র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান নিয়ে কথা বলার চেয়ে আরেকটি বিষয়ে বেশ গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড- ‘আমরাই সবচেয়ে ধনী বোর্ড!’ বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সবচেয়ে ধনী। হাজার হাজার কোটি টাকার ছড়াছড়ি। আইসিসি’র আয়ের সিংহভাগই আসে ভারতের ক্রিকেট থেকে। অথচ কি আশ্চর্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সেই বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা পেছনের ১০ মাস থেকে কোনো বেতন পাচ্ছেন না! শুধু তাই নয়, ক্রিকেটারদের বিপুল পরিমাণ ম্যাচ ফি’ও বাকি রেখেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
গত অক্টোবরে বিসিসিআই’র সভাপতির দায়িত্ব নেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই অক্টোবর থেকে এই গতকাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা তাদের পূর্ব নির্ধারিত বেতন পাননি। ভারতের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ২৭। সবার বেতন ও অন্যান্য পাওনা যোগ করলে এই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে একশ কোটি রুপিরও বেশি! ২৭ ক্রিকেটারের এই সময়কালের বেতনের পরিমাণ ৯৯ কোটি রুপি। আর দুই টেস্ট, নয়টি ওয়ানডে এবং আটটি টি- টোয়েন্টির ম্যাচ ফি এই হিসাবের সঙ্গে যোগ করলে সব মিলিয়ে বকেয়ার অঙ্ক গিয়ে ঠেকছে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি রুপির মতো!
আরেকটু বিস্তারিত হিসেব দেই। ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরিতে থাকা ভারতের ক্রিকেটাররা বার্ষিক বেতন হিসেবে পান সাত কোটি রুপি। এই তালিকায় আছেন মাত্র তিনজন, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও জাসপ্রিত বুমরা। ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়দের বার্ষিক আয় ৫ কোটি রুপি। ‘বি’ ক্যাটাগরি পায় বছরে ৩ কোটি এবং ‘সি’ গ্রেডে থাকাদের বার্ষিক বেতন ১ কোটি রুপি। এর সঙ্গে ম্যাচ ফি হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটাররা প্রতি টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে যথাক্রমে পান ১৫, ৬ ও ৩ লাখ রুপি।
সাধারণত চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা প্রতি তিন মাস পরপর তাদের বেতন এবং অন্যান্য পাওনা পেয়ে থাকেন। কিন্তু গত অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেই সেটা বকেয়াই রয়ে গেছে!
ভারতের সানডে এক্সপ্রেস চুক্তিবদ্ধ ২৭ জন ক্রিকেটারের মধ্যে আটজন ক্রিকেটারের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা বলেছে। এই আটজন ক্রিকেটারই জানিয়েছেন গত অক্টোবর থেকে তাদের একাউন্টে কোনো বেতন জমা হয়নি!
প্রশ্ন হলো- ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তো টাকা-কড়ির কোনো সমস্যায় নেই। তারপরও কেন এই বকেয়া? করোনা মহামারীর কারণও এখানে নেহাতই অজুহাত হবে। কারণ করোনা তো আর গত বছরের অক্টোবর থেকে ছড়ায়নি। করোনা মহামারীর সময়টা এই অঞ্চলে শুরু হয়েছে গত মার্চ-এপ্রিলে।
সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। গত অক্টোবর থেকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ঠিক পেশাদারিত্বের সঙ্কটে ভুগছে! সৌরভ বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এখনো শূন্য। গত ডিসেম্বর থেকে বিসিসিআই এর প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (সিএফও) পদে কেউ নেই! বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও মহাব্যবস্থাপকের (ক্রিকেট অপারেশন্স) চেয়ারও শূন্য! মূলত এই তিনটি মহাগুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে কেউ না থাকায় পেশাদারিত্বের অভাবে ভুগছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আর সেই জটিলতায় আটকে গেছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ১০ মাসের বেতন।