ফুটবল মাঠের মহত্ত্ব

, খেলা

মায়াবতী মৃন্ময়ী, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 01:43:10

২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেন ১-০ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারায়। খেলা শেষে নেদারল্যান্ডসের তারকা মিডফিল্ডার নিজের জার্সিটি উল্টে উঁচিয়ে ধরল। দেখা গেল বড় বড় অক্ষরে লেখা—“দানি জার্ক, তুমি সবসময় আমাদের হৃদয়ে আছো”।

দানি জার্ক ছিল প্রতিপক্ষ স্পেন দলের প্রয়াত ক্যাপ্টেন। স্পেনবাসীরা তাকে খুব ভালবাসত। ২০০৮ সালের দিকে প্রশিক্ষণ-মাঠে হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে দানি মারা যায়। পরাজিত প্রতিপক্ষের দেওয়া এই সম্মানটি যেন সকল স্পেনিয়দের জন্যই অভিনন্দন ও শুভকামনা ছিল। সে’জন্য স্পেনিয়দের আনন্দাশ্রু সে’বার বহুগুণ বেশি ঝরেছিল।

২০০৩ সালে হংকংয়ে ডেনমার্ক-ইরানের খেলার শেষ মুহূর্ত। গ্যালারির এক দর্শক রেফারির সুরে বাঁশি বাজিয়ে বসল। খেলা শেষের বাঁশি ভেবে, খেলা শেষ হয়ে গেছে মনে করে ইরানের ডিফেন্ডার বল হাতে তুলে নিল। তা-ও ডি-বক্সের ভিতরেই। নিয়মানুযায়ী রেফারি পেনাল্টি দিয়ে বসল।

ডেনমার্ক-এর ক্যাপ্টেন (অনুর্ধ-২৩ তরুণ কিন্তু) কোচ-এর সঙ্গে খানিক আলাপ করল। তারপর পেনাল্টি কিকে ইচ্ছে করেই গোল না দিয়ে গোলপোস্টের বাইরে ঠেলে দিল বলটি। ইরান ১-০ গোলে জিতে গেল। অথচ গোলটি পরিশোধ করলে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় শক্তিশালী ডেনমার্কই জিতত বলে খেলা-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

একটি অনুচিত জয়ের চাইতে পরাজয় অনেক বেশি সম্মানের এবং মহত্ত্বের— প্রকৃত খেলোয়াড়ি নৈতিকতা এমনই! পেনাল্টি কিক নেয়া ডেনমার্কের সেই স্ট্রাইকার ফেয়ার প্লে ট্রফি পেয়েছিলেন নৈতিক দায়িত্ববোধের স্বীকৃতিস্বরূপ ।

খেলোয়াড়ি পেশাদারিত্ব আর ফেয়ার-প্লে’র প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কারণে ফুটবল সৌন্দর্যমন্ডিত। এ’ক্ষেত্রে জার্মানি অনন্য। যতটা সম্ভব সুস্থির পরিচ্ছন্ন ও ভদ্রস্থ খেলার আপ্রাণ চেষ্টার কারণে জার্মানি দল মারদাংগা পড়ি-মরি আক্রমনাত্মক খেলা খেলেনা। দরকার হয় না জিতলাম, কনুইয়ের ঠেলায় প্রতিপক্ষের বুকের খাঁচা ভাঙ্গা ফুটবল খেলা নয়—এই মনোভংগি-সৌন্দর্য থাকার জন্য সব কিছু বাদ দিয়ে হলেও জার্মানির খেলাগুলো সুন্দর হয়।

আমরা তো সামান্য দর্শক-সমর্থক মাত্র! কী শিখলাম? পছন্দের দলের জন্য ফ্যানাটিক হওয়ার বাইরে যোগ্যতম দল কাপ জিতুক, এমন মনোভাব, উদারতা ও মহত্ত্ব কয়জনের আছে?

এ সম্পর্কিত আরও খবর