টাইব্রেকার লটারিতে শেষ আটে ইংল্যান্ড, কলম্বিয়া নকআউট!

, খেলা

এম. এম. কায়সার ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 11:12:39

ইংল্যান্ড ১ (৪) : কলম্বিয়া ১ (৩)

এই বিশ্বকাপ তাহলে সব উত্তেজনা জমিয়ে রেখেছে ম্যাচের শেষ মিনিটের জন্যই?

যখন মনে হচ্ছে খেলা শেষ প্রায় , ঠিক তখনই মুহূর্তের মধ্যেই বদলে যাচ্ছে ম্যাচের চিত্র। ইনজুরি টাইমে গোল হচ্ছে। শেষ মিনিটে গোল হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড বাকি তখনই গোল! শেষ মিনিটের সেই নাটকীয়তা দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচটায় আরেকবার দেখল রাশিয়া বিশ্বকাপ। দ্বিতীয়ার্ধে স্ট্রাইকার হ্যারি কেনের পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে ইংল্যান্ড ম্যাচ প্রায় জিতেই যাচ্ছিল ১-০ গোলে। কিন্তু ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা খাদের কিনার থেকে দলকে উদ্ধার করেন। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়।

ত্রিশ মিনিটের এই সময়টায় উভয় দল গোলের সুযোগ নষ্ট করে। ম্যাচের ফয়সালা হয় টাইব্রেকারের লটারিতে। যে লটারিতে এর আগে কখনোই বিশ্বকাপে জেতেনি। এবার জিতল! টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে এই ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এল ইংল্যান্ড। আর বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল কলম্বিয়া।

নকআউট ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যাওয়া মানেই ইংল্যান্ডে জয়ের পরিসংখ্যান ভীষণ নড়বড়ে। আর সেই ম্যাচ আবার যদি টাইব্রেকারে গড়ায় তবে তো আরও কাহিল রেকর্ড। এর আগে ইংল্যান্ড তিনটি বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে গড়ানো নকআউট ম্যাচ থেকে নকআউট হয়। সেই দুভার্গ্য থেকে এবার বেরিয়ে এল। জ্বি, আপনি ভুল পড়ছেন না-টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচও ইংল্যান্ড জিততে পারে!

প্রশ্ন উঠতে পারে বিরতির পর কি খেয়ে এই ম্যাচে নেমেছিল কলম্বিয়া?

-রাগের ট্যাবলেট! মাঠে খেলা বা গোল করার চেয়ে ধাক্কাধাক্কি এবং কুস্তিগিরিই যে বেশি করল তারা। রেফারির সঙ্গে তর্কাতর্কিতে কম গেল না তারা। ফলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাই হল। পেনাল্টি! সেই পেনাল্টি থেকে হ্যারি কেনের গোলে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের রঙিন স্বপন দেখছিল। নির্ধারিত সময়ের ইনজুরি টাইমে ‘হেড স্পেশালিষ্ট’ ইয়েরি মিনার গোলে কলম্বিয়া  ম্যাচে সমতা নিয়ে আসে। এই বিশ্বকাপে মিনার গোলসংখ্যা তিনটি। এই তিনটির সবগুলোই এসেছে হেড থেকে! তবে গোলের হিসেবে এই ম্যাচকে স্মরণীয় রাখবেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন। চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ছয় গোলের মালিক এখন তিনি। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে করা স্বদেশি ষ্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকারের ছয় গোলের রেকর্ডে ভাগ বসালেন হ্যারি কেন।

এই বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে কর্নার বা ফ্রিকিক নেয়ার আগে দেয়াল তৈরি করে দাড়ানো খেলোয়াড়দের রেফারি বারবার সতর্ক করে দেন; কেউ যেন কারো শরীর ধরে কাউকে আটকে না রাখেন। রেফারির সেই সতর্কতা সত্ত্বেও কলম্বিয়ার খেলোয়াড়রা প্রতিটি ফ্রিকিক ও কর্নারের সময় অহেতুক ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে ঝামেলা পাকান। বলা যায় বিপদ ডেকে আনেন।

এই ম্যাচে কলম্বিয়ার হারের কারণ যত না ফুটবলীয় তারচেয়ে অনেক বেশি ঐ ‘অ-ফুটবলীয় আচরণ! দ্বিতীয়ার্ধে কর্নারের সময় সানচেজ ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেনকে জড়িয়ে ধরেন। সামনে বাড়তে চেষ্টা করায় তিনি প্রায় তার ঘাড়ের ওপরই চড়ে বসে তাকে মাটিতে ফেলে দেন। পুরোদুস্তর কুস্তিগিরি আর কি! রেফারি পাশে দাড়িয়ে পুরো দৃশ্য দেখেন। পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে স্পটকিকের নির্দেশ দেন। পুরো কলম্বিয়া দল রেফারির সঙ্গে এই সময় তর্কে জড়িয়ে পড়ে। অধিনায়ক ফ্যালকাও কোথায় তার খেলোয়াড়দের থামাবেন; তা না তিনি নিজেই রেফারিকে প্রায় মারতে ছুটেন! ম্যাচের ৬৫ মিনিটের মধ্যেই রেফারি সবমিলিয়ে উভয় দলের সাতজন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন। ভাগ্য ভাল যে দু’য়েক জন লালকার্ড পাননি! শুধু কুস্তি নয়, মাথা দিয়ে গুতোঁগুতির দেখাও মিলে এই ম্যাচে!

তবে দ্বিতীয়ার্ধেরর শুরুতে পিছিয়ে পড়ার পর কলম্বিয়া ম্যাচে ফিরে আসার যে তাড়া দেখায় সেটাই জমিয়ে তোলে এই ম্যাচকে। আক্রমণের তোড়ে ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগকে অস্থির করে তোলে। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে এসে কলম্বিয়ার সব পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে। স্ট্রাইকিং পজিশনে একক কারিশমায় বল ড্রিবলিং করে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাবেন-এমন সৃজনশীল খেলোয়াড় কই এই দলে? কুদরাদো, কুইনটোরো ও ফ্যালকাও চেষ্টা করেন তবে কেউ ফিনিসার হতে পারেননি। এই ম্যাচে হামেস রদ্রিগেজকে মিস করে কলম্বিয়া। পায়ের পেশির চোট এখনো সারেনি তার। পুরো ম্যাচটা গ্যালারিতে বসে দেখেন কলম্বিয়ার এই তারকা।

কলম্বিয়ার ম্যাচ পরিকল্পনাই ছিল খেলাটা যাতে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। অন্তত সময় যেভাবে নষ্ট এবং ক্ষেপণ করছিল কলম্বিয়া তাতে মনে হচ্ছিল এই ম্যাচের ফল টাইব্রেকারে ফয়সালা করতেই তাদের বেশি পছন্দ।

সেই পছন্দের মুল্য দিতে হয় তাদের ম্যাচ হেরে। টাইব্রেকার লটারি ঠিকই লেগে গেল ইংল্যান্ডের ভাগ্যে!

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর