সাব্বির এখন সমাধান নয়, সমস্যা!

ক্রিকেট, খেলা

এম.এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 08:41:51

একজন ফিনিসার চাই। ছয়-সাত নম্বরে ব্যাট করতে পারে। হাতে জোর আছে। ছক্কা-চার মারতে দক্ষ। কম বলে বেশি রান তুলতে পারে। স্ট্রাইকরেট ভালো। ম্যাচ ফিনিস করে ফিরতে পারে-চাহিদা পত্রে এমনসব শর্ত জুড়ে দিয়ে নির্বাচকরা হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন একজন ম্যাচ ফিনিসারকে।

মাঝে কিছুদিন জিয়াউর রহমানকে দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি স্পিনারদের বিপক্ষে বাহু ফোলালেন তবে জেনুইন পেস বোলিংয়ের সামনে পড়ে পিছু দৌঁড়ালেন। তাই তার ওপর আস্থা হারিয়ে নির্বাচকরা ফের একাদশে একজন ফিনিসার খুঁজে ফিরছিলেন।

নাসির হোসেন এলেন। কয়েকটা ম্যাচে দক্ষতা দেখিয়ে ফিনিসারের খেতাব জুটিয়ে ফেললেন প্রায়। কিন্তু শেষমেষ তিনিও জমতে পারলেন না। মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের ‘মেলায়’ তিনি বেশি সময় দিলেন। এবং তাতেই ফিনিসার নিজেই ‘ফিনিস’!

একাদশে এই ফিনিসার খোঁজার সমস্যা সমাধানে নির্বাচকরা সুযোগ দিলেন সাব্বির রহমানকে। সময়টা তখন ২০১৪ সাল। সেই বছরের শুরুতে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সাব্বির অবশ্য নির্বাচকদের হতাশ করেছিলেন। তারপরও হাতের কাছে আর কোন বিকল্প না থাকায় ওয়ানডেতে সাব্বিরকে বেছে নিলেন নির্বাচকরা। সেই বছরের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রামে সাব্বির রহমানের ওয়ানডে অভিষেক হয়ে গেল। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচে ৫ নম্বরে  ব্যাট করতে নামা সাকিব আল হাসানের ব্যাট হাসল সেঞ্চুরিতে। ছয় নম্বরে মুশফিক খেললেন ৭২ বলে ৬৫ রানের ইনিংস। আর সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা সাব্বির রহমান করলেন মাত্র ২৫ বলে হার না মানা ৪৪ রান। ৩ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কা।

লেট ব্যাটিং অর্ডারে এমন কাউকেই যে খুঁজছিলেন নির্বাচকরা। ম্যাচ শেষে ফারুক আহমেদের নেতৃর্তাধীন নির্বাচক কমিটি স্বস্তি খুঁজল-‘যাক বাবা, তাহলে সমাধান মিলল!’

কিন্তু সেটা ছিল ভুল হিসেব।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চার বছরও এখনো পুরো হয়নি। খেলেছেন ৫৪ ম্যাচের ৪৮ ইনিংস। রান সবে হাজারের কোটা ছুঁয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই সাব্বির রহমান এখন জাতীয় দলের একাদশে সমাধান নয়, বরং সমস্যার অন্য নাম!

নাসির হোসেনের মতো সাব্বির রহমানও মাঠের বাইরের নানান ঘটনায় শুধু ‘ওভারস্টেপিং আর ওভারস্টেপিং’ করে যাচ্ছেন! শাস্তি পাচ্ছেন। কিন্তু শুধরাচ্ছেন কই?

২০১৬ বিপিএলে মাঠের পারফরমেন্সের জন্য সাব্বির যত না বিখ্যাত হলেন তার চেয়ে বেশি আলোচিত হলেন ১৩ লাখ টাকা জরিমানা গুণে।

-১৩ লাখ টাকা জরিমানা!

