বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের জীবনের গল্প। গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দীর্ঘ লকডাউনসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন অসংখ্য মানুষ, অনেকে হয়ে পড়েন নিঃস্ব।
আবার সেই করোনাকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে অনেকের জীবনের চিত্র। করোনাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানের তরুণ-তরুণীরা অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। যাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তাদের স্বপ্ন এখন উদ্যোক্তা হওয়ার।
গত বছর কুমিল্লার তরুণ-তরুণীদের অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কাজী আপন তিবরানী। তাঁর উদ্যোগে ইতিমধ্যে পাল্টে গেছে হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবনের গল্প। তিনি ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরাম নামক ফেসবুক পেজ চালুর মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। বর্তমানে এই পেজে যুক্ত রয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি সদস্য। এছাড়া কুমিল্লার আরও বেশ কিছু ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও অনলাইনে চলছে ক্ষুদ্র ব্যবসা।
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার এসব ফেসবুক পেজে এখন চলছে জমজমাট বেচাকেনা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে অনেক মানুষ ঘরে বসেই এখন ঈদের কেনাকাটা করছেন অনলাইনে। কুমিল্লার ঐতিহ্যের খাদি পোশাক, দেশ-বিদেশি থ্রি পিস, বাহারি শাড়ি, খাদ্য সামগ্রীসহ সকল প্রকার পণ্যই মিলছে অনলাইনে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকল বয়সী মানুষের পোশাক, জুতা ও প্রসাধনী সামগ্রীও সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। আর এর মাধ্যমে হাজারো তরুণ-তরুণীরা হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। তাদের স্বপ্ন এখন বহুদূর যাওয়ার।
কুমিল্লার দেবিদ্বারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী ইভা। পরিবারের সঙ্গে বর্তমানে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বসবাস করা ইভা ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী।
ইভা জানায়, আমার পরিবারের প্রায় সকলেই সরকারি চাকরি করে। তারা চায়নি আমি ই-কমার্সে কাজ করি। এরপরও তিবরানী মেমের উৎসাহে ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে গত বছর থ্রি-পিস বিক্রি শুরু করি। পরে আরও কিছু পণ্য যুক্ত করি। এবারের ঈদকে সামনে রেখে যুক্ত করি খাদি পোশাক। গত ১৭ দিনে প্রায় চার'শ খাদি পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকার পণ্য। আমার ব্যবসার মূলধন এখন প্রায় দুই লাখ টাকা। আমি ই-কমার্সে একজন উদ্যোক্তা হতে চেষ্টা করছি। এখন মা আমাকে সাপোর্ট দেন।
জেলার লাকসামের মেয়ে উম্মেহানি স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন তিনি।
উম্মেহানি জানান, গত বছর মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। আগে টিউশনি করলেও করোনার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁর ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ই-কমার্সে মনোযোগ দেন তিনি। বর্তমানে হোমমেড ভেজালমুক্ত খাদ্য সামগ্রী, মেয়েদের পোশাক, খাদি পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়া পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি পিস, ঘি, মধুসহ বিভিন্ন খাঁটি পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। ঈদকে সামনে রেখে তার বিক্রিও জমজমাট। তিনিও একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান। পাশাপাশি একটি সুপার শপ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন রয়েছে তার।
জেলার লাকসামের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ফারাবিও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন ই-কমার্সকে ঘিরে। ফারাবি বলেন, আমি আগে শাড়ি বিক্রি করতাম। এখন ঈদকে সামনে রেখে খাদি পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু করেছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে তরুণরা বেশি খাদি পাঞ্জাবি কিনছেন। পাশাপাশি শাড়িও ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই।
ই-কমার্সের ক্রেতা জেলার নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা পারভীন আক্তার বলেন, করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি এবং লকডাউনের কারণে এ বছর মার্কেটে যাইনি। ঘরে বসেই অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা করেছি। দামও তেমন বেশি নয় মার্কেটের তুলনায়। এছাড়া ঘরে বসেই পণ্য হাতে পাওয়ায় দিন দিন অনলাইনে পণ্য কেনার ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি।