টেস্টে টাইগারদের উন্নতির জন্য কোহলির টিপস

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 16:39:57

বড় স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নেমে ছিল ক্যাপ্টেন মুমিনুল হকের বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। ইন্দোরে গড়ে তোলা যায়নি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। হার ইনিংস ও ১৩০ রানে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে গোলাপি বলের ডে-নাইট টেস্টেও সেই একই ফল। এবার ইনিংস ও ৪৬ রানের অসহায় আত্মসমর্পণ। বড় একপেশে ও একতরফা টেস্ট সিরিজে উৎসব করল কেবল ভারত। এবং সেটা তিন দিনেই।

কিন্তু কেন এমন নাজুক অবস্থা?

ভারতীয় ক্যাপ্টেন কোহলি কারণটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, অভিজ্ঞতার অভাবই হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্বলতার সবচেয়ে বড় কারণ, ‘দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটারকে বাইরে রেখে মাঠে লড়ে গেছে তারা। সাকিব নেই, নেই তামিমও। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর মতো শুধু দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়ে আপনি দলের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন না। দলের বাকি ক্রিকেটাররা তরুণ, তারা এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছে কেবল।’

লাল বলের লড়াইয়ে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার তাগিদও দিলেন কোহলি, ‘তারা (বাংলাদেশ) যত বেশি টেস্ট খেলবে তত বেশি অভিজ্ঞ হবে। দুটি টেস্ট খেলার দেড় বছর পর ফের টেস্ট খেলতে নামলে আপনি কখনো বুঝতে পারবেন না মাঠের লড়াইয়ে চাপ কী করে মোকাবেলা করতে হয়।’

টাইগার ক্রিকেটারদের মেধা ও যোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কোহলির। তবে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেনের মতে, খেলোয়াড়রা ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণকে গুরুত্ব দিলেই আসবে অগ্রগতি, ‘দক্ষতার কোনো কমতি নেই। তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলছে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে। তবে এখন তাদের ম্যাচের পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। কি ভাবে আরও ভালো করা যায় সেটাও চিন্তা করতে হবে। এবিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। বোর্ড ও খেলোয়াড়দেরকে টেস্টের গুরুত্ব বুঝতে হবে। এটা হলেই আপনি টেস্ট ক্রিকেটে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।’

টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতিতে বোর্ডকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন কোহলি, ‘ক্রিকেটাররা একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ড এটা কিভাবে সামলাচ্ছে, সেটাই বড় ভূমিকা রাখে।’

কেবল আবেগ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটার টিকিয়ে রাখা যায় না। তার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই জরুরি কোহলির কাছে, ‘টেস্ট ক্রিকেটে শক্তির জায়গাটা পুরোপুরি আর্থিক কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। টেস্ট ক্রিকেটাররা আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চার ওভার বোলিং করে দশ গুণ বেশি আয় করা যায়।’

কোহলি আরো যোগ করেন, ‘ক্রিকেটাটা আপনার জীবিকা। ৫-৬ বছর পর আপনি আর খেলে যাওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাবেন না। আপনি তখন কেবল টি-টোয়েন্টি খেলতে চাইবেন। এ সমস্যাটা কেন্দ্রীয় চুক্তি দিয়ে সমাধান করা যায়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড দীর্ঘ দিন ধরে শক্তিশালী। কারণ তাদের চুক্তির কাঠামোর ভিত্তির মূলেই রয়েছে টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের বাকি সংস্করণের চেয়ে টেস্টকে তারা বেশি গুরুত্ব দেয়।’

কোহলি মনে করেন, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে টেস্ট ক্রিকেটাররা খেলায় মনোযোগী হয়। ঠিক এ বিষয়টির সুফল পেয়েছে ভারত, ‘টেস্ট ক্রিকেটারদের নিবেদিত করতেই আমরা পরিবর্তন এনেছি। এতে ক্রিকেটাররা বুঝতে পারছে খেলায় নিবেদিত হলে একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ পাবে তারা।’

আবেগটা একটা সময় মূল্যহীন হয়ে পড়বে। সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে খেলোয়াড়দের। ভারতকে টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া অধিনায়ক কোহলি জানান তেমনটাই, ‘প্রেরণা ও আবেগের সঙ্গে যৌক্তিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে ক্রিকেটারদের। আর্থিক দিক ভুলে যদি শুধু আবেগ দিয়ে খেলতে বলেন, তাহলে একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জন্য খেলাটা মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ একজন ক্রিকেটারের পক্ষে অন্য কোনো চাকরি খুঁজে বের করা কঠিন। হয়তো সে কোনো কাজই পাবে না। কারণ সে কেবল ক্রিকেটই খেলতে জানে। এ সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। তার ফল আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর