এমন জয়ের প্রতীক্ষাতেই ছিলেন মুশফিক

ক্রিকেট, খেলা

আপন তারিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, দিল্লি থেকে | 2023-08-30 13:37:32

গত ১৫ দিন দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে মুশফিকুর রহিমের। ধর্মঘটের পর সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা! মেনে নিতে পারছিলেন না সাবেক এই অধিনায়ক। ভেতরের রক্তক্ষরণ বুঝতেও দিচ্ছিলেন না কাউকে। রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের পর হাসিমুখ নিয়েই জানালেন এমন একটা মুহূর্তের প্রতীক্ষাতেই ছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরের এমন অনাকাংখিত ঘটনা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এমনই একটা জয় জরুরি ছিল।  দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বসে হাসিমুখে মুশফিক বলছিলেন, 'গত ১৫ দিনের পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসার উপায় ছিল একটা জয় কিংবা ফাইটিং স্পিরিট। ষোল কোটি মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে লড়বো। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।'

তবে সাকিব কিংবা তামিম ইকবাল ছাড়া জয়টাকে বেশ বড় করেই দেখছেন মুশফিক। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে তাদেরই মাঠে টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে হারানোর তৃপ্তি ছুঁয়ে গেছে তাকে। তারওপর নিজে ম্যাচের সেরা।  ৪৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি।

জয়ের নায়ক বলছিলেন, 'দেখুন, সাকিব আমাদের জন্য বড় এক ক্রিকেটার। আমরা সব সময়ই মিস করি। তামিমও আমাদের দলের বড় একটা পার্ট। অনেক ম্যাচ তারা নিজেরা একা হাতে জিতিয়েছে। এবং আমি বলবো তাদের অবশ্যই মিস করেছি। কিন্তু এটা একটা অনেক বড় ব্যাপার যে তাদের ছাড়া আমাদের দল জিততে পারে। যেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ দল এগিয়ে যাবে।'

২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হার এখনো পোড়ায় মুশফিককে। যদিও বিশ্বকাপের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের ম্যাচকে এক করে দেখতে রাজি নন তিনি। বলছিলেন, 'ওয়ার্ল্ড কাপের ম্যাচ আর দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারতের বিপক্ষে জিতিনি। এমন একটা জয় দরকার ছিল। একদিন তো হতোই। আমরা শুরুটা করতে পেরেছি। বিশ্বাসটা এসেছে ওদের এই ফরম্যাটে হারাতে।'

সাকিব কিংবা তামিম ইকবাল ছাড়া জয়টাকে বেশ বড় করেই দেখছেন মুশফিক 

তবে বেঙ্গালুরুতে ১ রানে রানের ম্যাচটা রোববারের থেকেও সহজ ছিল বলে মনে করেন মুশফিক। জানিয়ে দিলেন, 'বেঙ্গালুরুর ম্যাচটা আরও সহজ ছিল। কারণ ম্যাচে দুই ওভার আগেই জয় পথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আজ কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন শেষ দুই ওভারে এসেও ম্যাচটা জমে ছিল। শেষ ওভারে ৩ বল বাকি থাকতে জয় পেয়েছি। আমি যদিও সেট ব্যাটসম্যান ছিলাম। কিন্তু স্লো উইকেটে ততোটা সহজ ছিল না। সৌম্যর সঙ্গে আমার যে কথা হচ্ছিল আমরা অন্তত ১৯ ওভার পর্যন্ত খেলব। আমরা একটা সেট ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে জানতাম কিছু একটা হবে।'

সৌম্য ৩৯ রানে ফিরলেও ক্রিজে ছিলেন মুশফিক। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। ভারতের বিপক্ষে প্রায় নিশ্চিত ম্যাচ হাতছাড়ার দুঃখটাও তাহলে এবার ভুলবে টাইগাররা। মুশি জানাচ্ছিলেন, 'অনেকবারই ভারতের শেষে জয়ের খুব কাছে গিয়েও আমরা হেরেছি। এবার অন্তত পরিকল্পনা ছিল এমন কাছে নিয়ে যেতে পারলে ওই জায়গা থেকে পিছু হটবো না। লাস্ট দুইটা হারের অংশ ছিলাম আমি। একটা ব্যাটিংয়ে একটা ফিল্ডিংয়ে। আজ ব্যাট করতে নেমে এটাই ভেবেছি আগের হারগুলোকে ওভারকাম করতে হবে! দেখে-শুনে খেলে যেটা করতে পারলাম।'

তবে জয়ের পর উৎসবটাও কেমন যেন সাদামাটা ছিল। টানা ৮ হারের পর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়, কিন্তু মাঠে বাড়তি উন্মাদনা দেখা যায়নি মুশফিকদের। এমন কী বায়ু দূষণ নিয়েও নেই কোন অভিযোগ। মুশফিক জানালেন, 'দেখুন এয়ার পলুশন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমার মাথায় ছিল না। ভারতের মতো একটা দলের বিপক্ষে খেলা, এতো দর্শকের সামনে এরচেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। এমন সুযোগ তো সব সময় আসে না। এই প্রথম এতো বড় একটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছি। এটা কোন ব্যাপারই না।'

আন্ডার ডগ হিসেবে সিরিজ শুরু করলেও টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বপ্ন এখন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।মুশফিক নিজেও জানিয়ে দিলেন, এখনো সিরিজের দুটি ম্যাচ বাকি, সেখানেও এমনই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় দল! দিল্লির জয় বাড়িয়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস!

এ সম্পর্কিত আরও খবর