পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের নতুন মুখ হাসান মাহমুদ। সদ্য শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএলে বল হাতে গতির ঝড় তুলে নির্বাচকদের নজর কাড়েন এ উদীয়মান পেসার। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে মোবাইলে এ তরুণ তুর্কিকে সুখবরটি দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এরপর থেকেই তার পরিবার যেন ভাসছে ঈদ উৎসবের আমেজে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটা ভাইরাল হতেই অভিনন্দন বার্তায় ভেসে চলেছেন হাসান। জাতীয় দলে হাসানকে নিজেদের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে পেয়ে লক্ষ্মীপুরে যেন বয়ে চলেছে খুশীর জোয়ার।
সদ্য শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে হাসান মাহমুদ ১৩ ম্যাচে শিকার করেন ১০ উইকেট। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। বিপিএলে তিনি নিখুঁত লাইন ও লেন্থের পাশাপাশি গতি দিয়ে বেশ আলোচিত হন। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪২.৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করার রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। আর টুর্নামেন্টে ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন নিয়মিত।
হাসান লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. ফারুক ও গৃহিনী মাহমুদা খাতুন রানীর ছোট ছেলে। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। ভবিষ্যতে সাফল্য কামনা করে তার মা-বাবা লক্ষ্মীপুরসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে হাসান খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শিকার করেন ৩ উইকেট। তখন তার বোলিংয়ের প্রশংসা করে ‘ভবিষ্যৎ তারকা’ লিখে টুইট করেছিল আইসিসি। ক্রিকেট খেলায় মা-বাবার পাশাপাশি তার অনুপ্রেরণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোচ মনির হোসেন। ক্রিকেট খেলায় তার হাতে খড়ি এই কোচের কাছ থেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ক্রিকেট একাডেমিতে কোচ মনিরের সঙ্গে হাসানের পরিচয় ২০১২ সালের শেষ দিকে। মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবেই শুরু হাসানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। প্রথম থেকেই তার রান-আপ, জাম্প এন্ড গেদার, ব্যাকফুট, ল্যান্ডিং, রিলিজ, বোলিং স্পট ও ফলো থ্রো ভালো ছিল। বিকেএসপিতে সুযোগ পাওয়ার পর তার বোলিংয়ের গতি বেড়ে যায়।
হাসানের বাবা মো. ফারুক জানান, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় হাসানের আগ্রহ ছিল। মাঝে মধ্যে খেলার মাঠ থেকে পরীক্ষা দিতে যেত সে। অবসর সময়ে ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত থাকত। দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। আশা করছি, ভালো বোলিং করে সে দেশের সুনাম বাড়াতে সক্ষম হবে।'
জানতে চাইলে হাসান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বিপিএলে অভিজ্ঞ কোচের প্রশিক্ষণ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে পেরে অনেক কিছু শিখেছি। আল্লাহর রহমতে ৪ উইকেট পেয়ে একটি ম্যাচে সেরা হয়েছি। এটা আমার বড় পাওয়া। জাতীয় দলে সুযোগের বিষয়টি বিসিবি থেকে আমাকে মোবাইলে জানিয়েছে। তাৎক্ষণিক আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে মা-বাবা, কোচ ও বন্ধু-বান্ধবকে এই সুখবরটি জানাই। সবাই এতে খুব খুশি হয়েছে। দেশের জন্য নিজের সেরাটা খেলার জন্য চেষ্টা করব। এজন্য লক্ষ্মীপুরসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।'
হাসান আরও যোগ করেন, ‘বিপিএল শেষে লক্ষ্মীপুরে এসেছি। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিসিবি-র ডাক পেয়ে ঢাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতদিন জাতীয় দলে খেলার সুযোগের অপেক্ষা ছিলাম। সেটি পেয়েছি, মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।’
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে বিসিবি-তে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে হাসানের।
২০১৩ সালে বিসিবি আয়োজিত জেলা অনূর্ধ্ব-১৪ দলের টুর্নামেন্টে বান্দরবানে বিভাগীয় পর্যায়ে রাঙামাটি ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যকার ম্যাচে অভিষেক হয় হাসানের। ২০১৫ সালে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। তখনই ভারতের বিপক্ষে খেলে ১৫ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। এবং বাংলাদেশকে উপহার দেন জয়। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২০১৭ সালে এশিয়া কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেলেও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি।