মুস্তাফিজকে ছাড়া একাদশ! ভারতও বিস্মিত

ক্রিকেট, খেলা

আপন তারিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ইন্দোর (ভারত) থেকে | 2023-08-26 01:56:42

মুস্তাফিজুর রহমান একাদশে নেই! সকালে ইন্দোর টেস্টের বাংলাদেশ একাদশটা রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম দিল ভারতীয় শিবিরে! বিশেষ করে প্রেসবক্সে ভারতীয় সাংবাদিকরা তো দুলছিলেন বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলায়! তালিকায় ভুল দেখছি না তো?

ঘটনা কি? দ্য ফিজ কেন নেই একাদশে? আগের দিন বিরাট কোহলি তো বড় হুমকি হিসেবে দেখেছিলেন তাকে। প্রতিপক্ষ যাকে আতঙ্ক হিসেবে দেখছে টাইগাররা কীনা তাকে ছাড়াই খেলতে নামল?

বৃহস্পতিবার শুরু ইন্দোর টেস্টে টাইগার ম্যানেজমেন্ট একাদশে রাখেনি পেসার মুস্তাফিজকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে নখদন্তহীন বোলিংয়ের পর দ্য ফিজে আস্থা রাখতে পারেননি তারা। পেস আক্রমণে আবু জায়েদ চৌধুরির সঙ্গে আছেন এবাদত হোসেন।

মুস্তাফিজের না থাকাটা যারপরনাই বিস্মিত করেছে ভারতীয় সাংবাদিকদের। বার্তাটোয়েন্টিফোরের সঙ্গে সেই বিস্ময়ের কথাই জানাচ্ছিলেন বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট কুশান সরকার। বলছিলেন, 'আমি তো খুবই অবাক হচ্ছি। এখন এটা দিনের শেষে বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে যেই আসবে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে-আমি জানতে চাইবো যে মুস্তাফিজের ইনজুরি আছে কীনা? যদি ইনজুরি থেকে থাকে তাহলে অন্য ব্যাপার। অবশ্য তখন আরেকটি প্রশ্ন উঠবে ইনজুরি থাকার পরও তাকে কেন দলে রাখা হলো? নেটে তো বল করতে দেখলাম আগের দিন, তখন তো কিছু মনে হলো না!'

কুশান সরকার আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। পিটিআই-এর এই সাংবাদিক বলছিলেন, 'ফিট যদিই না থেকে থাকে তাহলে নির্বাচকরা কেন ওকে দলে রাখল, তাহলে তো সেটা অন্যায় ব্যাপার হলো। ইন্দোরের পিচে প্রথম দিনই বল যেভাবে সিম করছে, যেভাবে মুভমেন্ট হচ্ছে সেখানে মুস্তাফিজের মতো বোলার দরকার ছিল। তাছাড়া যদি দেখি অভিজ্ঞতা, এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদকে আমি ছোট করছি না কিন্তু ওদের থেকে তো মুস্তাফিজের কোয়ালিটি বেটার। অভিজ্ঞতাও বেশি। যেটা বিরাট কোহলি বলেছেন। তিনি রেখে ঢেকে বলেননি। সোজাসুজি কথা বলেছেন। তিনি মুস্তাফিজকে ইন্টারন্যাশনালি খেলেছেন। আইসিসির ইভেন্টে খেলেছেন। আবারও আইপিএলেও দেখা হয়েছে। আমি তো খুবই বিস্মিত! গতকাল চোট লেগেছিল কীনা, নাকি চোট লুকিয়েছেন অনেক প্রশ্ন আমার মনে।'

আইপিএল খেলার সুবাদে ভারতে আলাদা একটা পরিচয় আছে মুস্তাফিজের। একারণেই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ম্যাচ শুরুর আগের দিন বুধবার ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছিলেন, 'অবশ্যই ও খুবই ভালো একজন বোলার। ওর বিপক্ষে আগেও খেলেছি আমরা। ও লাল বলেও বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে। নিশ্চিত করেই ওর দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে আমাদের। কারণ, আমাদের দলে না থাকায় বাঁহাতি পেসার আমরা তেমন একটা খেলি না। তবে আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি আছি।'

কিন্তু ইন্দোরে বাঁহাতি এই পেসারকে খেলতে হচ্ছে না। টাইগার একাদশে দ্য ফিজকে না দেখে টাইমস অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক গৌরব গুপ্তা জানাচ্ছিলেন, 'যৌক্তিকভাবে যদি বিষয়টা দেখি তবে তো মুস্তাফিজের এই টেস্টে থাকার কথা ছিল। কারণ এই উইকেটে সিমাররা বাড়তি সুবিধা পাবে। তবে আগের দিনই অবশ্য আমার সূত্র থেকে বুঝতে পারছিলাম, ওর ফিটনেসে ঘাটতি আছে। হয়তো ওকে ইডেনে পিঙ্ক বলের দিবা-রাত্রির টেস্টে চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তারপরও এটা আমার কাছে বিস্ময় লাগছে যে ওর মতো বোলারের ওপর বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রাখতে পারেনি।'

মুস্তাফিজকে দলে না রাখাটা বাংলাদেশ দলের জন্য বড় ক্ষতি হিসেবেই দেখছেন গৌরব গুপ্তা। তবে টি-টোয়েন্টিতে এই পেসারের ব্যর্থতার কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি। দ্য ফিজ না থাকায় দলের অন্য পেসারদের সুযোগ কাজে লাগানোর প্রেক্ষাপট তৈরি হবে বলে বিশ্বাস এই ভারতীয় সাংবাদিকের।

আরেক ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিক সন্দ্বীপন ব্যানার্জির সঙ্গেও কথা হলো এনিয়ে। যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃশ্যপটটাও বেশ কয়েক বছর ধরে অনুসরণ করছেন। ফ্রিল্যান্স এই রিপোর্টার ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে দাঁড়িয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোরকে বলছিলেন, 'বেশ কয়েক বছর ধরে আমি মুস্তাফিজকে ক্লোজলি ফলো করছি। আমার যেটা মনে হয় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ওর ফিটনেস নিয়ে নিশ্চিত নয়। ওর ফর্মটা ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে আমরা যেমনটা দেখেছি, ও সেই কাটারের ওপর নির্ভর করছে। এই ধরনের উইকেটে টেস্টে সেই অস্ত্রগুলো তো পুরোপুরি আইডল নয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশ ওকে কলকাতায় গোলাপি বলের টেস্টের জন্য রেখে দিচ্ছে। এই টেস্টটা খেলে ওর যাতে ইনজুরি না হয়। ইডেনে বাংলাদেশকে তিনজন মেইন পেসার খেলাতেই হবে। মুস্তাফিজকে ওই ম্যাচের জন্য বাঁচিয়ে রাখতেই হয়তো এখানে বিশ্রামে রাখা হয়েছে।

এই ভারতীয় দলের যদি আপনি পারফরম্যান্স দেখেন ওরা খুবই ভালো। কিন্তু কখনো কখনো বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে একটু স্ট্রাগল করে। এক্ষেত্রে মুস্তাফিজকে না দেখতে পারা কোহলিদের জন্য একটু ভালো।'

সেই ভালোটাই ভারতীয় দলকে উপহার দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন দেখার একটাই আবু জায়েদ চৌধুরির আর ইবাদত হোসেন কতোটা সামাল দিতে পারেন কোহলি-রোহিত শর্মাদের!

এ সম্পর্কিত আরও খবর