ইংল্যান্ডকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

, খেলা

আপন তারিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 18:32:29

ক্রোয়েশিয়া ২: ইংল্যান্ড ১

স্বপ্নের মতো এক শুরু। ম্যাচের ৫ মিনিটেই লিড। মনে হচ্ছিল, ১৯৬৬ সালের পর ফের বুঝি বিশ্বকাপ ট্রফি তার 'দেশে' ফিরছে! কিন্তু সেই ব্যবধানটা ধরে রাখতে পারল না ইংল্যান্ড। এরপর ক্রোয়েশিয়া ছন্দে ফিরতেই গ্যালারিতে চুপসে গেল ব্রিটিশ হুলিগানরা। ক্রোয়াটরা সমতা ফেরাল ম্যাচে। অল ইউরোপিয়ান এই সেমিফাইনালে নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে সমতা। কিন্তু কে জানতো, এরপর অতিরিক্ত সময়ে ঝড় তুলবে ক্রোয়েশিয়া? বুধবার রাতে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে যোগ্য দলটাই জিতেছে। ১০৯ মিনিটে মারিও মানজুকিচের অসাধারণ এক গোলে অতিরিক্ত সময়ে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। এই গোলই দেশটির সোনালী প্রজন্মের ফুটবলারদের সামনে খুলে দেয় স্বপ্নের দরজা। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া!

১-২ গোলের হারের আক্ষেপ নিয়েই ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভাঙল ইংল্যান্ডের। আর ক্রোয়েশিয়া উঠে গেল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে! ইংল্যান্ড এখন তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে বেলজিয়ামের। যারা প্রথম সেমিফাইনালে হেরেছে ফ্রান্সের কাছে।

১৫ জুলাই বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতার হাতছানি লুকা মডরিচদের সামনে! সঙ্গে আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাস। বুধবার পিছিয়ে পড়েও ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে দল হারাল ২-১ গোলে। বিশ্বকাপের সেমিতে প্রথমে গোল করে হারের সবশেষ রেকর্ড ইতালির। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এগিয়ে গিয়ে তারা হেরেছিল টাইব্রেকারে।

বুধবার ম্যাচের শুরুতে উড়ন্ত সূচনা হয় থ্রি লায়ন্সদের। সেমিফাইনালের পঞ্চম মিনিটেই গোল! কিয়েরন ট্রিপারের অসাধারণ ফিনিশিং! জেস লিনগার্ডের ফ্লিকে বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান ডেল আলি। তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন লুকা মডরিচ। ব্যস, বক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় ইংল্যান্ড। ২০ গজ দূর থেকে নেয়া বাঁকানো ফ্রি কিকে গোলকিপার দানিয়েল সুবাসিচকে পরাস্ত করে দেখার মতো গোল ট্রিপারের। যেন ২০০৬ সালে ডেভিড বেকহামের সেই গোলের কথা মনে করিয়ে দিলেন। ফ্রিকিক থেকে বেকহ্যামের পর এটাই সরাসরি প্রথম গোল ইংলিশদের।

এরপর ম্যাচের ২২তম মিনিটে ইভান স্ত্রিনিচের ভুল পাসে বল পেয়ে যান রাহিম স্টার্লিং। বল বাড়িয়েছিলেন হ্যারি কেইনের কাছে। কিন্তু তিনি অফসাইডে থাকায় বড় বাঁচা বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া। না হলে ০-২ গোলেই পিছিয়ে পড়তে পারতো। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষে মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু ফিরেই দাপুটে ফুটবল খেলতে থাকে ক্রোয়াটরা। ৬৫তম মিনিটে গোলের সুযোগও এসে যায়। কিন্তু ডি-বক্স থেকে ইভান পেরিসিচের ইংলিশ রক্ষণভাগের দেয়াল ভাঙ্গতে পারেনি। তবে ৬৮ মিনিটে ঠিকই সমতা ফেরায় তারা। সিমে ভারসালকোর ক্রসে লাফিয়ে উঠে পা ছুঁইয়ে দেন ইভান পেরিসিচ (১-১)।

চার মিনিট পর এগিয়ে যেতেই পারতো ক্রোয়েশিয়া। পেরিসিচের শট পিকফোর্ডকে পরাস্ত করলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। আক্ষেপে পুড়ে ক্রোয়েশিয়া। এরপর ৮৩তম মিনিটে মারিও মানজুকিচের দুর্দান্ত শট আরো দুর্দান্তভাবে আটকে দেন ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড।

এভাবেই শেষ হয় ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট। ফলাফল ঠিক করতে নকআউটের এই ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এরপর মারিও মানজুকিচের সেই মহামূল্যবান গোল। যা ৪৫ লাখ মানুষের দেশটিকে নিয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে। ১০৯তম মিনিটে ইভান পেরিসিচের হেডে বাড়ানো বল পেয়ে বাঁ-পায়ে শট মানজুকিচের, বল চলে যায় ইংল্যান্ডের জালে। ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপে ডেভর সুকাররা দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। আর এবার সোনালী প্রজন্মের ফুটবলারদের হাত ধরে দল উঠে গেল ফাইনালে!

অন্যপ্রান্তে ৫২ বছর আবারো ট্রফি জয়ের কাছাকাছি এসেও ফিরে যেতে হল ইংল্যান্ডকে। আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়েন হ্যারি কেইনরা। তিনি অবশ্য ৬ গোল করে রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে গোল্ডেন বুট জেতার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। কিন্তু আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফিরবেন তিনি। ট্রফি যে সোনার হরিণ হয়েই থাকল!

এ সম্পর্কিত আরও খবর