এটা তাহলে ‘সাকিবের বিশ্বকাপ’ হতে চলেছে!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম, টন্টন, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-15 01:34:20

সাকিব যখন ব্যাট করতে নামলেন তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের সঞ্চয় মাত্র ৫২ রান। ম্যাচ জিততে তখনো বাকি আরো ২৭০ রান!

বিশাল কাজই বটে! কিন্তু সেই বিশাল কাজ সাকিব অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে শেষ করলেন। ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ ৭ উইকেটে। তখনো ম্যাচের ৫১ বল বাকি। সাকিব ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ এবং লিটন দাস করলেন হার না মানা ৯৪ রান।

বিশ্বকাপের চার ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফসেঞ্চুরি। দু’বার ম্যাচ সেরা। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩৮৪ রানের মালিক সাকিব। এবারের বিশ্বকাপকে পুরোদুস্তর নিজের করে নিচ্ছেন সাকিব। সেই প্রসঙ্গে সাকিব বললেন-‘বিশ্বকাপে আমাকে ভালো করতে হবে- সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি এখানে খেলতে এসেছি। দলের জন্য আমাকে অবদান রাখতেই হবে। নিজেকেই সবসময় বলেছি-আমাকে ভালো খেলতেই হবে। তবে এখানো আমাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়নি। সামনের চারটা ম্যাচ আছে। সেই ম্যাচগুলোতে ভালো খেলতেই হবে। নিজের ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে আমি এখন অনেক বেশি ফোকাসড এবং রিল্যাক্স।’

ম্যাচ জিততে চাই ৩২২ রান। এতো বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির ছিলো না বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চে বাংলাদেশ রান তাড়ার নতুন ইতিহাস তৈরি করলো। এই রান তাড়া করে জেতার ভিত্তিটা কি? ম্যাচ শেষে সেই বিশ্লেষণে সাকিব জানালেন-‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে কেউ ভাবেইনি যে এটা কঠিন কোনো রান হবে। সবাই খুব হাসিখুশি মেজাজেই ছিলো। এই পরিবেশই পুরো দলকে উদ্বীপ্ত করে। এই ম্যাচ আমরা জিতবো সেই বিশ্বাসের জন্ম তখনই।’

ম্যাচ জেতার জন্য দুই ওপেনারের ভালো শুরুকে আলাদা করে ধন্যবাদ দেন সাকিব-‘ দুই ওপেনারের শুরুর ব্যাটিং সেই আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে তোলে। যেভাবে তামিম ও সৌম্য খেলছিলো তাতে ড্রেসিংরুমের পরিবেশই বদলে গেলো। কোনো সময় কোনো হতাশা বা আতঙ্কের ছায়া কোথাও নেই। আমার তো মনে হয় মাঠে রান তাড়া করার বিশ্বাসের পুঁজি সেখানে পেয়ে যাই আমরা।’

ওয়ানডে ক্রিকেটে এতো ভালো অবস্থানে সাকিবকে কখনো দেখা যায়নি। অন্তত ব্যাট হাতে। সেই প্রসঙ্গেও সাকিব বললেন-‘ব্যাটিংটা আমি ভালো করছি। তবে এটাই সেরা কিনা-তা জানি না। আশা করছি সামনের ম্যাচগুলোতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারবো। ব্যাটে-বলে আমার সময়টা ভালো যাচ্ছে। দলের জন্য অবদান রাখতে পারছি-তাতে আমি খুশি। গ্রুপে আরো চারটা ম্যাচ বাকি আছে। সামনের এই ম্যাচেও আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। সবাইকে দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে হবে।’

সাকিবের সেঞ্চুরির সঙ্গে লিটনের সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস এই ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাহসের সময়। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নেমেই লিটন দাস যে ব্যাটিং করলেন তাতেই বাংলাদেশের কঠিন ম্যাচ জেতার কাজটাও সহজ হয়ে গেলো। সাকিবও তাই জানালেন-‘লিটন ব্যাটিং করতে নামার সময় আমি তাকে বলেছি-উইকেট খুব ভালো। যদি ঠিক মতো আমরা খেলতে পারি তাহলে তিন উইকেটেই ম্যাচ জিতে ফিরবো। প্রথম ১০/১৫ বলের পর লিটন যে কায়দায় ব্যাট করেছে সেটা দেখার আনন্দই আলাদা। অন্যপ্রান্ত থেকে আমি তার ব্যাটিং উপভোগ করেছি।

লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কারণে অন্যপ্রান্তে আমি কখনোই কোনো চাপ অনুভব করিনি। এই রান তাড়ার সেটাই সবচেয়ে ভালো অংশ ছিলো। বিশ্বকাপে এটা ছিলো তার প্রথম ম্যাচ। চার ম্যাচ দলের বাইরে থাকার পর এমন ম্যাচে খেলতে নামাটা আদর্শ কোনো ব্যাপার নয়। তবে যে কায়দায় সে চাপ মোকাবেলা করেছে তাতে আমি মুগ্ধ।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর