ভারতের রান উৎসব, চেয়ে শুধু দেখল বাংলাদেশ!

ক্রিকেট, খেলা

আপন তারিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ইন্দোর (ভারত) থেকে | 2023-08-31 17:41:34

সকাল নাকি বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে। ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে দিনের শুরুটা তো ছিল বাংলাদেশেরই। আবু জায়েদ রাহির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইঙ্গিত ছিল লড়াইয়ে ফেরার। চেতেশ্বর পূজারা-বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফিরতেই প্রাণ ফিরে এসেছিল ম্যাচে। কিন্তু মধ্য প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে সূর্যের আলো যতো বাড়ছিল, ততোই যেন ফিকে হচ্ছিল টাইগারদের সম্ভাবনা!

আগের দিন মাত্র ১৫০ রানে অলআউটের পর পিছিয়ে পড়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যোগ হয়েছে ভারতের রান পাহাড়ের চাপ!

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেকটা দুঃস্বপ্নের মতো হতে যাচ্ছে সফরকারীদের। ইন্দোর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও স্পষ্ট দাপট কোহলিদের। ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান তুলে নিয়েছে তারা। এরইমধ্যে ১ম ইনিংসে লিড ৩৪৩ রানের। স্বাগতিকরা হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে আর নামতে চাইছে না। দিনভর ভারতের রান উৎসব, শুধুই চেয়ে দেখল বাংলাদেশ! একদিনে ৪০৭ রান!

অবশ্য ক্যাচ মিসের মহড়া দিলে তো এমনই হবে। যার হাত ধরে ভারত পা রেখেছে রান পাহাড়ে সেই মায়াঙ্ক আগারওয়াল প্রাণ পেয়েছেন একাধিকবার। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩২ রানেই ফিরতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার তুলে দেওয়া সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ইমরুল কায়েস। এরপর শনিবার সকালে তিনি যখন ৮২ রানে, তখন আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ বাঁচিয়ে দেয় তাকে।

সেই ধাক্কা সামলে অষ্টম টেস্ট খেলতে নামা মায়াঙ্ক তুলে নেন তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। এরমধ্যে তিনটি শতক পেয়েছে তার সবশেষ ৫ ইনিংসে!

এরপর সেই শতকটাকেই ডাবল বানিয়ে ফেলেন মায়াঙ্ক। মেহেদি মিরাজকে ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। এমন দাপুটে শতরান দেখে হাততালিতে বাহাবা দিতে বাধ্য হলেন মুশফিক-ইমরুল কায়েসরা! কে বলবে ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নেমেছেন তিনি?

টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন বিরাট কোহলি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে তার ব্যাট থেকে আসে ২০৪। এবার তাকেও ছাড়িয়ে গেলেন মায়াঙ্ক। তবে টপকাতে পারলেন না শচীন টেন্ডুলকারকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বােচ্চ সংগ্রাহক এখনো সেই মাস্টার ব্যাটসম্যানই। যিনি ২০০৪ সালে ঢাকায় করেন ২৪৮ রান।

তার আগে সকালটা ছিল টাইগার পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির। চেতেশ্বর পূজারাকে ফুল লেংথ বলে বোকা বানালেন তিনি। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে সুইং বলে ব্যাটে ঠিকঠাক লাগল না। বল ওয়াইড স্লিপে দাঁড়িয়ে মুঠোবন্দী করেন বদলী ফিল্ডার সাঈফ হাসান।

সকালে এই রাহির বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন পূজারা। কিন্তু হাতে জমাতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। মজার ব্যাপার হলো তার বদলি হিসেবে নেমে সাঈফ ক্যাচ ধরতে ভুল করলেন না। পূজারা ফেরেন ৭২ বলে ৫৪ রানে। তার আগে মায়াঙ্কের সঙ্গে গড়েন ৯১ রানের জুটি।

এরপর লাঞ্চের আগেই ভারতের সবচেয়ে বড় উইকেটটিই তুলে নেন আবু জায়েদ। ফিরিয়ে দেন বিরাট কোহলিকে। তার লেংথ বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে পেছনের পায়ে। যদিও বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউতে স্পষ্ট দেখা যায়- ইম্প্যাক্ট লাইনে ছিল। আর বল লাগতো লেগ স্টাম্পে।

