সাকিব, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং সুখী সময়!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-13 19:28:13

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জাতীয় দলের হয়ে সাকিব আল হাসান আসছেন সেই ২০০৭ সাল থেকে।

আহা কি আনন্দেরই না ছিল এক দশক আগের সেই ক্যারিবিয়ান সফর! বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখ। বিশ্বকাপের সুপার এইটে খেলার মর্যাদা পাওয়া।

আনন্দভরা সেই সফরের বছর দুই পরে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে খেলতে আসেন সাকিব। সেই সফরও যে পুরোটাই সুখে ভরপুর!

ইনজুরিতে পড়া মাশরাফির জায়গায় সাকিবের অধিনায়কত্বেই টেস্ট- ওয়ানডে দুই সিরিজ জিতে সেবার বাংলাদেশ। বিদেশির মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের প্রথম আনন্দ ছিল সেটা। শুধু অধিনায়কত্ব নয়, ব্যাটে-বলে সাকিব সেই সফরে ছিলেন অন্যতম সেরা পারফর্মার।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকে শুধু যে সুখ নিয়ে ফিরেছেন সাকিব, তাও কিন্তু নয়। ২০১৪ সালে কোচ চন্দিকা হাতুড়েসিংহের অভিষেক টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ ভয়াবহ ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। টেস্ট- ওয়ানডে উভয় সিরিজে।

আর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ যে দুর্দশার মধ্য দিয়ে কেটেছে সেটা আরও বড় দুঃস্বপ্ন! টেস্টে সিরিজের সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউট। দুটো টেস্ট ম্যাচই তিনদিনের মধ্যে শেষ। বড় ব্যবধানে বাংলাদেশের হার।

সাকিবের জন্য বাড়তি দুঃখ হচ্ছে এটা ছিল দ্বিতীয় মেয়াদে টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর তার প্রথম টেস্ট সিরিজ! আর টেস্ট অধিনায়কত্বের ‘দ্বিতীয় অভিষেকটা’ হল এমন ভয়ানক দলীয় ব্যর্থতা দিয়ে। দুই টেস্টের চার ইনিংসে ৯৮ রান এবং ১০ উইকেট শিকার করা সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স একেবারে তেমন মন্দ কিছু নয়। কিন্তু দল না জিতলে সামান্য ব্যক্তিগত পারফরমেন্স কে মনে রাখে? আর দল জিতলে সব সামান্যই যে তখন অসামান্য!

তবে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দলের আরও তিন সিনিয়রের সঙ্গে সাকিব যুগপৎ যে পারফরমেন্স দেখিয়েছেন সেটা যে কোন মূল্যমানকে ছাপিয়ে গেছে। বন্ধু তামিম ইকবালের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের নতুন ২০৭ রানের রেকর্ড জুটিটাই গায়ানার ম্যাচে দলকে বড় সঞ্চয় এনে দেয়।

যা ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাসের পুঁজি গড়ে। দল জেতে ৪৮ রানে। সেই জয়ের ধারাবাহিকতা এখন সাকিব দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখাতে চান। বুধবার দুপুরে গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নামার আগেও সে কথাই বলছিলেন-‘পুরো দলের চেষ্টা থাকবে যাতে আমরা এখানেই সিরিজ জিততে পারি। যখনই কোন ম্যাচ খেলতে নামি আমাদের চিন্তা থাকে একটাই যেন আমরা প্রতিটা ম্যাচ জিততে পারি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি এফোর্ট দিতে হবে। কারণ আমি নিশ্চিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ম্যাচে শক্তিমত্তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবো। সিরিজে ফিরে আসতে চাইবে তারা। গায়ানায় যদি দ্বিতীয় ম্যাচটা জিততে পারি তাহলে তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না আমাদের। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচটা যাতে আমরা জিততে পারি সেই চেষ্টাও তো থাকবেই। কিন্তু শেষ ম্যাচের আগে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটাই আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

গায়ানায় ম্যাচ বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও বাংলাদেশ ‘হোম কন্ডিশন’ দেখছে! অন্তত এই মাঠের উইকেট বাংলাদেশকে সেই আতিথিয়েতা দিচ্ছে। হাসিমুখ নিয়ে সাকিবও সেটা মানলেন-‘পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে গায়ানার উইকেট থেকেই বেশি স্পিন সহায়তা মেলে। আর তেমন স্পিন সহায়ক যদি সবসময় না মেলেও তবুও এখানকার উইকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের উইকেটের একটা বেশ ভাল মিল দেখা যায়। ঘাস-উইকেটের মাটি সবকিছুই দেখতে বাংলাদেশের উইকেটের মতোই। সেই অর্থেই এখানকার উইকেটে খেলা আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক বিষয়।’

গায়ানায় এখন পর্যন্ত দুটো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথমবার সেই ২০০৭ সালের এপ্রিলের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে , দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আর সর্বশেষ ম্যাচটা খেলল ২১ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটো ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। এবং বেশ দাপটের ভঙ্গিতেই। আরেকটি মিল আছে। এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ী দলে ছিলেন সাকিব আল হাসান। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেও এই ভেন্যুতেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সাকিব এবারও এখান থেকে জয় নিয়ে ফিরতে চান-‘আমাদের লক্ষ্য হল গায়ানায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আমরা যতটা সম্ভব ভাল যাতে করতে পারি।’

সেই ভাল মানে তো জয়-ই!

আর তাতেই যে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি হাতে উল্লাস।

শুধু সাকিব নয়, এই স্বপ্নটা এখন গোটা বাংলাদেশের!

এ সম্পর্কিত আরও খবর