লড়াই তো দুরের কথা! পঞ্চম দিনের সকালে সামান্য প্রতিরোধও গড়তে পারলো না বাংলাদেশ! ওয়েলিংটন টেস্ট হেরে গেলো বড় ব্যবধানে। ইনিংস ও ১২ রানে এই ম্যাচ জিতে টেস্ট সিরিজও জিতলো নিউজিল্যান্ড।
বৃষ্টিতে ম্যাচের প্রথম দুদিন কোন খেলাই হয়নি। তৃতীয়দিনের সকালে টস হয়। ম্যাচ শুরু হয়। অথচ সেই ম্যাচও বাংলাদেশ হেরে গেলো বিশাল ব্যবধানে। তখনো ম্যাচের শেষদিনের দুই সেশন খেলা বাকি। পাঁচদিনের ম্যাচের দুদিন খেলাই হলো না। অথচ দুই ইনিংসের যোগফল মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিং করলো মাত্র ১১৭ ওভার। একটু জানিয়ে দেই, একদিনে ৯০ ওভার ধরলে বাংলাদেশ এই টেস্টে ব্যাটিং করলো সোয়া একদিন! আর সময়ের যোগ-বিয়োগ বলছে বাংলাদেশ এই ম্যাচ হেরেছে আড়াই দিনেরও কম সময়ের মধ্যে!
শেষদিনের হিসেবে এই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন কাজ ছিলো। কিন্তু প্রত্যাশা ছিলো লড়াইয়ের। সেই আশাও পুরো হলো না। পঞ্চমদিনের সকালের প্রথম সেশনেই হেরে গেলো বাংলাদেশ। গুটিয়ে গেলো দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২০৯ রানে। এই ইনিংসেও বাংলাদেশের সামনে দুর্বোধ্য হয়ে রইলো নেইল ওয়েগনারের শর্টপিচ বোলিং। ৪৫ রানে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। ম্যাচে তার শিকার সবমিলিয়ে ৭৩ রানে ৯ উইকেট।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ শেষদিনের সকালের শুরুর কয়েক ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু সেই সম্ভাবনা বেশিক্ষণ আর সবুজ থাকেনি।
সৌম্য সরকারের উইকেট দিয়ে সকালের সেশনে মড়ক শুরু। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ¯িøপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন সৌম্য ২৮ রান করে। নেইল ওয়েগনার বল হাতে নিয়ে সাফল্য পেতে বেশি দেরি করলেন না। মোহাম্মদ মিঠুন হাফসেঞ্চুরির কাছে এসে ধৈর্য হারালেন। ওয়েগারের শর্ট বল সামাল দিতে পারলেন না। হাফ পুল খেলার ভঙ্গিতে ব্যাট চালালেন। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ গেলো। বাম দিকে সরে দক্ষতার সঙ্গে ক্যাচটা নিলেন টিম সাউদি।
আগের দিনের দুই সেট ব্যাটসম্যান দিনের প্রথম ঘন্টায় বিদায় নিলেন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নিলেন। স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের জমা কিছুটা বাড়লো, কিন্তু অন্যপ্রান্ত থেকে ক্রমশ সঙ্গী হারালেন তিনি। লিটন দাসও আউট হতে বেশি সময় নিলেন না। বোলার সেই নেইল ওয়েগনার। কৌশল সেই পুরানো; শর্টপিচ বল! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খানিকবাদে হাফসেঞ্চুরিতে পৌছালেন। তবে ততক্ষনে পুরুস্কার প্রদানের মঞ্চ প্রস্তুতের তোড়জোড় শুরু!
মাহমুদল্লাহ রিয়াদকেও ৬৭ রান করে ওয়েগারের শর্ট বলে পুল শট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট। একবল পরেই এবাদতের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের জয় ঘোষণা করলেন ওয়েগনার!
চতুর্থদিন শেষে তামিম ইকবাল বলেছিলেন-এই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়! কিন্তু নিউজিল্যান্ডের শর্টপিচ বোলিং এবং বাংলাদেশের ব্যাটিং জানালো-সত্যিই কাজটা অসম্ভব ছিলো!
বৃষ্টিতে এই টেস্টের প্রথম দুদিনের পুরোটাই ভেসে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ মাত্র আড়াইদিনের মধ্যেই হেরে গেলো! তাও আবার ইনিংস ব্যবধানে! সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড এখন তৃতীয় ও শেষ টেস্টে খেলতে নামবে আয়েশের মেজাজে।
ক্রাইষ্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্টে উভয় দল মুখোমুখি হবে ১৬ মার্চ। সেখানেও যদি বৃষ্টি নামে তবে তা নিয়ে নিউজিল্যান্ডের খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই!
ম্যাচ হারতে বেশি সময় নেয় না বাংলাদেশ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (চতুর্থ দিন শেষে) বাংলাদেশ ১ম ইনি: ২১১/১০ (৬১ ওভারে, তামিম ৭৪, সাদমান ২৭, মুমিনুল ১৫, মিঠুন ৩, সৌম্য ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, লিটন ৩৩, তাইজুল ৮, মুস্তাফিজুর ০, আবু জায়েদ ৪, এবাদত ০*, ওয়াগনার ৪/২৮, বোল্ট ৩/৩৮)। নিউজিল্যান্ড ১ম ইনি: ৪৩২/৬ (৮৪.৫ ওভারে, উইলিয়ামসন ৭৪, টেলর ২০০, নিকোলস ১০৭, আবু জায়েদ ৩/৯৪, তাইজুল ২/৯৯, মুস্তাফিজ ১/৭৪)। বাংলাদেশ ২য় ইনি: ২০৯/১০ (৫৬ ওভারে, তামিম ৪, সাদমান ২৯, মুমিনুল ১০, মিঠুন ৪৭, সৌম্য ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, লিটন ১, মুস্তাফিজুর ১৬, বোল্ট ৪/৫২, ওয়েগনার ৫/৪৫)। ফল: নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১২ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: রস টেলর।
আরো পড়ুন-