ক্লাসিক ম্যাচে রোনালদোর হ্যাটট্রিক

, খেলা

এম. এম. কায়সার,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 03:39:35

স্পেন ৩: পর্তুগাল ৩

বলা হচ্ছিল এই ম্যাচটা হবে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ক্লাসিক। সত্যিকার অর্থেই তাই হল!

ম্যাচের প্রথম ঘন্টায় যে ফুটবল হল- সেটা দেখার জন্যই মুখিয়ে থাকে ফুটবল বিশ্ব। গোল। আক্রমণ। দলীয় সমন্বয়। একক কৃতিত্ব। পিছিয়ে পড়ার পর দারুণ মেজাজে ম্যাচে ফিরে আসা। সবমিলিয়ে ৬ গোলের ম্যাচ। একবার পর্তুগাল এগিয়ে যায়। পরে স্পেন সমতায় ফিরে। ফের পর্তুগালের এগিয়ে যাওয়া। আরেকবার স্পেন গোল করে ফিরে ম্যাচে। দু’বার পিছিয়ে থেকে সমতায় ফেরার পর স্পেন হিসেবটা বদলে দেয় -এগিয়ে যায়। মনে হচ্ছিল এই লিড ধরে রাখবে স্পেন। কিন্তু রোনালদো বদলে দিলেন সব হিসেব। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করলেন। দলের হার বাঁচালেন। রাশিয়া বিশ্বকাপের ক্লাসিক ম্যাচটা ড্র হলেও পুরো এই ম্যাচের নায়ক একজনই- রোনালদো।

বুম বুম ষ্টাইলে ম্যাচটা শুরু করেন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিক অফের বাঁশি বাজার পর প্রথম দুমিনিটে রোনালদোর পায়ে যতবার বল গেছে তখনই পুরো সোচি স্টেডিয়াম চিৎকারে ফেটে পড়েছে, তার সমর্থনে। সেই জোরেই কিনা দারুণ দক্ষতার সঙ্গে ম্যাচের চার মিনিটের মধ্যে প্রথম আক্রমণেই পেনাল্টি আদায় করে নেন রোনালদো।

-আদায় করে নেয়া?

পর্তুগালের সমর্থকরা হয়তো এই যুক্তি মানতে চাইবেন না। বলের ওপর দু’বার পা নাচিয়ে স্পেনের ডি বক্সে ঢুকে পড়েন। আরেকটু সামনে বাড়তেই সামনে থাকা নাচো ফার্নান্দেসের পায়ের সঙ্গে হালকা একটা ধাক্কা লাগে রোনালদোর। সেই ধাক্কায় তাল সামাল দিতে না পারার ভঙ্গিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রোনালদো। পেছনে থাকা ইতালিয়ান রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পেনের খেলোয়াড়রা একযোগে ছোটেন রেফারির কাছে প্রতিবাদের মিছিল নিয়ে। কিন্তু রেফারি অনঢ় তার সিদ্ধান্তে। ম্যাচের বয়স তখন চার মিনিট। পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়ে রোনালদো শট নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। গোলকিপার ডেভিড গিয়া সামনে এসে রোনালদোর মনোযোগ ভাঙ্গার একটা চেষ্টা চালান। কোন লাভ হয়নি। রোনালদোর নিখুঁত পেনাল্টি শট পোস্টের ডানদিকের জালে জড়ায়। আর পুরো উল্টো দিকে ঝাঁপান ডেভিড গিয়া। ম্যাচে পর্তুগালের লিড।