কোহলি আউট শূন্য রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে এবারই প্রথম কোনো রান না করেই ফিরলেন তিনি। আর সবমিলিয়ে টেস্টে দশমবারের মতো ফিরলেন কোনো রান না করেই।

ইন্দোর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প এখানেই শেষ। বোলাররা বল করেছেন, আর ফিল্ডারদের বল কুড়িয়ে কেটেছে সময়। চলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যান মায়াঙ্ক ও রাহানের দাপট। এদিনই একটা মাইলফলকের দেখাও পেয়ে যান রাহানে। ভারতের সহ-অধিনায়ক চার হাজারি ক্লাবে নাম লেখালেন। ব্যক্তিগত ২৫ রান হতেই ৬২ টেস্টে ১০৪ ইনিংসে পূর্ণ হয় তার চার হাজার রান।

মনে হচ্ছিল ইন্দোরে গ্যালারিতে হাজির দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে সেঞ্চুরিটাও তুলে নেবেন রাহানে। মায়াঙ্কের সঙ্গে তার জুটিটাও বেশ জমে উঠেছিল। টাইগার বোলারদের যেন শুধুই বল করে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না! ঠিক এমনই এক দৃশ্যপটে ফের আবু জায়েদের আঘাত। সিলেটের এই বোলার বুঝিয়ে দিলেন এই উইকেটে আরেকজন পেসার নিয়ে খেলতেই পারতো দল। তাতে অন্তত কিছুটা বিশ্রাম পেতেন তিনি।

১৭২ বলে ৯টি চারে ৮৬ রান করা রাহানেকে ফেরান আবু জায়েদ। তার আগে মায়াঙ্কের সঙ্গে মিলে ভারতীয় সহ-অধিনায়ক জমা করেন ১৯০ রান। চতুর্থ উইকেট জুটির কাছেই যেন পিছিয়ে পড়ে দল! মজার ব্যাপার হলো- এর আগেও টাইগারদের বিপক্ষে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরেছিলেন সাজঘরে। একবার ৯৮ রানে আবার ফেরেন ৮২-তে!

সঙ্গী হারালেও দারুণ দাপট ছিল আগাওয়ালের। ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস গড়েই থামেন তিনি। মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে খেলেন ৩৩০ বলে ২৪৩ রানের দেখার মতো এক ইনিংস। রবিন্দ্র জাদেজার সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে তুলেন ১২৩ রান। শেষ বেলায় উমেশ যাদব-জাদেজার টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলে রান বাড়িয়ে নেন। জাদেজা ৭৬ বলে ৬০ ও উমেশ ১০ বলে ২৫ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

অধিনায়ক মুমিনুলের নেতৃত্বের দ্বিতীয় দিনটাও ভালো কাটল না। অবশ্য তিনি নিজেও তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন কোথায়? দিনভর দুই পেসার আর দুই স্পিনারকেই একটানা বল করিয়ে গেলেন। অনিয়মিত বোলারের দ্বারস্থ হলেন শেষ বিকেলে। রাহি, এবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুলের বাইরে কাউকে ভাবতে ভাবতেই দিন প্রায় শেষ! যদিও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩ ওভার বল করলেও সাফল্য পাননি।

এরমধ্যে আবু জায়েদ রাহি দুর্দান্ত বল করে আক্ষেপটাই বাড়ালেন। নিশ্চিত করেই এই টেস্টে আরও একজন পেসার বাড়তি নিয়ে খেলতে পারতো। রাহি একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট।

ইন্দোর টেস্টের ভবিষ্যৎটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ভারত জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে। কে জানে, তৃতীয় দিনেই না আবার ১-০ তে এগিয়ে যায় বিরাট কোহলির দল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:-

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫০/১০।

ভারত ১ম ইনিংস: ১১৪ ওভারে ৪৯৩/৬ (মায়াঙ্ক ২৪৩, রোহিত ৬, পূজারা ৫৪, কোহলি ০, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০*, ঋদ্ধিমান ১২, উমেশ ২৫*; ইবাদত ১/১১৫, আবু জায়েদ ৪/১০৮ ও মিরাজ ১/১২৫)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর