বিশ্বকাপ ফুটবল, টিভি, ডায়াবেটিস ও ভায়াগ্রা!

, খেলা

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | 2023-08-26 09:33:08

চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের চূড়ান্ত অপেক্ষা। মাঠে গড়াবে টেলস্টর, ফেভারনোভা, জাবুলানি, ব্রাজুকা’র উত্তরসুরী। উন্মাদনায় টগবগ করছে সবাই। টিভি, ডায়াবেটিস এবং ভায়েগ্রার মতো বিষয়ও আলোচিত হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রসঙ্গে। 

টিভি বা টেলিভিশনের নাম অনেকে দিয়েছে ‘বোকাবাক্স’। টিভি জিনিসটার পক্ষে-বিপক্ষে আছে তুমুল বিতর্ক। শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও রুচিবোধের অবক্ষয় হচ্ছে অজস্র দেশি-বিদেশি চ্যানেলের মচ্ছবে। অনেকেই টিভির বিরুদ্ধে সরব। 

আবার সমালোচনাই একমাত্র কথা নয়, ভালো দিকগুলো শনাক্ত করাও কর্তব্য। টিভিরও কেবল নিন্দাই প্রাপ্য নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমরা টিভিতে কম-বেশি জড়িত। আমাদের ঘরে ওই টিভি সেটটিই হলো দূরের জানালা। ওই জানালা আমাদের কাছে কত অজানা, অদেখা তথ্য এনে দেয়, আমাদের জীবনে, চিন্তার বিন্যাসে, জ্ঞানের জগতে যোগ করে কত শত নতুন তথ্য ও মাত্রা!

টিভির কুপ্রভাব আছে বৈকি, কিন্তু সুপ্রভাবও তো কম নেই। ফলে আধুনিক জীবনে টিভি কেবল খেলনা নয়, নয় ফেলনাও।

উপযোগিতার দিক থেকে একটি উদাহরণ দিতে পারি। টিভি না থাকলে আধুনিক ফুটবলের সমৃদ্ধ ঝলমলে চেহারাটা কি আমাদের অজানা, অদেখা থেকে যেত না? উদাহরণটি দিয়েছি এই ভেবে যে, রাশিয়ায় শুরু হতে যাচ্ছে দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবল। টিভির বদৌলতেই বিশ্বকাপ, ইউরো কাপ ইত্যাদি দেখে দেখে আমরা জানি, ইতালি, জার্মানি, লাতিন আমেরিকায় কী রকম খেলা হয়। তা যেন একেবারে অন্য রকম একটা জাদুবিদ্যা! অজানা, অচেনা কোনও শিল্প। আসলেই চোখে স্পষ্ট দেখা যায়, খেলোয়াড় আর খেলার মৌলিক কৌশলের রকম-ফের; যা দেশ ও খেলোয়াড় বিশেষে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। 

টিভিই আমাদের ব্যাপকভাবে চিনিয়েছে পেলে, ম্যারাডোনা, জিদান, নেইমার এবং স্পেন,  ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে। টিভির পর্দায় আমরা দেখছি একই মাঠ, গ্যালারি, ডজ, ড্রিবলিং, ইনসাইড, আউটসাইড। কিন্তু তফাৎ পরিষ্কার দেখা যায় আকাশ-পাতাল ফারাকে: রণকৌশলে, গতিতে, নৈপুণ্যে, ফিটনেসে, ক্ষমতায় এবং বুদ্ধির দীপ্তিতে; টোটাল ফুটবলে।

১৯৭৮ কি ১৯৮২ ঠিক মনে নেই, টিভিতে বিশ্বকাপ খেলা দেখানো হচ্ছে। টিভি তখন খুব সুলভ বস্তু নয়। বিশ্বকাপ দেখানোও সহজ ছিল না আজকের ইন্টারনেটের যুগের মতো। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহের সাহায্যে বিটিভি বিদেশি টিভি থেকে ধার করে দেখাত সেই খেলা। পুরো আসরও দেখানো যেত না। কোয়ার্টার কী সেমিফাইনাল থেকে খেলাগুলো দর্শকরা দেখতে পেতেন। সেই সময়ে একটি আকর্ষণীয় উক্তি শুনেছিলাম। ঢাকার এক বিখ্যাত খেলোয়াড় তৈরির শিক্ষক (তখন কোচ পদবিটিরই কোনও কাঠামোগত অস্তিত্ব ছিল না বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে) বৃদ্ধ বয়সে বিশ্বকাপ ফুটবল টিভিতে দেখে অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘এসব এত স্পিডে হচ্ছে কী করে?’

