ইসরাইলের বিরুদ্ধে মেসিদের প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে

, খেলা

নিউজ ডেস্ক | 2023-08-24 02:54:40

ঢাকা: খেলা আর বৈশ্বিক রাজনীতি এক বিষয় নয়, দু’টোকে এক করে দেখারও অবকাশ নেই। তার পরও মাঝে-মধ্যে পরিস্থিতির কারণে নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করা হয় খেলাকে রাজনীতির দৃষ্টিতে।

যেমন এবার করা হচ্ছে বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা ও ইসরাইলের মধ্যকার অনুষ্ঠিতব্য প্রস্তুতি ম্যাচটি নিয়ে।

রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে ৯ জুন ইসরাইলের বিপক্ষে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ম্যারাডোনার পূর্বসূরি মেসির আর্জেন্টিনা। এই প্রস্তুতি ম্যাচকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। আর্জেন্টিনার অনেক ফুটবলপ্রেমীর দাবি, মেসিরা যেন ইসরাইলের মতো একটি দেশের সঙ্গে এই ম্যাচটি না খেলেন। বিশ্বের নানা জায়গা থেকেও একই দাবি উঠেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি সহিংসতাই এর মূল কারণ।

ইসরাইল ম্যাচটিকে রাজনৈতিকীকরণ করেছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। অন্য অনেক ভেন্যু থাকতে বিরোধপূর্ণ জেরুজালেমে কেন এই ম্যাচের আয়োজন করতে হবে, প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়েও।

আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলিও এই ম্যাচ খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

হাইতির বিরুদ্ধে দারুণ জয়ের পরে সাম্পাওলি বলেছেন, ‘কোন দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, কোথায় খেলতে হবে- এ সব আমি ঠিক করি না। কিন্তু যদি ফুটবলারদের দৃষ্টিকোণ দিয়ে ব্যাপারটা দেখেন, তা হলে বলবো- বার্সেলোনাতেই আমাদের খেলা উচিত ছিল।’

যেভাবে ক্রীড়াসূচি হয়েছে, তা নিয়ে তিনি খুব একটা খুশি নন, তা আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন মেসিদের কোচ।

অবশ্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আর্জেন্টিনার কোচ। কিন্তু নিজেদের প্রস্তুতি সূচি নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ম্যাচের আগের দিন ওখানে পৌঁছতে হবে। ম্যাচ খেলে সোজা রাশিয়া চলে যেতে হবে। এই সূচিটাই আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই নিয়ে আমি আর কী বলবো!’

মেসিদের এই ম্যাচ নিয়ে ইসরাইলে অবশ্য উত্তেজনা বেশ তুঙ্গে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের ফুটবল সংস্থার (পিএফএ) পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জেরুজালেমের টেডি স্টেডিয়ামকে ভেন্যু নির্ধারণের প্রতিবাদে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন এবং বিশ্ব ফুটবলের মূল সংস্থা ফিফার কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন করা হয়েছে, মেসিদের ওই ম্যাচ বাতিল করতে।

পিএফএ সভাপতি জিব্রিল রজব চিঠিতে বলেন, ইসরাইল খেলাকে রাজনীতিকরণ করেছে। ৯ জুন টেডি স্টেডিয়ামে ইসরাইল যে ম্যাচ আয়োজন করেছে সেটি সম্পূর্ণ অনৈতিক। যেখানে খেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৯৪৮ সালের আগে এই স্থানে ফিলিস্তিনের গ্রাম ছিল। সেখান থেকে এর অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে ইসরাইল এই এলাকা দখল করেছে।

তিনি বলেন, ইসরাইল একটি দখলদার বাহিনী। তারা অপশক্তির প্রয়োগ করছে। এরা বৈশ্বিক মূল্যবোধের লঙ্ঘন করে আসছে। ইসরাইল খেলার মূলনীতিরও বিরোধী।

রজব বলেন, এই ম্যাচের কারণে আর্জেন্টিনাকে তার খেলোয়াড়ি এবং নৈতিকতার বিষয়ে মূল্য দিতে হবে। তারা প্রচুর সমর্থক হারাবে।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ইহুদিদের জন্য অখণ্ড জেরুজালেম বলে আর্জেন্টিনার জনগণকে ভুল বুঝাচ্ছে।

সম্প্রতি ফিলিস্তিনে শুরু হওয়া নতুন আন্দোলন থেকেও এই ম্যাচ না খেলতে অনুরোধ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। যতক্ষণ ইসরাইল ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ভূখণ্ড ফেরত না দেবে, তাদের মানবাধিকার রক্ষা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে এসব খেলা থেকে বিরত থাকার দাবি জানান তারা।

ম্যাচ আয়োজক ডেনিয়েল বেনিয়ামিন ইসরাইল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বলেন, ৬ লাখের বেশি মানুষ এই খেলাটি দেখতে চাচ্ছেন। যদিও টেডি স্টেডিয়ামে ৩১ হাজার ৭৩৩ জন বসে খেলা দেখতে পারবে।

২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপে ইসরাইল অংশ নিতে পারেনি।

অন্যদিকে ১৬ জুন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে শিরোপার দাবিদার আর্জেন্টিনা। ডি-গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া।

এ সম্পর্কিত আরও খবর