নাজমুলের মন্তব্য চিন্তাপ্রসূত নাকি বাস্তবতা?

, খেলা

 এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-13 12:36:49

২০ জুলাই রাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন ছোটখাটো একটা ভুমিকম্প শুরু হয়েছে! বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আনুসঙ্গিক আরো কিছু যে মন্তব্য করেছেন-সেটাই হোলদোল তৈরি করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে!

নাজমুল জানান-বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট খেলতে অনাগ্রহী! এই প্রসঙ্গে তার সম্পূর্ণ উক্তিটি এমন- ‘আমাদের দেশে এখন বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় আছে, যারা টেস্ট খেলতে চাচ্ছে না। সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না। মুস্তাফিজ খেলতে চায় না। বলে না যে খেলবে না, কিন্তু এড়িয়ে যেতে চায়!’

মুস্তাফিজের প্রসঙ্গে তিনি আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখায় ঠিক এভাবে বললেন-‘ হয়তো ও (মুস্তাফিজ) চোটপ্রবণ বলেই চায় না। আসলে টেস্ট খেলা বেশ কঠিন। রুবেল অনেকদিন খেলে ফেলেছে। সে কারণে সেও হয়তো চায় না।’

বিসিবি সভাপতি যখন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে এই তিন ক্রিকেটার সম্পর্কে এই মন্তব্য করলেন তখন এই তিনজনেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রয়েছেন। ওয়ানডে সিরিজে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই তিন ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব আল হাসান এবং রুবেল হোসেন দুজনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে খেলেন। সাকিব তো আবার বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক। প্রশ্ন হল এই দুজনেই যদি বিসিবি সভাপতিকে টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে নিজেদের এমন অনীহা বা অনাগ্রহের কথা বলে থাকেন তবে কেন তাদেরকে টেস্ট দলে জায়গা দেয়া হল? তবে কি বিসিবি  তাদের এই টেস্ট সিরিজটা ফেয়ারওয়েল হিসেবে খেলতে দিয়েছে? নাকি বিসিবির সামনে এদের কোন বিকল্প নেই জেনে বাধ্য হয়ে তাদের টেস্ট দলে রেখেছে?

প্রশ্ন আরও অনেক রয়েছে। এই তিনজন কি টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তাদের ইচ্ছের কথাটা শুধুমাত্র এককভাবে বিসিবি সভাপতির কাছে প্রকাশ করেছিলেন? নাকি তারা বিসিবির কাছে লিখিতভাবে কোন আবেদন করেছেন যাতে তাদের আর টেস্ট ক্রিকেটে বিবেচনা না করা হয়? তেমন যদি কিছু হতো তবে সবার আগে তো তাদের এই মনোভাবের কথা ক্রিকেট দলের নির্বাচকদের কাছে পৌঁছানো জরুরি ছিল। কারণ নির্বাচকরা দল গড়েন। এই সময়ের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সাকিব বাংলাদেশ দলের জন্য অন্যতম অপরিহার্য ক্রিকেটার। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে রুবেল হোসেনও যদি বলেন- টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আামি আগ্রহী নই এবং তারপরও তাকে নির্বাচকরা দলে রাখেন তাহলে তো সমস্যা যতখানি না রুবেলের তারচেয়ে অনেক বেশি বিসিবির!

যে ঘোড়ার রেসে দৌঁড়াতে অনীহা, অনাগ্রহ; তাদের নিয়ে আপনি দৌড়ে জেতার স্বপ্ন কেন দেখবেন? তাদের এই অনীহা সত্ত্বেও কেন বিসিবি তাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হিসেবে দলে রেখেছে?

বিসিবি সভাপতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সর্বময় কর্তা। তিনি যখন কোন মন্তব্য করবেন তখন তার সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে-সেটাও তিনি অতি অবশ্যই জানেন। তাই এই তিন ক্রিকেটারের টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে অনাগ্রহের যে কথা তিনি বলেছেন তার নিশ্চয়ই বাস্তবতা রয়েছে। তবে এখানে বিতর্কও আছে। তার মন্তব্যের শেষাংশটুকুই এই বিতর্ক তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন-‘ বলে না যে খেলবে না, কিন্তু এড়িয়ে যেতে চায়!’

তার মানে এই তিন ক্রিকেটারের টেস্ট ক্রিকেটে অনীহা সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন সেটা নেহাৎ তার একটা মনো জাগতিক ধারণা। চিন্তাপ্রসূত উদ্ভাবনী শক্তির সমাহার!

তাই কি?

এ সম্পর্কিত আরও খবর