গা গরম হয়ে উঠার আগেই স্পেনের জালে গোল। অন্য দল হলে এই ধাক্কা সামাল দিতে সময় লাগতো। কিন্তু স্পেন জানে কিভাবে ফিরে আসতে হয়। মাঝমাঠে বুসকেটস, ইনিয়েস্তা, ইসকো বল বেশিরভাগ সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা চালান। প্রান্ত বদলে বারকয়েক আক্রমনে উঠে আসে স্পেন। ২৪ মিনিটের সময় স্পেনের চেষ্টা সফল হয়। মাঝমাঠ থেকে পাওয়ূা বল ধরে প্রথমে পেপেকে পেছনে ফেলেন ডিয়োগো কস্তা, সামনে দাড়ানো পর্তুগালের আরও দুই ডিফেন্ডারকে যাকে বলে এক কথায় নাচিয়ে ছাড়াÑ তাই করে দেখালেন। দুই ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক গলিয়ে ডান পায়ে যে প্রচন্ড গতিতে শট নিলেন সেটা গিয়ে জায়গা পেল পর্তুগালের ডান পোস্টে, গোল! দুর্দান্ত গো-ও-ল! ম্যাচে সমতা। এই গোলের বর্ননায় একটা কথাই শুধু বলা যায়-পুরোপুরি একক কৃতিত্বের গোল এটি!

সমতা আনার পর পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা চলে গেল স্পেনের দখলে। ইসকো এরই মধ্যে বামপায়ে জোরে একটা শট নিলেন কিন্তু কপাল মন্দ সেটা পর্তুগালের ক্রসবারে লেগে ঠিক নিচে পড়ল তবে গোললাইন পার করল না! যেভাবে আক্রমনের পর আক্রমন করে চলছিল স্পেন তাতে পর্তুগালের ডিফেন্স ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। ঠিক তখনই ধারার বিপরীতে ফের গোল খেয়ে বসে স্পেন। বেশ দুর থেকে রোনালদো বাম পায়ের যে শট নেন, অন্য সময় হলে গোলকিপার ডেভিড গিয়ার সেটা অবশ্যই কোলে জমে যাওয়ার কথা। কিন্তু রোনালদোর শট ডেভিড গিয়া হাতে রাখতে পারেননি। বল স্পেনের জালে। ২-১ এগিয়ে যায় পর্তুগাল। দুটোই গোল রোনালদোর। বিরতির আগমুহূর্তের এই গোলে স্পেন বড় ধাক্কা খায়।

কিন্তু ঐ যে বললাম পিছিয়ে পড়েও লড়তে পারার মন্ত্র জানা আছে স্পেনের। বিরতির পর তাই প্রথম আক্রমণেই ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে স্পেন। রক্ষা কর্তা সেই আগেরজনই ডিয়োগো কস্তা! আর ম্যাচে সমতা আনা মানেই হল স্পেনের শক্তি অনেকগুন বেড়ে যাওয়া। সেই জোসেই ইসকো খানিকবাদে ভলি শটে যে গোল করলেন সেটা চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলের দাবি জানাতে পারে। বাম পায়ে সুইংয়ে বল জালে। ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে গেল এবার স্পেন। মনে হচ্ছিল জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নরা।

তবে পর্তুগাল দলে যে একজন গোলমেশিন আছেন যিনি যে কোন পরিস্থিতিতে গোল করতে পারঙ্গম। জ্বি রোনালদোই ফের দলের ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হলেন। ম্যাচের ৮৮ মিনিটের সময় ডি বক্সের সামান্য বাইরে রোনালদোকে ফেলে দিলেন জেরার্ড পিকে। ফ্রি কিক নেয়ার আগে চোখ বন্ধ করে খানিকটা যেন ধ্যান করলেন রোনালদো। তারপর সামনে দাড়ানো মানব প্রাচীরের ওপর দিকে যে ব্যানানা সুইংয়ের ফ্রিকিক নিলেন সেটা গোলকিপার ডেভিড গিয়া শুধু চেয়ে দেখলেন! অসম্ভব সুন্দর গোল। তাতেই ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো সমতা ৩-৩। এবং রোনালদোর হ্যাটট্রিক! বিশ্বকাপের আসরে এটি তার প্রথম হ্যাটট্রিক।

ক্লাসিক ম্যাচটিকে শুধুমাত্র নিজের করে নিলেন এই তারকা। ম্যাচটা ড্র হয়েছে তবে একজন ঠিকই জিতলেন-ক্রিশ্চিয়ান রোনালদো!

এ সম্পর্কিত আরও খবর