বদলে যাওয়ার পথও দেখালেন টাইগার কোচ

ক্রিকেট, খেলা

আপন তারিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ইন্দোর (ভারত) থেকে | 2023-08-24 21:45:05

ইন্দোর টেস্টের ভবিষ্যৎটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। এ কারণেই হোলকার স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঠিক চেনা গেল না তাকে। সদা হাস্যময় রাসেল ডমিঙ্গোকে কেমন যেন বিবর্ণ দেখাল। হাসি উধাও। বাস্তবতার জমিনে পা রেখে অনেক সত্য অকপটে মেনে নিয়েছেন। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে দল যখন ভয়াবহ চাপে তখন বাংলাদেশ কোচ প্রস্তুতির ঘাটতির সঙ্গে তুলে এনেছেন নানা প্রসঙ্গ।

কথাটা ভুল বলেননি রাসেল ডমিঙ্গো। নাম্বার ওয়ান দল ভারতের বিপক্ষে তাদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার সুযোগ মিলেনি। টি-টোয়েন্টি থেকে সরাসরি পাঁচ দিনের ম্যাচে। আক্ষেপ নিয়ে রাসেল ডমিঙ্গো জানাচ্ছিলেন, 'দেখুন, প্রথম টেস্ট শুরুর আগে সত্যিকার অর্থে দলটা নিয়ে কাজ করার জন্য মাত্র দুটো দিন পেয়েছি। প্রথম দিকে টি-টোয়েন্টি হওয়ার কারণে অনেকটা ফোকাস ছিল সে দিকেই। এমন কী ইমরুল কায়েসের মতো যারা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, তাদের নিয়েও কাজ করার পর্যাপ্ত সময় পাইনি।'

এ কারণেই টাইগার কোচ মনে করেন প্রথম ইনিংসটা ঠিকঠাক মতো হয়নি। দল অলআউট মাত্র ১৫০ রানে। এরপর ভারত উঠেছে রান পাহাড়ে। ৬ উইকেটে ৪৯৩। এরইমধ্যে ১ম ইনিংসে লিড ৩৪৩ রানের। টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে শুক্রবার জয়ের সুবাস পাচ্ছে স্বাগতিকরা।

অধিনায়কত্বের অভিষেকেই মনে রাখার মতো কিছুই পাচ্ছেন না মুমিনুল হক। কোচ ডমিঙ্গো অবশ্য তার শিষ্যের পাশেই দাঁড়ালেন। তিনি বলছিলেন, 'মুমিনুলের অধিনায়কত্বের অভিষেক হলো। সামনে কঠিন দিন আসছে। কিন্তু ও শান্ত ও ধীর-স্থীর একজন মানুষ। ভারতে দুটো কঠিন দিন কাটল। তবে আমি নিশ্চিত যে সামনে ও অনেক কিছু শিখবে। ওর যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে আর মুমিনুল একজন ভালো তরুণ ক্রিকেটার।'

শুক্রবার ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে দিনভর শুধু বোলিং করে গেছে বাংলাদেশ দল। ফিল্ডাররা শুধুই বল কুড়িয়েছেন। রান উৎসবে মেতে উঠে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে জয়ের দ্বারপ্রান্তে বিরাট কোহলির দল। হতাশ করা দিনটাতে চোখ রেখে রাসেল ডমিঙ্গো জানাচ্ছিলেন, 'অবশ্যই এটি একটি কঠিন দিন ছিল। অবশ্যই পুরো কৃতিত্ব ভারতের। ওরা টেস্টের প্রথম দুই দিন দাপট দেখিয়েছে। এখনো টেস্টের তিন দিন বাকি। আমরা রয়েছি খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে। তবে সুযোগ কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে মায়াঙ্কের মতো কেউ যদি বড় শতক খেলে দিতে পারে তবে দৃশ্যপট পাল্টেও যেতে পারে।'

যদিও সেটা সহজ নয়। ভারতীয় পেসাররা রয়েছেন দারুণ ছন্দে। মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা আর উমেশ যাদবদের আটকানো তো আর সহজ নয়। ১ম ইনিংসে তাদের কাছেই তো নাজেহাল হয়েছিল দল। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ একাদশ নিয়েও। ভারতীয় দলে যখন তিন পেসার বাংলাদেশে সেখানে দু'জন। সকালে আবু জায়েদ রাহির দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর আক্ষেপ যেন বাড়ল। আরেকজন পেসার দলে থাকলে মন্দ হতো না!

এই সত্যটা অনুধাবন করেন টাইগার কোচও। শুক্রবার যেমনটা বলছিলেন তিনি, 'দলের কাঠামোর দিকে নজর দেওয়া দরকার । দু'জন সিমার নিয়ে খেলা খুব কঠিন। এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই তৃতীয় পেসারের সন্ধান করা দরকার যিনি ব্যাট করতে পারেন। আমি মনে করি সাইফুদ্দিনের মতো কেউ সেটা পূরণ করতে পারে। কিন্তু ও ইনজুরির সঙ্গে লড়ছে। প্রথমে বোলিংয়ের পরে ব্যাট হাতে সাত বা আট নম্বরে খেলতে পারেন এমন একজন পেসার খুঁজতে হবে আমাদের।'

জোড়াতালি দিয়ে দল গড়ে আসলে টেস্ট জেতা যায় না। বাংলাদেশের এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ সেই সত্যটা মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, 'টেস্ট ম্যাচ জিততে আপনার একটি ভালো বোলিং ইউনিট দরকার। আমাদের চার-পাঁচ-ছয়জন বোলার দরকার। এ কারণেই ভারত এতো সাফল্য পাচ্ছে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে এবং তাদের পাঁচ থেকে ছয়জন বোলার রয়েছে। তারা যে কেনো অবস্থাতেই উইকেট তুলতে পারে। বাংলাদেশের স্পিনাররা সবসময় উইকেট তুলেছে তবে আমাদের পেস বোলারদের সুযোগ দেওয়া দরকার।'

বাংলাদেশের কোচ হিসেবে এটি দ্বিতীয় টেস্ট রাসেল ডমিঙ্গোর। প্রথমটিতে দল হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে। এবার ভারতের বিপক্ষে দল বেকায়দায়। এ অবস্থায় টেস্টে বাংলাদেশের দৈন্যের কথাই যেন উঠে এসেছে রাসেল ডমিঙ্গোর কথায়। ১১৫ টেস্ট খেলে মাত্র তেরটিতে জয়। এই ব্যর্থতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসার পথটা অবশ্য জানা আছে ডমিঙ্গোর।

হতাশা নিয়েই জানাচ্ছিলেন, ‘টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের রেকর্ডটা ভালো নয়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে যদি সিরিয়াস টেস্ট দল হতে চান তবে আমাদের কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং অধিনায়কের সঙ্গেও বসতে হবে। এখন আমি আমার দ্বিতীয় টেস্টে কয়েকজন ভালো টেস্ট খেলোয়াড়কে দেখেছি। আশা কিছু একটা পাল্টাবে।'

তবে এটা ঠিক ইন্দোরের আশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন রাসেল ডমিঙ্গো। কারণ ম্যাচটা আর হাতে নেই। তার চোখ এখনই কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর