সমস্যার নাম শর্ট বল, বাউন্সার!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 08:26:50

-নেইল ওয়েগনার কেমন বোলার?

এই প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের বেশ ভালই জানা। মাঠে ওয়েগনার কি এবং কেমন কৌশল নেন, সেটাও এই দলের কাছে প্রায় মুগস্থ। কিন্তু শুধু প্রশ্নটাই জানা। সেই প্রশ্নের সমাধান কি? সেটাই যে আজো জানা হলো না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের!

হ্যামিল্টন টেস্টে পর ওয়েলিংটনের দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই ওয়েগনার রহস্যই হয়ে রইলেন ব্যাটসম্যানদের কাছে! হ্যামিল্টন টেস্টে ৭ এবং ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করে ওয়েগনার চলতি সফরে আরেকবার বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সঙ্কট বাড়াচ্ছেন।

খুব যে সুদক্ষ বা নতুন কোন কৌশল এনেছেন নিজের বোলিংয়ে ওয়েগনার, তাও কিন্তু নয়। মুলত শর্ট বল করতে পছন্দ করেন। বাউন্সারে ব্যাটসম্যানকে চমকে দেন। খাটো লেন্থে ঠুকে গতিতে আসা বল কখনো ব্যাটসম্যানের হেলমেট, কখনো পাঁজর বা কখনো বুক সমান উচ্চতায় তুলেন। স্কয়ার লেগ, ফাইন লেগ এবং মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে এভাবেই মুলত ব্যাটসম্যানের পরীক্ষা নিতে চান ওয়েগনার। এমন বোলিংয়ের বিপক্ষে রান করতে হলে ব্যাটসম্যানকে পুল বা হুক শটে দক্ষ হতে হবে। নতুবা চ্যালেঞ্জ না নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বল ছেড়ে দিতে হবে।

হয় মারতে হবে নয়তো ছাড়তে হবে বল।

এই দুই কাজেই সফরে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। হ্যামিল্টনের দ্বিতীয় ইনিংসে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে এই লড়াইয়ের কিছুটা জবাব খুঁজে পায় বাংলাদেশ। কিন্তু বাকি সময়টায় মিললো এমন চিত্র; ওয়েগনার আক্রমণে। শর্ট বল। বাউন্সার। এবং ক্যাচ তুলে ফিরছেন ব্যাটসম্যানরা! ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং এলোমেলে মুলত ওয়েগনারের এই বাউন্সার বলেই! যে চার উইকেট পেলেন এখানে তিনি, তার সবগুলোই শর্ট অব লেন্থের বাউন্সারে। সবগুলোই প্রাইজ উইকেট-মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের ব্যাটি স্তম্ভ একাই গুড়িয়ে দিলেন এই বাঁহাতি কিউই পেসার।

ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংস শেষে ওয়েগনারের শর্ট বল সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতা পরিস্কার স্বীকার করে নিলেন ৪৯ বলে ৩৩ রান করা লিটন -জানি সে শর্ট বল করবে। কিন্তু বলটা এমন জায়গায় রাখে, কিছু করার থাকে না! এখানে মনোযোগ আরো বাড়িয়ে বল আরও বেশি ছাড়লে হয়তো কিছু করা যাবে।’

টেস্ট ক্রিকেট শুধু বল খেলার নয়, ছাড়ারও যে বটে!

দুই বছর আগে ওয়েলিংটনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে ঠিক একই কাজ করেছিলেন ওয়েগনার। হয় বল হেলমেটে লাগাচ্ছিলেন। নয়তো ব্যাটসম্যানদের গøাভসে। নিয়ম অনুযায়ী ওভারে দুটোর বেশি বাউন্সার দেয়া যায় না। নিয়মটা ভালই জানা ওয়েগনারের। দুটো বাউন্সার তো দিবেনই, সঙ্গে ওভারের বাকি চার বলের সবগুলোই আসবে হয় পাঁজর ধেয়ে নয়তো কুনই বরাবর। লেগ স্লিপ বা শর্ট লেগ সেই ক্যাচ ধরার জন্য দাড়িয়ে। ওয়েগনার তার দেয়া সব বাউন্সারেই যে উইকেট পেয়েছেন তা নয়, বাউন্ডারিও হয়েছে।
তবে বাউন্ডারির চেয়ে যে উইকেট শিকারের সংখ্যা বেশি!

৫ টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৮ উইকেট নেয়া ওয়েগনারের বেশিরভাগ সাফল্যই এই বাউন্সারে হুক বা পুল শটে উঠা ক্যাচে। নিজের বোলিং নিয়ে ওয়েগনারের পরিকল্পনা ও চিন্তা শক্তি খুবই পরিস্কার-‘ওয়েলিংটনে আমি নিজের প্রথম ওভারের প্রায় সবগুলো বলই একটু উপরের দিকে রাখি। সেই ওভারে আমার খরচা হলো ১০ রান। দেখলাম তেমন কোন সুইংও পাচ্ছি না। বলে আড়াআড়ি মুভমেন্টও নেই। বাধ্য হয়েই তখন আমাকে উইকেটের বাউন্সটাই কাজে লাগাতে হলো। এই যে এতবেশি শর্ট বল বা বাউন্সার দেই, এতে অনেকেই আমার সমালোচনা করে। কিন্তু ওসব তেমন মাথায় রাখি না। দলের সাফল্যে অবদান রাখার চেষ্টা আমি করে যেতে চাই। নিয়মের মধ্যে থেকেই বোলিং করতে চাই।’

বোঝাই যাচ্ছে সফরের সামনের সময়জুড়েও ব্যাটসম্যানদের শরীর জুড়ে বাউন্সারই করে যাবেন ওয়েগনার। টিম সাউদি এবং ট্রেন্ট বোল্টও একই কৌশলের পথে হাঁটছেন।

টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার নির্ণয়ক এখন একটাই;বাউন্সার সমস্যার সমাধান খোঁজা!

এ সম্পর্কিত আরও খবর