-কি ব্যাটিং করছেন আন্দ্রে রাসেল?
এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন। এবং এখন পর্যন্ত এই প্রশ্নের কোন জবাব মেলেনি। বোলাররা কোন জবাবই খুঁজে পাচ্ছেন না যে!
আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটের সামনে পড়া মানেই বোলারদের পেটে প্রজাপতির নাচন শুরু। কোথায় বল ফেলবেন? কি বল করবেন? কেমন ফিল্ডিং সাজাবেন? কোনকিছুই ঠাওর করতে পারছেন না প্রতিপক্ষের অধিনায়ক, বোলার বা ডাগআউটে বসা বিশেষজ্ঞ কোচ!
হারের গভীর গর্ত থেকে দলকে টেনে ব্যাট হাতে একাই জেতাচ্ছেন। একটা দুটো ম্যাচে নয়, নিয়মিতই এই অভ্যাস দেখাচ্ছেন রাসেল! ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই মাসলম্যান সত্যিকার অর্থেই চলতি আইপিএলে যা করে চলেছেন, সম্ভবত তাকেই বলে; ব্যাট হাতে রংবাজি!
তার শেষ ম্যাচের ব্যাটিংয়ের কথাই প্রথমে বলি। ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে শেষ চার ওভারে কলকাতা নাইট রাইট রাইডার্সের চাই ৬৬ রান। শেষের ১৮ বলে হিসেবটা দাড়ালো ৫৩ রানে। প্রায় অসম্ভব একটা জয়ের টার্গেটের সামনে কলকাতা। কিন্তু রাসেলের ব্যাট সেই অসম্ভবকে যে সম্ভব করে দিলো! পাঁচ বল বাকি রেখেই সেই ম্যাচ কলকাতা জিতে নিলো ৫ উইকেটে!
মাত্র ১৩ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করে দলকে জেতালেন রাসেল। ১ বাউন্ডারি ৭ ছক্কায় বাজিমাত! একেই বলে জয় ছিনিয়ে নেয়া! একেই বলে ধংসস্তুুপ থেকে বেরিয়ে এসে ম্যাচ জেতানো। মাত্র ৮টি স্কোরিং শটে ব্যাঙ্গালোরের বোলিংকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেললেন রাসেল। ১৮ নম্বর ওভারে এলো ২৩ রান। যেখানে ছক্কা তিনটি। এই ২৩ রানের মধ্যে ১৯ রানই রাসেলের একার।
১৯ নম্বর ওভার করতে এলেন টিম সাউদি। এই ওভারের দুঃস্বপ্ন অনেকদিন তাড়া করতে নিউজিল্যান্ডের এই পেসারকে। প্রথম বলে ১ রান নিয়ে শুভমান গিল স্ট্রাইক দিলেন রাসেলকে।
দ্বিতীয় বল: লং লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন রাসেল। লেন্থ বলে ব্যাটের ফ্রি সুইং!
তৃতীয় বল: আরেকটি ছক্কা! শর্ট এবং অফস্ট্যাম্পের বাইরে পড়লো বল। ব্যাট হাতে চাপাতি চালানোর ভঙ্গিতে শট খেললেন রাসেল। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে বল বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে পড়লো।
চতুর্থ বল: রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে ফুলটস। এটিও ছক্কা, মিড উইকেটের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে পড়লো বল।
পঞ্চম বল: গতি কমিয়ে শর্ট বল করলেন সাউদি। কিন্তু প্রস্তুত ছিলেন রাসেল। গ্লাইড শটে বল উইকেটকিপারের পেছনে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে উড়ালেন। চার রান।
ষষ্ঠ বল: একটু উপরের দিকে পাওয়া লেন্থ বল নিজের স্লটে নিয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে হাঁকালেন রাসেল। ছক্কা! এবং এই ছক্কায় দুদলের স্কোর সমান।
সবমিলিয়ে সাউদির এই ওভারে রান খরচ হলো ২৯। যার ২৮ রানই আন্দ্রে রাসেলের! ওভারের পরের বলেই শুভমান গিলের সিঙ্গেলে ম্যাচ জয়ের আনন্দে উত্তাল কলকাতার ডাগআউট।
রাসেলকে ঘিরে উৎসব। ১৩ বলে অপরাজিত ৪৮। স্ট্রাইকরেট ৩৬৯.২৩! আরেকবার সেই বিস্ময়-কি ব্যাটিং করছেন রাসেল?
সবাই যখন ভাবে ম্যাচ শেষ, আর কোন সম্ভাবনা নেই; ঠিক তখনই রাসেলের ব্যাটিং আনন্দ শুরু। মাত্র একটা ম্যাচে নয়। এমন প্রতাপ তিনি দেখিয়েছেন পেছনের চার ম্যাচেই!
২৩ মার্চ। প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। রাসেল করলেন ১৯ বলে অপরাজিত ৪৯ রান। ৪ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারি। স্ট্রাইকরেট ২৫৯.৮৯! দল জিতলো। রাসেল ম্যাচ সেরা।
২৭ মার্চ। প্রতিপক্ষ কিংস এলেভেন পাঞ্জাব। রাসেল করলেন ১৭ বলে ৪৮। ৫ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারি। স্ট্রাইকরেট ২৮২.৩৫। দল জিতলো। রাসেল ম্যাচ সেরা।
৩০ মার্চ। প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটাল। রাসেলের ব্যাট হাসলো ২৮ বলে ৬২ রানে। ৪ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কা। স্ট্রাইকরেট ২২১.৪২। সুপার ওভারে সেই ম্যাচ হারে কলকাতা।
৫ এপ্রিল। প্রতিপক্ষ রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোর। রাসেলের রান ১৩ বলে অপরাজিত ৪৮। ১ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কা। স্ট্রাইকরেট ৩৬৯.২৩। দল জিতলো ৫ উইকেটে। রাসেল ম্যাচ সেরা।
চার ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত। চলতি আইপিএলের বিস্ময়কর পারফর্মার। উইকেটে যতক্ষণ পর্যন্ত আন্দ্রে রাসেল আছেন ব্যাট হাতে, ধরেই নেবেন কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচ জিতছে; তা সেই টার্গেট যতই অসম্ভব হোক না কেন!
রাসেল যে সত্যিকার অর্থেই ব্যাট হাতে সব অসম্ভব টার্গেকে সম্ভব করছেন!
-তাহলে ব্যাট হাতে আন্দ্রে রাসেলকে আটকানোর উপায় কি?
-আছে।
টুইটারে একজন কোচ সমাধানটা দিলেন-‘‘বল উপরে দিও না। শর্টও দিও না। লেন্থ বলও করো না। রাসেল থেকে বাঁচতে হলে বলই করো না!’’