গোল করার পর আনন্দে ছুট দিলেন ফার্নান্দেজ। কাছে-পিঠে থাকা সতীর্থরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। আনন্দে ফেটে পড়লেন। একটু পেছনে ছিলেন যে সতীর্থরা তারা এগিয়ে এসে হাইফাইভ করলেন। এতো গেল গোলের পর মুহূর্তের দৃশ্য।
আর ম্যাচে চলল ধাক্কাধাক্কি আর ফাউলের ছড়াছড়ি। গ্রানাডা ফাউল করল ১৭টি। গেটাফের ফাউলের সংখ্যা ১৬।
গোলের পর হ্যান্ডশেক, গলায় ধরে জড়াজড়ি, হাইফাইভ, একে অন্যের কাঁধে হাত, মাঠ থেকে বেরনোর সময়ও সবাই কাছাকাছি। ড্রিঙ্কস ব্রেক, মাঝ বিরতি বা খেলা শেষে কোথাও কেউ সামাজিক দূরত্বের বিধি-বিধানকে পাত্তাই দিলেন না। ফুটবল ম্যাচে সবকিছুই চলল স্বাভাবিক গতিতে।
তিন মাস স্থগিত থাকার পর ফের শুরু হওয়া স্প্যানিশ লা লিগার প্রথম ম্যাচ দেখে মনেই হলো না করোনাভাইরাস কোনো প্রভাব ফেলেছে!
তবে মাঠের বাইরে যারা বসেছিলেন সেই টাচলাইন, ড্রেসিংরুম, সাইডবেঞ্চের চেহারা ঠিকই জানিয়ে দিল এই সময়ের নতুন নাম করোনাভাইরাস কাল! রিজার্ভ খেলোয়াড়, বদলি খেলোয়াড়, সহকারী কোচ, টিম ডাক্তার সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন। বল বয় যতবার বাইরে থেকে বল ভেতরে পাঠাচ্ছে প্রতিবারই বলে জীবাণুনাশক ঢালছে। মাঠের খেলোয়াড় এবং কোচ ছাড়া বাকি সবাই মাস্ক পরে আছেন।
শূন্য গ্যালারি আরেকটি বড় পার্থক্যের চিহ্ন রেখে গেল করোনাভাইরাস পরবর্তী শুরু হওয়া ফুটবল লিগে। গ্যালারি ফাঁকা। কোথায় কেউ নেই। তবে টেলিভিশন দর্শকরা যাতে গ্যালারির দর্শকদের চিৎকার-উত্তেজনা ও আনন্দের ভাগ নিতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়। কৃত্রিম উপায়ে সাউন্ড সিস্টেমে দর্শকদের চিৎকার, বাঁশির শব্দ হৈ-হল্লা ঠিকই শোনানো হলো। গ্যালারিতে দর্শকদের চেয়ারে বসানো হলো সমর্থকদের কাটআউট! ভালো কোনো ড্রিবলিং বা আক্রমণ অথবা ডিফেন্ডিংয়ের সময় দর্শকরা ঠিক প্রতিক্রিয়ায় যে আওয়াজ বা হাততালি দেন- তেমনটা শোনানো হলো। তবে টিভি পর্দার সামনে বসে এমন কৃত্রিম উপায়ে ফুটবল মাঠের শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল এ যেন ফুটবলের ভিডিও গেমস চলছে!
অবশ্য ম্যাচে খেলা ফুটবলাররা এসবের কিছুই টের পেলেন না। তারা খেলে গেলেন দর্শক শূন্য গ্যালারিতে। এই প্রসঙ্গে আরেক ম্যাচে খেলা ভ্যালেন্সিয়ার গোলদাতা রডরিগো মোরেনো বলছিলেন- ‘এমন আয়োজনে খেলতে একটু অদ্ভুত লাগলেও আমার মনে হয় আমাদের ধীরে ধীরে সামনে বাড়তে হবে। আশা করছি ঘরে থাকা মানুষেরা খেলাটা উপভোগ করবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলেই আমাদের সামনে বাড়তে হবে।’
লা লিগা কর্তৃপক্ষ আশায় আছে লিগের শেষভাগে দর্শকরা ঠিকই গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন। মহামারীর কারণে গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতির নিষেধাজ্ঞা স্পেন সরকার বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্পেনে প্রায় ২৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। গত মাস থেকে দেশটি করোনাভাইরাস মহামারী কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।