৬৬ রানে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৪৪ রান। ১১৯ বলে ৬৬ করা মিরাজ আরও একটু আগ্রাসী হতে পারতেন কি না সে প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছিল প্রথম ইনিংস চলাকালেই, ওপাশে যে মাহমুদউল্লাহ বেশ স্বচ্ছন্দেই খেলে যাচ্ছিলেন! ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ‘গুরবাজ-ওমরজাই শো’ সে বিষয়টার প্রমাণ দিয়ে গেল। আফগানরা বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করে ফেলল ৮ বল হাতে রেখেই। তাতে ৩০-৩৫ রানের বহু পুরোনো আফসোস আরও একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সঙ্গে মনে হতে থাকল এটাও, ইশ! মিরাজ যদি আরেকটু আগ্রাসী হতেন!