বাংলাদেশ ফাইনালে; সম্মিলিত সাফল্যেই সমস্যার সমাধান!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 22:01:12

এতো সহজ!

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো এত্তো সহজ। মানছি ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে সব তারকা নেই। কিন্তু যারা নেই তারা তো মূলত ব্যাটসম্যান। বোলাররা তো সবাই আছেন। সেই পুরো শক্তির বোলিংয়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনজাতি টুর্নামেন্টের পেছনের দুই ম্যাচে যে কায়দায় বাংলাদেশ উড়িয়ে দিয়েছে তাকে এককথায় বলে-একতরফা ম্যাচ। আর কড়া ক্রিকেটীয় ভাষা ব্যবহার করলে বলতে পারেন-‘মিস ম্যাচ!’

প্রতিপক্ষ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাহলে এখন বাংলাদেশে সামনে মিস ম্যাচই বটে! পরিসংখ্যানেই তার বড়ো প্রমান। ওয়ানডে ক্রিকেটে পেছনের ছয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঁচটিতেই হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। এই হার যে শুধু যে বাংলাদেশের মাটিতেই তা কিন্তু নয়, খোদ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে ফিরেছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর এই সংখ্যা বাড়ানোর আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৭ মে, শুক্রবার ডাবলিনে তিনজাতি ক্রিকেটের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ফের মোকাবেলা হচ্ছে বাংলাদেশের। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ৩ : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ০, এমন একটা রেজাল্ট কার্ডের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে এখন ক্রিকেটামোদিরা।
টুর্নামেন্টের ট্রফি জয়ে ফেভারিটের মর্যাদাও পাচ্ছে বাংলাদেশ।

অথচ এই বাংলাদেশ দলই আয়ারল্যান্ডে প্রথম যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে তাতেই হেরে যায়! তাও আবার আয়ারল্যান্ডের ‘বি’ দলের বিপক্ষে! তবে ‘আসল’ লড়াইয়ে ঠিকই রুখে দাড়ালো দল। টুর্নামেন্টে যে দুটো ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ তাতে একক কৃতিত্বের কোনো দাবিদার নেই। সম্মিলিত চেষ্টা এবং নিজের সেরাটা খেলার একটা পরিছন্ন পরিকল্পনার সফল প্রয়োগই বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলে আনার মুল নিয়ামক। যে যখন যেভাবে সুযোগ পেয়েছে সেটাকে শতভাগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। সম্মিলিত সেই সাফল্যেই বাংলাদেশকে তুলে এনেছে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে।

প্রথম ম্যাচের বিশ্লেষণেই যাই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা যেভাবে হয়েছিলো মনে হচ্ছিলো ৩০০ তো বটেই, সাড়ে ৩৫০ করে ফেলাও তাদের জন্য অসম্ভব কিছু না। কিন্তু সেই চিন্তায় আটকে না থেকে ম্যাচের মোড় ঘোরানোর পরিকল্পনায় নামে বাংলাদেশ। সাকিব ও মিরাজের স্পিনে ইনিংসের মাঝের ওভারে সেই রসদও পাওয়া গেলো। পুরো ম্যাচে মাশরাফি পাঁচজন বোলার ব্যবহার করেন। এই পাঁচজনের প্রত্যেকের নামের পাশেই উইকেট! হ্যাঁ, মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ৮৪ রানের খরচা গুনলেও ২ উইকেট ঠিকই তুলে নিলেন। বাংলাদেশের সম্মিলিত এই বোলিং সাফল্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর আটকে গেলো ২৬২ রানে।

সেই রান তাড়ায় নেমে জয়ের অর্ধেকের বেশি কাজটা করে দিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। যেভাবে খেলছিলেন দুজন, তাতে দুজনেই সেঞ্চুরি করে ফেরার সুযোগ ছিলো। তামিম ফিরলেন ১১৬ বলে ৮০ রান তুলে। সৌম্যের ব্যাটে ৬৮ বলে ৭৩ রানের হাসি। ওপেনিং জুটিতে যোগ হলো ১৪৪ রান। ব্যাটিংয়ের বাকি কাজটুকু সুসম্পন্ন করলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিফুর রহিম। দুজনেই অপরাজিত রইলেন। সাকিব ৬১ বলে ৬১। মুশফিক ২৫ বলে হার না মানা ৩২।

অর্থাৎ ব্যাটিংয়েও ঠিক বোলিংয়ের মতো সমান সাফল্য। যে চারজন ব্যাট করলেন চারজনই রান পেলেন।

সম্মিলিত সাফল্যের এরচেয়ে সুন্দরতম উদাহরণ আর কি হতে পারে?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচের গল্পটাও একই ছকে আঁকা। মারকুটো শুরুর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থামলো ২৪৭ রানে। এই ম্যাচেও বাংলাদেশের ছয় বোলারের মধ্যে চারজনই উইকেট পেলেন। সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ দুজনেই এই ম্যাচেও রান খরচে ভীষন রকম হিসেবি। মাশরাফি ৩/৬০ ও মুস্তাফিজ ৪/৪৩ আগের মতোই উইকেট শিকারি।

ব্যাটিংয়েও সেই প্রথম ম্যাচের কাহিনী আরেকবার অনুদিত এখানে। ওপেনিংটা ভালোই হলো। তামিম থেকে মাহমুদউল্লাহ-ছয় ব্যাটসম্যানের সবাই রান পেলেন। টানা দুই ম্যাচে সৌম্যের হাফসেঞ্চুরি। সাকিবের দ্রুতগতিতে ৩৫ বলে ২৯। মুশফিকের ব্যাটে ৭৩ বলে ৬৩ রানের নির্ভরতা। প্রথমবারের মতো ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন ৫৩ বলে ৪৩ রানের সঞ্চয়। আর মাহমুদউল্লাহর ৩৪ বলে অপরাজিত ৩০ রানের ফিনিসারের ইনিংস।
পরিকল্পনা ও প্রয়োগের নিখুঁত কৌশল। সম্মিলিত শক্তির কার্যকর বিষ্ফোরণ। ধীরস্থির ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত কায়দায় সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা। কিছু ঘটবে এমন অপেক্ষায় না থেকে ঘটনা ঘটানোর বড় অংশীদার হতে পারার কৃতিত্বেই বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে।

১৭ মে’র ফাইনালেও এমনই একটা ‘ক্রিকেট মাস্তানির’ প্রয়োজন!

এ সম্পর্কিত আরও খবর