শচীনকে ওপেনার বানিয়েছিলেন যিনি

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:08:55

ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক ‘প্রথম’ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজিত ওয়াদেকারের নাম। তার অধিনায়কত্বেই ভারত প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ১৯৭০-৭১ সালে টেস্ট সিরিজ জিতে। ইংল্যান্ডের মাটিতেও ভারত প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতে ১৯৭১ সালে। সেই সিরিজেও ভারতের অধিনায়ক ছিলেন অজিত ওয়াদেকার। ফিরতি সফরে ভারতে আসে ইংল্যান্ড। সেই সিরিজও জিতে ভারত। টানা তিন সিরিজে জয়ী ভারতের প্রথম ক্রিকেট অধিনায়ক এই কৃতি ক্রিকেটার।

ভারতীয় ক্রিকেটের এমন অনেক ইতিহাস তৈরির নায়ক অজিত ওয়াদেকার মারা গেছেন। ৭৭ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি গত ১৫ অগাস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে।

অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত রেকর্ড। খেলোয়াড় হিসেবে মাঝারি মানের পারফরমেন্স। ফিল্ডার হিসেবে চৌকস। ক্রিকেট ম্যানেজার হিসেবে সফল। আর মানুষ হিসেবে সবার হৃদয়ে অনেক উঁচুতে স্থান পেয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকার।

শচীন টেন্ডুলকারের ক্রিকেট জীবন বদলে দেয়ার পেছনেও একটা ‘মাষ্টার পিস’ সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন ওয়াদেকার। ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীনের শুরুটা তেমন আহামরি কিছু হয়নি। বরং শুরুটা বেশ দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবেন শচীন। ক্যারিয়ারের শুরুর দুটি ওয়ানডে কোন রানই করতে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেটের এই বরপুত্র। মুলত মিডলঅর্ডারেই ব্যাট করতেন শুরুর দিকে শচীন। এই সময় হাফসেঞ্চুরি পেলেও ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না। ১৯৯৪ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড সফরে দলের ম্যানেজার ছিলেন অজিত ওয়াদেকার। শচীন টেন্ডুলকার, বিনোদ কাম্বলিরা তখন দলের কিশোর ক্রিকেটার আর কি!

বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারি ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকার তখন ভারতীয় দলে সর্বজনের শ্রদ্ধার পাত্র। তবে তিনি জানতেন কি করে একজন খেলোয়াড়ের সেরা খেলাটা বের করে নিয়ে আনতে হয়। ভারতীয় ক্রিকেটের সিনিয়র এই সিটিজেন দলের তরুণ এবং নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্বের পরশ নিয়ে মিশে যান। সেই সম্পর্কের মধ্যে ছিল শ্রদ্ধা। সেই সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনও। তাই নিজেদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার কথা বেশ অকপটেই ম্যানেজারের কাছে তুলে ধরতে পারতেন ক্রিকেটাররা। শচীন টেন্ডুলকারের হঠাৎ ওপেনার হয়ে উঠার গল্পেরও শুরু ওতেই।
নিউজিল্যান্ড সফরে অকল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচের দিন সকালে নিয়মিত ওপেনার নভোজিতৎ সিং সিঁধু ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়। ম্যাচে খেলতে পারবেন না বলে জানান সিঁধু। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলেন শচীন। ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের কাছে গিয়ে শচীনের অনুরোধ।

-স্যার, আমাকে ইনিংস ওপেন করার একটা সুযোগ দেন না প্লিজ। আমার বিশ্বাস আছে, আমি বোলারদের পেটাতে পারবো। যদি ব্যর্থ হই, তবে আর আপনার কাছে অনুরোধ করবো না।’
দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গে যাতে ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকার তার এই অনুরোধের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেন সেই তাগিদ দেন শচীন। পরে ওয়াদেকার, আজহার এবং শচীনের যৌথ বৈঠকে স্থির হয় অকল্যান্ডের ম্যাচে অজয় জাদেজার সঙ্গে শচীন ওপেনিং জুটি হিসেবে নামবেন। সেই সফরে শচীন অবশ্য দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন।

ব্যস সেই সিদ্ধান্তের পর শচীনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের বাকি গল্পটা কেবল সাফল্য আর সাফল্য। ওপেনার হিসেবে শচীন তার সেই প্রথম ম্যাচেই করেন ৪৯ বলে ৮২ রান! ২ ছক্কা ও ১৫ বাউন্ডারিতে ম্যাচজয়ী সেই ইনিংসই শচীনকে ওয়ানডেতে ওপেনারের মর্যাদা দিল। সেটা ছিল শচীনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৬ নম্বর ম্যাচ। তখনো শচীন ওয়ানডেতে কোন সেঞ্চুরি পাননি। ওপেনার হিসেবে প্রমোশন পাওয়ার পর থেকেই শুরু হল শচীনের ব্যাটে সেঞ্চুরির রোমাঞ্চকর গল্প!

ফুটনোট: ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯ সেঞ্চুরির মধ্যে ৪৫টিই করেছেন শচীন টেন্ডুলকার ওপেনার হিসেবে।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর