দাপুটে ক্রিকেটে ফাইনালে মুশফিকের খুলনা

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 15:29:10

একের পর এক উইকেট পতন! টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেন উইকেটে আসা-যাওয়ার দায়টুকু সারছিলেন। অথচ সামনে ছিল সহজ সমীকরণ-যারা জিতবে তারাই পেয়ে যাবে ফাইনালের টিকিট। এমন লড়াইয়ে এক শোয়েব মালিক ছাড়া রাজশাহী রয়্যালসের কাউকে চেনা গেল না। তাদের উড়িয়ে সবার আগে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে খুলনা টাইগার্স।

মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সোমবার কোয়ালিফায়ারে ২৭ রানে জয় তুলে নেয় মুশফিকুর রহিমের দল।

মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস ভাগ্য ছিল রাজশাহীর পক্ষে। তারা প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় খুলনাকে। মুশফিকুর রহিমরা ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৫৮ রান। জবাব দিতে নেমে মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে ২০ ওভারে অলআউট হয়ে ১৩১ রান তুলে রাজশাহী। 

বিপিএলে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন আমির। বাঁহাতি এই পেসার ১৭ রান নেন ৬ উইকেট। বিপিএলে এই প্রথম ৬ উইকেট পেল কোনো বোলার। 

আন্দ্রে রাসেলের দল হারলেও শেষ হয়ে যাচ্ছে না ফাইনালে উঠার সুযোগ। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বুধবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারাত পারলে রাজশাহীও পেয়ে যাবে ফাইনালের ছাড়পত্র।

চ্যালেঞ্জিং স্কোর সামনে দাঁড়িয়ে রাজশাহীর শুরুটা ছিল ভয়াবহ। মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে দিশেহারা আন্দ্রে রাসেলর দল। পাকিস্তানি এই পেসারই এলোমেলো করে দেন তাদের ব্যাটিং লাইন আপ। দলের ২ রানে সাজঘরের পথ ধরেন ইনফর্ম লিটন দাস। আমিরের বলে বোল্ড!

এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে রাজশাহী। ১০ বলে ১১ করে সেই আমিরেরই শিকার আফিফ হোসেন। অলক কাপালীকে রানের খাতা খুলতেই দিলেন না তিনি। তারপর রবি বোপারা (১) ও আন্দ্রে রাসেল (০) ফিরলে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় রাজশাহী। দলীয় ২৩ রানে শেষ ৫ উইকেট!

তারপর স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়তে চেয়েছিলেন ফরহাদ রেজা। কিন্তু শোয়েব মালিককে একা রেখে তিনিও ফিরে যান মাত্র ৩ রানে। এরপর তাইজুল ইসলামকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন শোয়েব। কিন্তু দলকে জেতানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না!

তবে শোয়েব তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে এই উইকেটে কেমন করে খেলতে হয়। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। তাইজুল করেন ২৩ বলে ১২। দু'জন মিলে গড়েন ৭৪ রানের জুটি। আমির বল হাতে নিয়েই ভেঙে দেন জুটি। ৬ উইকেট শিকার করেন এই পাকিস্তানি। তার বোলিং ফিগারটা দেখার মতো ৪-০-১৭-৬!

একা লড়াই করে ৮০ রান তুলে ফেরেন শোয়েব। খেলেন মাত্র ৫০ বলে। জাতীয় দলের সতীর্থ আমিরের শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে দাপট দেখালেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের ম্যাচেই শতরানে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। খেলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। এবার যেন সেই ছন্দ নিয়েই লড়লেন। দল যখন ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে তখন ধরে রাখলেন ছন্দ।

মেহেদী হাসান মিরাজ (৮) ও রাইলি রুশো (০) দ্রুত ফিরলে শামসুর রহমানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন শান্ত। জুটি জমে উঠতেই রোবি বোপারার বোলিংয়ে ফিরে গেলেন শামসুর রহমান (৩১ বলে ৩২)।

শান্ত ফিফটি তুলে নেন ৩৬ বলে। মুশফিক খেলতে থাকেন দেখে-শুনে। মিরপুরের উইকেটে মনে হচ্ছিল রান তোলাটা সহজ কাজ নয়! ১৬ বলে ২১ রান করে রিটায়ার্ট হার্ট মুশফিক। নজিবুল্লাহ জারদান ৫ বলে ১২ রানে অপরাজিত। আগের ম্যাচের মতো এখানেও ঝড় তুলে হাসিমুখে মাঠ ছাড়েন শান্ত। ৫৭ বলে তার ব্যাটে ৭৮ রান। ইনিংসে ছিল চার ছক্কা ও সাতটি বাউন্ডারি!

রাজশাহীর হয়ে ৪ ওভারে ১৩ রানে ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ ইরফান। তবে ম্যাচসেরা আরেক পাকিস্তানি মোহাম্মদ আমির। যিনি বল হাতে রীতিমতো আগুন ঝরালেন!

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৫৮/৩ (শান্ত ৭৮*, মিরাজ ৮, রুশো ০, শামসুর ৩২, মুশফিক ২১ আহত অবসর, জাদরান ১২*, ইরফান ২/১৩, বোপারা ১/২৪)
রাজশাহী রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৩১/১০ (লিটন ২, আফিফ ১১, মালিক ৮০, কাপালী ০, বোপারা ১, রাসেল ০, রেজা ৩, তাইজুল ১২, রাব্বি ১১*, আবু জায়েদ ৭, ইরফান ০; আমির ৬/১৭, ফ্রাইলিঙ্ক ১/২৯, মিরাজ ২/৬)
ফল: খুলনা টাইগার্স ২৭ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ আমির

এ সম্পর্কিত আরও খবর