সব ম্যাচ জিতে গ্রুপসেরা বেলজিয়াম

, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 05:52:48

বেলজিয়াম ১ : ইংল্যান্ড ০

ইংল্যান্ড বনাম বেলজিয়াম। আসলে বলা উচিত ইংল্যান্ডের রিজার্ভ বনাম বেলজিয়ামের রিজার্ভ! এই ম্যাচের আগেই দুই দলের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত। লড়াইটা ছিল শুধু গ্রুপসেরা হওয়ার। তবে সেই লড়াইয়ে উভয় দলের খুব একটা আগ্রহ যে ছিল না ম্যাচের একাদশ দেখেই তা বোঝা গেল।

আগের ম্যাচে খেলা একাদশ থেকে এই ম্যাচের দলে ইংল্যান্ডের বদল আটজন। এই বদলে ইংল্যান্ডকে ছাড়িয়ে গেল বেলজিয়াম। তাদের বদল নয়জন। রিজার্ভ বেঞ্চে শক্তির ধার কেমন সেটা যাচাই করে নিলেন যেন দু’দলের কোচ। সেই লড়াইয়ে বেলজিয়াম ১-০ গোলে হারাল ইংল্যান্ড। গ্রুপসেরার মর্যাদা নিয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লেখাল বেলজিয়াম। নকআউট রাউন্ডে বেলজিয়াম লড়বে জাপানের বিপক্ষে। আর গ্রুপের রার্নাস আপ ইংল্যান্ড নকআউট রাউন্ডে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে কলম্বিয়াকে।

বৃহস্পতিবার একই সময়ে গ্রুপের অন্য এক ম্যাচে তিউনিশিয়া ২-১ গোলে হারিয়েছে পানামাকে। পয়েন্টের হিসেবে এই ম্যাচটির কোনো গুরুত্ব ছিল না। টানা দুই ম্যাচ হেরে পানামা ও তিউনিশিয়ার বিশ্বকাপ আগেই শেষ হয়েছিল। স্রেফ নিয়মরক্ষা করতেই শেষ ম্যাচে নেমেছিল তারা।

কালিনিনগ্রাদে রিভার্জদের নিয়ে গড়া একাদশের এই ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূণ্যভাগে শেষ হলেও খেলা বিশ্লেষণ করলে একটু বেশি নম্বর পাচ্ছে বেলজিয়াম। আক্রমণে বেশি উঠে আসে তারাই। গোলের খুব কাছেও একবার চলে গিয়েছিল বেলজিয়াম। ম্যাচের ১০ মিনিটের সময় গোলপোষ্টের জটিলতার মুখে পড়ে খেই হারিয়ে বসেন ইংল্যান্ড গোলকিপার পিকফোর্ড। বল হাতে নিতে পারেননি। ছয় গজের মধ্যে পড়া সেই জটের এর-ওর পায়ে লেগে বল পেয়ে যান ব্যাটসোয়াই, পুরো শক্তি দিয়ে তিনিও বলে পা লাগাতে পারেননি, তার পায়ে ঠেলে দেয়া সেই বল জালের দিকেই যাচ্ছিল প্রায়। ঠিক তখনই শুয়ে পড়ে পা দিয়ে গোললাইনের ওপর দিয়ে বল ফিরিয়ে দেন কাহিল! নিশ্চিত গোল থেকে বেঁচে যায় ইংল্যান্ড।

শুরুর অর্ধে ইংল্যান্ড বেশিরভাগ আক্রমণে উঠে আসে ডানদিক দিয়ে। তরুণ ইংলিশ খেলোয়াড়রা মাঝমাঠ থেকে বেশ কয়েকবার বেলজিয়ামের রক্ষণভাগে পরিকল্পিত আক্রমণ শানায়। কিন্তু ফাইনাল থার্ডের বাধা ডিঙ্গাতে পারেনি। এই অর্ধে উভয় দল নিজ সীমান্তে বল নিয়ে পাসিং ফুটবল খেলে বেশকিছু সময় কাটিয়ে দেয়। বল দখলে রাখা, পাস খেলা, গোল করার চেষ্টার চেয়ে রক্ষণ সামাল দিতেই ব্যতিব্যস্ত থাকে উভয় দল।

তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলে যায় খেলার চিত্র, ধারা। ৫১ মিনিটের সময় তিয়েলেমান্স সামনের দিকে বল বাড়ান। ডি বক্সের কোনায় থাকা আদনান ইয়ানুজাই সেই বল নিয়ে বাম পায়ে কাট করে সামনে থাকা ডিফেন্ডারকে সরিয়ে দেন। শট নেয়ার জায়গা করে সেখান থেকেই বাম পায়ে ধনুকের মতো বাঁকানো শট নেন কর্নার পোষ্টে। ইংলিশ গোলকিপার পিকফোর্ড শূণ্যে লাফিয়ে উঠে গোল বাঁচাতে পারেননি গো...ও...ল!

তরুণ এই ফুটবলারের বেলজিয়ামের হয়ে এটাই প্রথম গোল। গোলের পর ইংল্যান্ডের খেলায় নড়াচড়া বাড়ে। গোল শোধের চেষ্টায় ঝাঁপায় তারা। ডাগআউটে বসে থাকা ইংল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক হ্যারি কেনকে দেখা দেখা গেল মাঠে নামার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। হ্যারি কেন শেষ পর্যন্ত মাঠে নামেননি। ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগটা ইংল্যান্ড হারায় ৬৬ মিনিটে।

ইংল্যান্ডের তরুণ ষ্ট্রাইকার রাশফোর্ড অফসাইড ফাঁদ এড়িয়ে রক্ষণে ঢুকে বল পায়ে নিয়ে বেলজিয়াম গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। হাতের তালুতে বল লাগিয়ে নিশ্চিত গোলটা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বেলজিয়াম গোলকিপার কোর্টিওস। এরপর আর ইংল্যান্ড বেলজিয়ামের রক্ষণভাগকে বিপদে ফেলার মতো আক্রমণ করতেই পারেনি। উল্টো ম্যাচের একেবারে শেষের দিকে লিড বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল বেলজিয়াম। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের এক গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়েছে।

বিশ্বকাপের লড়াইয়ে বেলজিয়াম এই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারাল। তবে বড় সাফল্য হল গ্রুপের তিন ম্যাচের সবকটিতে জিতে বেলজিয়াম গ্রুপসেরা হয়ে নকআউট রাউন্ডে উঠে এল।

বিশ্বকাপের ফেভারিটদের তালিকায় এখন আপনি বেলজিয়ামের নামটা বড় অক্ষরে লিখতেই পারেন!

এ সম্পর্কিত আরও খবর