সত্যিকার অর্থেই যেন ম্যাচটা দুলছিল নাগরদোলায়! বারবার বদলে যাচ্ছিল ম্যাচের রং। কখনো বাংলাদেশের পক্ষে। তো খানিকবাদে ফের ভারতের দিকে হেলে পড়ছিল ফাইনাল। হেলদোলের সেই ফাইনাল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিতল বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে।
ম্যাচে বৃষ্টি আইনের প্রয়োগ করতে হলো। শেষের দিকে বৃষ্টিতে খানিকক্ষণ খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের টার্গেট বদলে গেল। শেষ ৩০ বলে জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়াল ৭ রানের। সহজেই সেই টার্গেট গেল বাংলাদেশ ২৩ বল হাতে রেখে।
অধিনায়ক আকবর আলী বুক চিতিয়ে লড়ে দলকে জেতালেন। তৈরি করলেন অধিনায়কত্বের দুর্দান্ত এক উদাহরণ। দেখালেন ধৈর্য্য নিয়ে ব্যাট করলে সঙ্কটের গর্ত থেকে তুলেও দলকে জেতানো যায়। আকবর আলীর অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্থায়ী আনন্দের জায়গা করে নিল!
জয়ের জন্য মাত্র ১৭৮ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুতেই এগিয়ে গেল অনেকদূর। বিনা উইকেটে স্কোর গিয়ে পৌঁছাল ৫০ রানে। কিন্তু সেই আনন্দ খানিকবাদেই উড়ে গেল। পরের ১৫ রানেই নেই ৫ উইকেট! হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে ২৫ রান করা ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনও তখন রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন। লেজের ব্যাটসম্যান অভিষেক দাসকে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক আকবর আলী লড়াই চালিয়ে গেলেন। দলের ১০২ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকের আউটের পর চোট নিয়েই ফের মাঠে এলেন ওপেনার পারভেজ। অধিনায়ক আকবর ও পারভেজের এই জুটি বাংলাদেশকে ট্রফি জয়ের স্বপ্নের পথে রাখল। কিন্তু পারভেজ তার ধৈর্যশীল ৭৯ বলে ৪৭ রান করে আউট হতেই ফের ম্যাচ চলে গেল ভারতের মুঠোয়। তখনো ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের চাই ৩৫ রান। হাতে ওভার বাকি ১৮টি। কিন্তু উইকেটে কার্যকর ব্যাটসম্যান বলতে গেলে কেবল একজন-অধিনায়ক আকবর আলী।
ম্যাচ জয়ের স্বপ্নটা সবুজ করে বাংলাদেশের দুরন্ত বোলিং। পুরো ফাইনালে বাংলাদেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চমকপ্রদ বোলিং করল। দলের তিন পেসার শরিফুল, তানজিম ও অভিষেক ধসিয়ে দিলেন টুর্নামেন্টে ভারতের বিখ্যাত লাইনআপকে।
ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং বাংলাদেশের পরিকল্পিত বোলিং আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। টানা ১৩ ম্যাচের পরে এই প্রথম ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ এই দলটি কোন ম্যাচে অলআউট হলো। অভিষেক দাস তার ৯ ওভারে ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বল হাতে দলের সেরা পারফর্মার। কম যাননি দলের বাকি দুই পেসারও। শরিফুল ১০ ওভারে ৩১ রান খরচায় তুলে নেন ২ উইকেট। তানজিম হাসান সাকিবের শিকার ২৮ রানে ২ উইকেট।
ফিল্ডিংয়ের পুরোটা সময় জুড়ে বাংলাদেশ মাঠে যেন বিদ্যুৎ ছড়াল! একটি ক্যাচও মাটিতে পড়ল না। বৃত্তের মধ্যে ফিল্ডিং হলো এ প্লাস। দুটো রান আউট ধসিয়ে দিল ভারতের ইনিংসকে।
শেষ ৭ উইকেট হারায় ভারত মাত্র ২১ রানের মধ্যে। ৩৯.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৬ রান থেকে ধসে ইনিংস শেষ ১৭৭ রানে! ইনিংসের শুরুতেও ভারতের রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডের স্বাস্থ্য ছিল দুর্বল। ইনিংসের মাঝপথেও সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। ওপেনার যশপাল একপাশ আঁকড়ে রেখে খেলেন ৮৮ রানের ইনিংস। তাতেই ভারতের স্কোর দেড়শ’র ওপরে গিয়ে পৌছায়।
ভারতের ইনিংসের শেষভাগ খড়কুটোর মতো উড়ে গেল! কোটার পুরো ওভারও খেলতে পারল না তারা। ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রানে শেষ ভারতের ইনিংস।
এত কম রান নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে বোলিংয়ের শুরুতেই বিস্ময়কর কিছু করে দেখাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা হলো এতই অনবদ্য যে ভারতকে ফাইনাল হারার ভয় পেয়ে বসল! এলোমেলো বোলিংয়ে প্রচুর অতিরিক্ত রান খরচা করল ভারত।
স্পিনার রবি বিশ্নয় আক্রমণে এসেই ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন। চটজলদি চার উইকেট শিকার করে এই লেগস্পিনার বাংলাদেশের ইনিংসে ভীতি ছড়ালেন। অধিনায়ক আকবর আলীর ব্যাটে সেই ভয় তাড়িয়ে বাংলাদেশ দারুণ লড়লো। এবং জিতল।