জ্বি, আপনি ঠিক পড়ছেন। ঠিক কেন বিসিবি তাকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা করেছে সেটা কখনো মিডিয়ার সামনে বিস্তারিত জানায়নি। শুধু বলেছে শৃংঙ্খলা ভঙ্গ। তবে টিম হোটেলে নিজের কক্ষে সাব্বির যা করেছিলেন সেটা সামাজিক আচরণের মানদণ্ডের ভব্যতা-সভ্যতার সীমারেখা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অন্তত তাকে করা বিসিবির ১৩ লাখ টাকার জরিমানার বিপুল অঙ্ক সেই সত্যই জানাচ্ছে।

মোটা অংকের জরিমানা করে বিসিবি হয়তো ভেবেছিল সাব্বির শুধরে যাবেন। এই চিন্তায় আরেকবার ঠকল বিসিবি। গেল বছর বিসিএলে খেলার সময় রাজশাহীতে এক কিশোরকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে হেনস্থা করলেন সাব্বির। মাঠে সাব্বির যখন ফিল্ডিং করছিলেন তখন সেই কিশোর তাকে উদ্দেশ্যে করে ‘ম্যাও’ শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। সাব্বিরের কাছে এটাই নাকি সেই কিশোরের অপরাধ! আর তাই ব্যাট হাতে রান করা ভুলে যাওয়া সাব্বির সেই কিশোরকে পিটিয়ে মাস্তানি দেখালেন!

- দ্যাখ, ব্যাটা আমি কত বড় ক্রিকেটার! আর তুই আমারে ‘ম্যাও’ ডাকোস!

বিসিবি কিশোর হেনস্তার এই অপরাধে সাব্বিরকে আরেকবার শাস্তি দিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয়মাস নিষিদ্ধ হলেন সাব্বির। এমন শাস্তিতে অবশ্য সাব্বির খুশিই হলেন! ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে হচ্ছে না; যাক ফেসবুকে, ম্যাসেঞ্জার চ্যাটিংয়ের সময়টা আরও বাড়ল!

ভাবছেন হয়তো সাব্বির এবার শুধরে যাবেন। আপনার ভাবনায় বড় ভুল। এরই মাঝে বারকয়েক সতীর্থদের সঙ্গেও তার হাতাহাতির খবর চাউর হল। অবশ্য সেটা তিনি ফেসবুক লাইভে এসে পরে অস্বীকারও করলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় ফেসবুকে এক ভক্তের সমালোচনার জবাবে তিনি যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখালেন সেটা স্রেফে অকথ্য গালিগালাজ। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার এই ভাষায় কথা বলতে পারেন সেটা কারো ধারণারও বাইরে।

সাব্বির রহমানের সেই অশ্রাব্য গালাগালির স্ক্রিনশট বার্তা২৪.কমের কাছে রয়েছে। যদিও গা বাঁচাতে সাব্বির পরে বলেছেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক সাইট হ্যাক হয়েছিল। তবে বিসিবি জানিয়েছে সাব্বিরের এহেন আচরণের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। তাকে এই ঘটনার যথাযথ জবাব দিতে হবে।

ব্যাট হাতে ক্রমশ ম্যাচের পর ম্যাচে বাজে পারফরমেন্স। সর্বশেষ এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল, ওয়ানডেতে সাব্বিরের ব্যাটে কোন হাফসেঞ্চুরি নেই। ফিনিসার হিসেবে তার ব্যাট সমাধান খুঁজতে ব্যর্থ হওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে ওয়ানডাউন পজিশনেও ব্যাট করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কিন্তু সেখানেও ভীষণ অ-ধারাবাহিক তিনি।

ব্যাট হাতে অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স। মাঠের বাইরে নিত্য বিতর্ক তৈরি। হামবড়া আচরণ। বারবার শৃংঙ্খলা ভঙ্গ। ভাল টিমমেট হিসেবেও পাসমার্ক মিলছে না। তার কাছ থেকে কিছুই মিলছে না; না সাফল্য, না শিক্ষা, না সমাধান!

একটা জিনিস প্রতিনিয়তই দিচ্ছেন সাব্বির; সমস্যা!

এ সম্পর্কিত আরও খবর