খুবই তাজ্জব হয়েছিলেন তিনি। আমরাও। টিভি আমাদের বোকা বানিয়ে দিয়েছিল। এই হলো  বোকাবাক্স টিভি। ফুটবলই নয়, ক্রিকেট প্রসঙ্গেও টিভির বাহাদুরি কম কিসে! হালের ক্রিকেট মাঠে টিভি আম্পায়ারের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। ফুটবলের মাঠেও অফসাইড, ফাউল, পেনাল্টির ক্ষেত্রে টিভিকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত বিচারকের আসনে বসতে হতে পারে। বিশেষত রেফারির কোনও সিদ্ধান্তে কোনও দল যদি আপত্তি জানায়, তাহলে শেষ কথাটি তো বলতে হবে এই টিভি বেচারাকেই।

এ তো গেল টিভির গুণের কথা। এবার দোষের কথায় আসা যাক। চিত্রটি মার্কিন মুলুকের একটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। কিছু লোক পাওয়া গেল, এরা প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টা টিভি নামক ‘বোকাবাক্স’র সান্নিধ্যে কাটায়। সোফা-কোচের তুলতুলে গদিতে ডুবে, হাতে রিমোট কন্ট্রোল, কোলে টেডি বিয়ার আর দুগালে চিপস-বার্জার-কোলা নিয়ে বেড়ে ওঠা মার্কিন মুলুকের নতুন এই প্রজন্মই হলো ‘জেন-এক্স’ বা জেনারেশন নেক্সট। এদেরই আদর করে অনেকে ‘কাউচ পোটাটো’ বা ‘আরামকেদারার আলু’ নামেও সম্বোধন করে থাকেন। 

গত এক দশকে নধর-কান্তির এই ধেড়েখোকা-খুকুদের ক্রমবর্ধমান বপু যুক্তরাষ্ট্রে ডাবল-এক্স সাইজের বস্ত্রের চাহিদা যেমন বাড়িয়েছে, তেমনভাবেই মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কপালেও বিস্তর ভাঁজ ফেলেছে। সমস্যাটি এতটাই গভীর স্তরে পৌঁছেছে যে, ‘জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ নামের অভিজাত বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশিত একগুচ্ছ গবেষণাপত্রে মার্কিনিদের অস্বাভাবিক মেদবাহুল্যের আড়ালে বিশেষ এক ধরনের ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব আবিষ্কার করেছেন হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ের পণ্ডিত বিজ্ঞানীরা। 

সাত বছর ধরে হাজার পঞ্চাশেক নাদুশ-নুদুশ মার্কিন নাগরিকের ওপর নিশ্ছিদ্র প্রহরা বসিয়ে গবেষকরা এও লক্ষ করেছেন যে, ডায়াবেটিসের এই নিঃশব্দ মহামারীর জন্য দায়ী এদের অতিরিক্ত টিভি দেখার মারাত্মক প্রবণতাটি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর অপর এক সমীক্ষা মোতাবেক প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মার্কিনি বেজায় ভুঁড়িওয়ালা এবং প্রতিবছর সে দেশে তিন লক্ষাধিক মানুষ মেদের আধিক্যজনিত রোগে মারা যায়। কেননা, তাদের অতিরিক্ত মেদ শরীরটিকে রোগের ডিপোয় পরিণত করে। এরই ধারাবাহিকতায় মেদবহুল মার্কিনিরা যখন টিভির সামনে অচল বসে থাকে, তখন প্রথমেই আসে ডায়াবেটিস। আর তার হাত ধরে ঢুকে পড়ে হৃদরোগ, কিডনির অসুখ ও নার্ভের একগুচ্ছ মরণব্যাধি। টিভি দেখার প্রতিক্রিয়ায় নীরবে আঘাত হানে বিশেষ ধরনের এই ডায়াবেটিস, যার নাম ‘অ্যাডাল্ট অনসেট ডায়াবেটিস’, এটি কিন্তু জিনঘটিত কোনও সমস্যা নয়। অথচ ডায়াবেটিস মূলত বংশগত ও জিনবাহিত হলেও এই নতুন ধরনের বহুমূত্র রোগটি একান্তই শারীরিক পরিশ্রমবিমুখ জীবন-যাপন বা সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের প্রতিফল। কারণ গবেষণাপত্রের উপসংহারে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘আমরা টেলিভিশনকে সরাসরি এর জন্য দায়ী করছি; কারণ আমেরিকানদের নিষ্ক্রিয় করে তুলে আরামকেদারার আলুতে পরিণত করেছে এই যন্ত্র।’

গবেষকদের মতে, সেলাই-ফোঁড়াই করা, গাড়ি চালানো বা পত্রপত্রিকা পড়ার মতো অভ্যাসও শরীরের জমা ক্যালরি খানিক খরচ করে  দেয় কিন্তু  একনাগাড়ে টিভি দেখলে  বরং বিশাল ক্যালরির স্তূপ শরীরে এসে হাজির হয়ে জমতে থাকে। আসলে টিভি দেখতে দেখতে অনবধানে মানুষ সমানে মুখ চালিয়ে যায়। উপরন্তু টেলিভিশনে বহুল বিজ্ঞাপিত খাবারগুলো অর্ডার দিয়ে আনিয়ে খায় আর অতিরিক্ত ক্যালরি জমিয়ে তুলে।

হার্ভার্ডের গবেষকরা অনেক সাধ্য-সাধনার পর অবশেষে মেদবাহুল্য, ডায়াবেটিস ও টিভির নেশার একটি সহজ সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রতিদিন দুঘণ্টা করে টিভি দেখা পৃথুলতার সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে আর ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

মার্কিন স্বাস্থ্য সমস্যা ও টিভি দেখার প্রসঙ্গটিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘এশিয়ান নিউট্রিশন কংগ্রেস’ একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছেন যে, ভারতসহ এশিয়ার অগ্রসর দেশগুলোর টিভিপাগল শহুরে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের (১০-১২ বছর বয়সী) মধ্যেও এই রোগ দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে। বড়দের নিয়ে সমীক্ষা চালানো হলে ফলাফল আরও ভয়াবহভাবে দেখা যাবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।

অতএব অকাতরে টিভি দেখার আগে ভেবে দেখা দরকার, বোকাবাক্সের সামনে বসে নীরব ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন কি না। বিশেষ করে প্রাত্যহিক টিভি-দর্শন তো বটেই, বিশেষ বিশেষ টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতার সময় স্রোতের মতো সময় বয়ে যায়; সেটাও খেয়াল রাখা দরকার। এই যেমন বিশ্বকাপ ফুটবল আসছে, খুব কম লোকই পাওয়া যাচ্ছে, যিনি টিভি মারফত খেলার সঙ্গে নেই। অবশ্যই খেলা দেখা দরকার, তবে সেটা টাইম ম্যানেজমেন্ট করে এবং নিজের শরীরের স্বার্থের দিকটি বিবেচনায় রেখে। বোকাবাক্সের সামনে অচল হয়ে বসে থাকা যাবে না।

ফুটবল নিয়ে টিভির সামনে স্তাণুর মতো বসে থাকা কি সম্ভব? এমন উত্তেজন খেলা স্নায়ু ও শরীরকে নাড়িয়ে দেবেই, এ আর আশ্চর্য কী! বিশ্বকাপ ফুটবল কতটুকু উত্তেজক, সেটাও জেনে রাখা ভালো। স্বয়ং ফুটবল উত্তেজনার-বটিকা ভায়াগ্রাকেও গোল দিয়েছে!

ভায়াগ্রা নামের যে ওষুধ যৌন উত্তেজনা এবং সঙ্গম ক্ষমতার বর্ধক, এক কথায় যে ক্যাপসুল কামোদ্দীপক, তার নাকি বাজার ঠাণ্ডা হয়ে যায় বাঘা-বাঘা ফুটবল খেলা টিভির পর্দায় এলেই! এ রকম খবর যে সত্য, তার প্রমাণ, বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় ভায়াগ্রার বিক্রি কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে আসে।

ভায়াগ্রার মতো একটি মহার্ঘ্য বস্তুর বাজার-পতন ভাবনার কথাই বৈকি! তাও আবার ফুটবলের মতো একটি পদশিল্প বস্তুর কাছে! অতএব, বিষয়টি তলিয়ে দেখ, খানা-তলাশি কর, গবেষণায় লেগে যাও।‘আইসিস’ নামের একটি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র এগিয়েও এল। দীর্ঘ অনুসন্ধান, জরিপ ও অন্বেষণের পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের গবেষণা ফলাফলে জানাল, ফুটবল উত্তেজনায় সত্যি সত্যিই ভায়াগ্রার বিক্রি কমে যায়। এর কারণ, ফুটবল এতটাই উত্তেজক যে যৌন উত্তেজনার জন্য নতুন কোনও উত্তেজনার প্রয়োজন বোধ করে করে না দর্শক ও ফুটবলপ্রেমী মানুষেরা। 

গবেষকরা এমনও বলেছেন যে, ফুটবলের উত্তেজনা আসলে জীবনে ফিরিয়ে আনে অনেক দিনের জুড়িয়ে যাওয়া যৌন উত্তেজনাকে এবং সঙ্গম ক্ষমতাকেও উস্কে দেয় পুরুষালি খেলা ফুটবল। ফুটবলের বদৌলতে যেই জাগল সুপ্ত পৌরুষ, অমনি কমে গেল ভায়াগ্রার বিক্রি ও চাহিদা।

ফুটবলের কবল থেকে ভায়াগ্রাকে বাঁচাতে ‘আইসিস’ গবেষণা কেন্দ্রের ৪শ ডাক্তার নিয়মিতভাবে বেজায় মাথা ঘামাচ্ছেন এবং ভায়াগ্রা বা অন্যান্য কামোদ্দীপক বটিকার বণিকরা শঙ্কায় শিউরে উঠছেন বিশ্বকাপ বা অন্যান্য সকার টুর্নামেন্টের কথা ভেবে।

কমোদ্দীপক ওষুধের প্রয়োজন হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ফুটবল ও ভায়াগ্রার মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের সমস্যাসমূহ এবং সমাধান সূত্র। ফুটবল-ভায়াগ্রার দ্বৈরথের সূত্র ধরে গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, মানুষের জীবন থেকে যৌন উত্তেজনা-উদ্দীপনা চলে যায় অনেক কারণেই। যৌন-শীতলতার অন্যতম প্রধান কারণগুলো হলো: অপরাধবোধ, লজ্জা, স্বভাবের বুড়োমি, চরিত্রের সাত্ত্বায়ন। 

সাধারণত মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার বাইরে আচরণগত দিক লক্ষ করলে দেখা যায় যে, গড়ে প্রায় সবাই একটু বয়স হলেই যৌন-জীবনের ওপর পর্দা টানা শুরু করেন। মনেপ্রাণে তখন ক্রমাগত ড্রপসিনের হুইসেল বাজে। এহেন অবস্থায় ইরেকটাইল ডিসফ্যাংশন অবশ্যম্ভাবী। বুড়ো বয়সে এসব কী করছি? মনে এই খচখচানি নিয়ে সুখের যৌন-মিলন আশা করা বাতুলতা মাত্র। ভায়াগ্রার প্রয়োজন হয় মনের এই ধরনের অবস্থাতেই। কৃত্রিম উত্তেজনার এই অব্যর্থ ওষুধ দূর করে জুড়িয়ে যাওয়া শীতল মনের ও জড়োসড়ো শরীরের সঙ্কোচ এবং এভাবেই বৃদ্ধ বয়সেও কিছুক্ষণের জন্য হলেও ফিরে আসে মহার্ঘ্য-যৌবন।

গবেষকরা তাদের গবেষণায় মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিয়ে দেখলেন ফুটবল-ভায়াগ্রা দ্বন্দ্বের মূল কারণটিকেও। জানালেন সেই তথ্য: ফুটবল দেখে যারা এতদূর উত্তেজিত হতে পারেন যে, খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও দমছুট এবং নুইয়ে যায় তাদের দেহ। তাদের তো যৌন ইচ্ছা ও শক্তিটিকেই থেঁতো করে দিয়ে গেছে ফুটবলের বুট। কিন্তু যারা মাঠে খেললেন আসল খেলাটা, তাদের যৌন-জীবন তো চট করে নেতিয়ে পড়ে বলে শোনা যায় না। 

তাহলে আসল কথা হলো, ওই ‘খেলা’ শব্দটা। সেক্সও যে একটা স্পোর্টস, এ কথাটা প্রায়ই মানুষ ভুলে যায় এবং কৃত্রিম উত্তেজনা খোঁজে ওষুধে, শিকড়ে-বাকড়ে, কামোদ্দীপক সালসায়। এ খেলায় ন্যূনতম বয়স থাকলেও বেশি বয়স আছে বলে তো বিজ্ঞান কিছুই জানায় নি। চ্যাপলিন ৭০ বছর পেরিয়ে সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। টলস্টয় কিংবা পিকাসো, রবিশঙ্কর কিংবা এলিজাবেথ টেলর, এমন কি খুশবন্ত সিং, কারও যৌন-জীবনই বয়সের ধার ধারে নি। এর কারণ, সেক্সও যে একটি প্রাণবন্ত স্পোর্টস, এই সরল সত্যটি তারা বুঝতে পেরেছিলেন এবং সব খেলার মতোই যৌন খেলারও নিজস্ব উত্তেজনা আছে, সেটা মেনে নিয়েছিলেন। অতএব তাদের জন্য আলাদা অন্য কোনও কৃত্রিম উত্তেজনার প্রয়োজন হয় নি।

ফুটবল কতটা নষ্ট করেছে ভায়াগ্রার বাজার, তা নিয়ে গবেষণা, তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে। বিশ্বকাপ বা বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টের আসর জমে বসার আগে প্রসঙ্গটি উস্কেও উঠছে। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই এ জাজ্বল্যমান সত্যটিকে চাপা দেওয়া যাবে না, সত্যটি হলো: ফুটবল গোল দিয়েছে ভায়াগ্রাকেও!’   

এ সম্পর্কিত আরও খবর