করোনাকাল, লকডাউন ও অনুশীলন নিয়ে মুশফিকের অভিজ্ঞতা

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 22:44:05

করোনাকালের এই সময়টায় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ‘ব্যতিক্রমী’ সময় কাটিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বাদবাকিদের মতো তিনিও বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকলেও ক্রিকেট কিন্তু ভুলেননি! বাসাকেই পুরোদস্তুর জিমনেসিয়াম বানিয়ে ফিটনেস চর্চা চালিয়ে গেছেন। গ্যারেজে টেনিস বলে ক্রিকেট নিয়ে মেতেছেন। বনানীর বাসার সামনে নির্জন রাস্তায় রানিং করেছেন। বেরাইদে সবুজ মাঠের প্রান্তরে একাকী ক্রিকেট ক্লাসের মনোযোগী ছাত্র মুশফিক! মিরপুরে হোম অব ক্রিকেটে যে ক’জন ক্রিকেটার ব্যক্তিগত অনুশীলন করেছেন, মুশফিক তাদের মধ্যে অন্যতম।

রোদ-বৃষ্টির বাধাও মানেননি। বিসিবি’র বেঁধে দেওয়া সময়ে রুটিন মেনেই মিরপুরে ক্রিকেট অনুশীলন চালিয়ে গেছেন জাতীয় দলের এই পরিশ্রমী ক্রিকেটার। হোম অব ক্রিকেটে সপ্তাহখানেকের সেই অনুশীলনে আপাত ছুটি। ঈদের পরে আবার শুরু হবে ক্রিকেট ক্লাস। মিরপুরে শেষ দিনের এই অনুশীলন শেষে মুশফিক মিডিয়ার সামনে এসে করোনাকালে নিজের এই ব্যতিক্রমী ক্রিকেট এবং সময়কালের অভিজ্ঞতা জানালেন।

বিসিবি’কে ধন্যবাদ

যা আমাদের হাতে নেই, অর্থাৎ যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না- সেটা নিয়ে চিন্তা করাটা আমি মনে করি বোকামি। বিশেষ করে শেষ ৪ মাস সবার জন্যই কঠিন সময় গিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি বাসা থেকে যতটুকু কাজ করা যায়। আমার জীবনে প্রথমবার দেখা এমন চার মাস প্রায় লকডাউন। বিসিবি’কে অসংখ্য ধন্যবাদ তারা আমাকে এমন সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে, এত সুন্দর করে পরিকল্পনামাফিক ৭-৮ দিন যা অনুশীলন করেছি, বেশ ভালো ছিল।

অনেক দেশ তো ক্রিকেটে ফিরেছে

বিশ্বের অনেক দেশেই ক্রিকেট ফিরছে, যদিও তুলনা করতে গেলে তাদের সাথে আমাদের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। তবুও আমি আশাবাদী ঈদের পর যদি পরিস্থিতি আরেকটু উন্নতি হয় আমরা যেন আবার একসাথে একটা দল হয়ে অনুশীলন শুরু করতে পারি। কিন্তু আমি ৭-৮ দিন যেটা করেছি এটা খুবই ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। চার মাস ইনডোরে কাজ করা আর বাইরে কাজ করা সম্পূর্ণ আলাদা। চাইছিলাম যে রোদে ও আউটফিল্ডে যেন রানিংটা করা যায়, ফিটনেস ওয়ার্কের সাথে স্কিল ওয়ার্কও। এটা হয়েছে সেজন্য বিসিবি’কে আরেকবার ধন্যবাদ।

ব্যাটিংয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন মুশফিক

দলীয়ভাবে অনুশীলন শুরু প্রসঙ্গে

আমি মনে করি এটা বিসিবি’র ব্যাপার। আসলে যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি বলবো শুরুর দিকে একটু দ্বিধায় ছিলাম। একটু ভয় লাগছিল যে কিভাবে হবে আর আদৌ হবে কিনা। যেহেতু মিরপুরের আশেপাশে সব জায়গায় রেড জোন। তো এখানে এসে যেটা দেখলাম আসতে আসতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখানে এত সুন্দর পরিবেশ ও এত পরিষ্কার। আমি মনে করি ব্যক্তিগত অনুশীলন বাকি যে ৫-৬ জন আমার সাথে করেছে তারাও একমত হবে। খুবই ভালো একটা পরিবেশ ছিল, আমরা অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। তো এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদি সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে আমার মনে হয় গ্রুপে ১৫-২০ জন না হলেও দুইজন, চারজন, পাঁচজন বা সাতজন একসাথে শুরু করতে পারি।

বাসায় লম্বা সময় কিভাবে কাটে?

টিভিতে খেলা দেখলে আসলে আফসোস লাগে। সারাদিন বাসায় বসে পরিবারের সাথে সময় কাটানো ও খেলাটাই দেখা হয়। একটু হলেও খারাপ লাগে অনেকগুলো ৫০ বা ১০০ মিস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চেষ্টা করছি টিভিতে খেলা দেখে কিভাবে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা যায়। আর সব ঠিক থাকলে সামনে আমাদের কি কি খেলা সেগুলো নিয়েও মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া। এছাড়া নতুন নিয়ম যেমন বলে অনেক কিছু ব্যবহার করা যাবে না, ব্যাটসম্যানদেরও একটা কঠিন সময় থাকে। সবকিছু দেখে ওখান থেকেও শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন পুনরায় শুরু হবে আবার যেন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি সেটাই চাই।

অনুশীলনের ফাঁকে ক্যামেরাবন্দী মুশফিক

এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া কেমন দুষ্কর?

দেখেন সবকিছুই আসলে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার। আমরা কেউই চাই না যে বাসায় বসে থাকতে। গত চার মাস আমাদের প্রায় বাসায়ই বসে থাকতে হয়েছে। যে নিয়ম কানুন গুলো হবে সেগুলো অবশ্যই ভালোর জন্য। এবং এটা আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। আমি মনে করি শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও অনুশীলনে আসতে আসতে অভ্যাস করে ফেলতে পারলে খুব একটা সমস্যা হবে না।

করোনায় আক্রান্ত হওয়া ক্রিকেটারদের প্রসঙ্গে:

খারাপ লেগেছে এরা তো আমাদের সতীর্থ, নিজেদের বড় ভাই। তারা অনেক কাজ করতে গিয়েছেন, তারা এই দুঃসময়ে অনেককে সাহায্য করেছেন, আক্রান্ত মানুষদের কাছাকাছি গিয়েছেন তাই নিজেরাও আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ তারা রিকভার করেছেন। আমি মনে করি শুধু তারা না আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন আছে, কাছের পরিচিত লোক আছেন যারা আক্রান্ত হয়েছেন, খারাপ লাগছে।

অনুশীলন শেষে ক্লান্ত মুশফিক

কঠিন এই সময়ে মানসিকভাবে ফিট থাকা প্রসঙ্গে:

একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমরা যেন ফিটনেস ধরে রেখে, স্কিল নিয়ে কাজ করে মানসিকভাবে ফিট থাকতে পারি সেটা চেষ্টা করতে হবে। আমরা সে কাজগুলোই করছি। নিয়মিত কোচদের সাথে বসছি, অনলাইনে অনেক আলোচনা করছি। আমরা মনে করি সব মিলিয়ে সময়টা খারাপ যায়নি। পরিবারের সাথে ভালো একটা সময় কেটেছে। এখন মুখিয়ে আছি মাঠের মানুষ যেহেতু মাঠেই ফিরতে পারি এবং ম্যাচ খেলতে পারি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর