উরুগুয়ের অভিজ্ঞতার কাছেই হারল মিসর

, খেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার | 2023-08-26 00:57:27

রেফারির প্রথমার্ধের বাঁশি বাজতেই হতাশায় দু’পাশে মাথা দুলিয়ে মাঠ ছাড়েন লুইস সুয়ারেজ। উরুগুয়ের বাকি খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষায় কিছু হারানোর বিরক্তি স্পষ্টত। ঠিক বিপরীত ছবি তখন মিসর শিবিরে। গোলশূণ্য ৪৫ মিনিট শেষ হতেই নিজেদের বক্সে মিসরের এক ডিফেন্ডার সেজদায় পড়ে গেলেন- স্বস্তিতে, কৃতজ্ঞতায়!

ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত ড্র থাকার সেই স্বস্তিটা প্রায় ধরে রেখেছিল মিসর। কিন্তু তাদের সেই প্রতিরোধ ভেঙে যায় ম্যাচের ৮৯ মিনিটে। কর্নারের সামনে থেকে উড়ে আসা ফ্রিকিকে হেড করে দুর্দান্ত গোল করেন হোসে গিমিনেজ। এবার বাকিটা সময় কেবল স্বস্তি এবং আনন্দে উরুগুয়ে। একাদশে না থেকেও এই ম্যাচে ক্যামেরার লেন্সে প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে ছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। ম্যাচের আগেরদিন মিসরের কোচ হেক্টর কুপার ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘মোহাম্মদ সালাহ পুরোপুরি ইনজুরি মুক্ত। শতভাগ ফিট।’ অথচ সেই শতভাগ ফিট (!) সালাহকে ছাড়াই এই ম্যাচের একাদশ সাজাল মিসর। রিজার্ভ তালিকায় নাম থাকলে বদলি হিসেবে এই ম্যাচে তাকে নামাননি মিসর কোচ। বেঞ্চে বসে পুরোটা সময় সালাহ দলের খেলা দেখেন। দলের ভালো একটা মুভে সতীর্থ খেলোয়াড়দের হাততালি দিয়ে উৎসাহ যোগান। আর ৮৯ মিনিটের গোলে দল যখন পিছিয়ে পড়ে তখন যেন শেলটা বিঁধল সালাহ’র বুকে! হতাশায় মুষড়ে পড়েন তিনি। কষ্টের কান্নায় বুকটা যেন উথাল-পাথাল। ভালোই জানতেন আর কয়েকটা মিনিট প্রতিরোধ গড়তে পারলেই এই ম্যাচ থেকে তার দল পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারত। আর শেষ মিনিটের এই গোল শোধ করে উরুগুয়ের মতো দলের বিপক্ষে ম্যাচে ফেরা অনেক কঠিন কাজ।

সত্যিই তাই! হোসে গিমিনেজের গোলেই ভেঙে গেল মিসরের ম্যাচ ড্র রাখার সব প্রতিরোধ!

প্রথমার্ধ গোলশূণ্যভাবে শেষ হলে গোলের সুযোগ যে উরুগুয়ে পায়নি তা কিন্তু নয়। ৮ মিনিটের সময় বক্সের অনেক বাইরে থেকে পোস্টে শট নেন কাভানি। মিসরের গোলকিপার এল সেনাই দুর থেকে উড়ে আসা সেই শট আটকে দেন। তবে এই অর্ধে গোলের সবচেয়ে ভালো সুযোগটা নষ্ট করেন লুই সুয়ারেজ। কর্নার জটিলতা থেকে হঠাৎ ফাঁকায় বল পেয়ে যান সুয়ারেজ। সামনে শুধু তার গোলকিপার এল সেনাই। কিন্তু ছয় গজ দুর থেকে একটু তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সুয়ারেজের শট সাইড পোস্টের বাইরের জালে লাগে।

প্রথমার্ধের পারফরমেন্স বিবেচনায় নিলে উরুগুয়ের সবচেয়ে ফ্লপ পারফর্মার ছিলেন এডিনসন কাভানি। এই অর্ধে মাত্র সতেরবার বলে পা ছোঁয়াতে পেরেছেন এই ষ্ট্রাইকার। দলের বাকি সব খেলোয়াড়দের যে এই সংখ্যাটা কম। তাও আবার এই সতের টাচের বেশিরভাগই নিজেদের সীমান্তেই! অথচ ম্যাচে তার পজিশন ষ্ট্রাইকার!

প্রথমার্ধের এই সমালোচনা দুর করে দিলেন কাভানি দ্বিতীয়ার্ধে। সুয়ারেজের সঙ্গে মিলে তার বেশ কয়েকটি অ্যাটাকিং মুভ মিসরের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দেয়। ৮৩ মিনিটের সময় গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন কাভানি।

সুয়ারেজের হেড থেকে সামনে পাওয়া বল মাটিতে পড়ার আগেই জোরাল শট নেন কাভানি। বল সোজা যাচ্ছিল মিসরের গোলপোস্টে। কিন্তু এবারও প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন মিসরীয় গোলরক্ষক এল সেনাই। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’হাতে শটটা ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। মিনিট খানেক পরে কাভানির ফ্রিকিক মিসরের পোস্টে লেগে ফিরে আসল। মনে হচ্ছিল এই ম্যাচে ভাগ্যও বোধহয় মিসরের পক্ষে।

কিন্তু বিশ্বকাপ হলো অভিজ্ঞদের জায়গা। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঠিকই ম্যাচ জিতে নিলো দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। ফ্রিকিক থেকে উড়ে আসা শটে হোসে গিমিনেজ অনেক উচুঁতে লাফিয়ে নিখুঁত হেড করলেন। এবার বল সোজা জালে। সেই গোলেই পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল উরুগুয়ে।

আর নিজের ২৬তম জন্মদিনে দলের হার দেখে রিভার্জ বেঞ্চে হতাশায় পুড়লেন ‘মিসরের মেসি’!

এ সম্পর্কিত আরও খবর