দেশের অন্যতম প্রযুক্তিপণ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন নিয়ে আসছে ইলেকট্রিক বাইক বা স্কুটার। বাইকে প্রতি কিলো পথ পাড়ি দিতে খরচ হবে মাত্র ১০-১৫ পয়সা। ইতিমধ্যে ওয়ালটনের ই-বাইক নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। অপেক্ষা এখন বাইকটির বাজারে আসার।
নতুন এ ক্যাটাগরির পণ্যের ব্র্যান্ডের নাম তাকিওন (TAKYON)। যা ওয়ালটনের লোগো যুক্ত হলেও তাকিওন নামেই বাজারে আসবে। প্রাথমিকভাবে দুটি মডেলের ই-বাইক বাজারে আসবে। নাম তাকিওন ১.০০ আর তাকিওন ১.২০। বাইক দুটির দাম নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দেশীয় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সাশ্রয়ী দামে ই-বাইক বিপণন করা হবে।
তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার কায়কোবাদ সিদ্দিকীর ই-বাইক সম্পর্কে জানালেন, দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের তাকিওন ১.০০ মডেলে আছে শক্তিশালী ১.২ কিলোওয়াট হাব মোটর। ব্যবহৃত হয়েছে নতুন প্রযুক্তির গ্রাফিন লেড এসিড ব্যাটারি। যা একবার ফুল চার্জে বাইকটি ৬০-৭০ কিলোমিটার যেতে পারবে। গতি হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার।
অন্যদিকে তাকিওন ১.২০ মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ মোটর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বশের (BOSCH) মোটর। যার পোর্টেবল লিথিয়াম ব্যাটারির ওজন মাত্র ৯ কেজি। যা সহজেই বহনযোগ্য। বাইকটি এক চার্জে ৫০-৬০ কিলোমিটার চলবে। গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার। তাকিওন ই-বাইকে আছে পোর্টেবল চার্জার। ঘরে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন থেকেই বাইকে চার্জ দেওয়া যাবে। বাইকের পারফরমেন্স ১০০ সিসি বাইকের সমতুল্য। দুটি মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে ডুয়াল হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক, টিউবলেস টায়ার, এলসিডি স্পিডোমিটার ও এলইডি লাইটিং।
জনসাধারণের যাতায়াত সহজ করতে বাইকের বিকল্প নেই। বিশেষত শহরাঞ্চলে অধিক ট্রাফিকের কারণে তরুণদের প্রথম পছন্দ দ্বিচক্রযান বা বাইক। তবে অতিরিক্ত খরচের জন্য অনেকেই প্রচলিত পেট্রোলচালিত বাইক কিনতে এবং নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন না। তাই গ্রাহকদের কাছে স্বল্পমূল্যে মোটরযান পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ প্রকল্পের সূচনা।
তাকিওন ই-বাইক একবার রিচার্জ করে ৫০-৬০ কিলো যাতায়াত করা সম্ভব। বর্তমানে এক লিটার অকটেনের বাজারমূল্য ৮৯ টাকা। যা দিয়ে একটি ১০০ সিসি বাইক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে তাকিওন ই-বাইকে সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করতে খরচ পড়বে মাত্র ৭-৮ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ১০-১৫ পয়সা।
তা ছাড়া প্রচলিত পেট্রেলচালিত বাইকের মতো তাকিওন ই-বাইকের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খরচও প্রয়োজন হবে না। একদিকে সাশ্রয়ী, অন্যদিকে তেলের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত। ফলে বাইক দুটি পরিবেশবান্ধব।
ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলমের বক্তব্যে জানা যায়, উঠে আসে, বর্তমানে দেশে ইলেকট্রিক যানের জনপ্রিয়তা এখনও তেমন উচ্চ পর্যায়ে না পৌঁছালেও উন্নত দেশগুলোতে টেসলাসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশে অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা না থাকায়, ইলেকট্রিক যানবাহনে কেউ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করতে পারেন না। তাকিওনের মাধ্যমে দেশিয় গ্রাহকদের ইলেকট্রিক যানবাহনে অভ্যস্ত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি চার্জের জন্য ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। ফলে ই-বাইক ব্যবহার করেও গ্রাহকেরা দেশের যেকোনো স্থানে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।
ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বললেন, সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে বহু উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে ল্যাপটপ আর ডেস্কটপে এক্সচেঞ্জ অফার দিয়েছি। যার মাধ্যমে ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। এখন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিবেশের ওপর জ্বালানি তেলের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারেও জনসচেতনতা বাড়াতে। দেশিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সবুজ পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় ওয়ালটন যাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করাই ওয়ালটন ব্র্যান্ডের মূল লক্ষ্য।
ইলেকট্রিক যানের নিবন্ধন সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বিগত বছরে একাধিক প্রতিষ্ঠান এ শ্রেণির মোটরযান বাজারজাত করলেও গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।
তবে ২০২০ সালের প্রকাশিত গেজেটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ইলেকট্রিক যানবাহন নিবন্ধনের নীতিমালা প্রণয়ন করে। ফলে তাকিওন ইলেকট্রিক বাইক নিবন্ধনে কোনো জটিলতা বা সংশয় থাকবে না বলে ওয়ালটন আত্মবিশ্বাসী। নির্ধারিত সার্ভিস পয়েন্ট থেকে তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকের ২ বছর অবধি বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা থাকবে।