করোনার এই মহামারিতে অনলাইনে কেনাকাটার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতারণার ফাঁদও। অনেক সময় অনলাইনে যে মানের পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো তা হাতে পাওয়ার পর সেটি পাওয়া যায় না। আবার শোনা যায় ফেসবুক কিংবা কোনো গ্রুপের পেইজে যে পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো হঠাৎই আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
অনলাইন ভিত্তিক বেচা-কেনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনটি বিশ্বাসযোগ্য আর কোনটিতে প্রতারণার আশঙ্কা আছে ক্রেতারা অনেক সময়ই বুঝতে পারেন না। ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হোন তারা। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে বেঁচে যেতে পারেন প্রতারণার হাত থেকে। অনলাইন মার্কেটিং এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সেরকমই কয়েকটি উপায়ের কথা জানিয়েছেন বিবিসিকে।
ওয়েবসাইট: প্রতারক চক্র অনেক সময়ই বিখ্যাত কিংবা প্রতিষ্ঠিত কোনো অনলাইনের ওয়েবসাইটের হুবহু প্রতিরূপ তৈরি করে। কখনো বানানে সামান্য পরিবর্তন এনে, কখনো ডিজাইনে। আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটে ঢোকার আগে বানান এবং ডিজাইনের দিকে খেয়াল করুন। দেখুন আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে ঢুকছেন কি-না। প্রতিষ্ঠিত কোনো কোম্পানি বা ব্র্যান্ড হুটহাট তাদের নামের বানান বা লোগো'র ডিজাইন পরিবর্তন করে না। এছাড়া একটি অরিজিনাল ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসের শুরুতে অবশ্যই https থাকবে এবং ওয়েবসাইটটির একটি পূর্ণ ডোমেইন নেইম থাকবে।
রিভিউ: আপনি অনলাইনে যেখান থেকেই পণ্য কিনুন না কেন, কেনার আগে রিভিউ দেখে নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ফেইক রিভিউও থাকে। খেয়াল রাখতে হবে রিভিউয়ের বেশিরভাগই নতুন কি-না এবং রিভিউগুলো ভুয়া একাউন্ট থেকে কি-না। চেষ্টা করতে হবে, অনেক বেশি সংখ্যক রিভিউ পড়ে প্রতিষ্ঠানটি'র সেবা সম্পর্কে ধারণা পেতে।
ঠিকানা: ওয়েবসাইটের বাস্তব কোনো ঠিকানা এবং ফোন নম্বর আছে কি-না, সেটি দেখে নিন। নিজেদের শোরুম আছে কি না? বা অফিস কোথায়- খোঁজ নিন। অফিসের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না থাকলে বা ফোন বা মোবাইল নম্বর না থাকলে সতর্ক হোন।
চটকদার বিজ্ঞাপন: বিশ্বব্যাপি প্রতারণার একটি বড় হাতিয়ার, চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করা। এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মূল্য ছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার কিংবা অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য বিক্রি'র চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে হুটহাট অর্ডার করার আগে অবশ্যই আপনার সতর্ক হওয়া উচিত।
পেইজের বয়স: ফেসবুকে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই পেইজগুলো নতুন করে তৈরি করা। আনকোরা কোন পেইজ থেকে অর্ডার করার আগে সেটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। দেখুন, পেইজটিতে প্রোডাক্ট নিয়ে ফেসবুক লাইভ হচ্ছে কি-না। পেইজটিতে যেসব পোস্ট বুস্ট করা হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় অন্য পোস্টগুলোতে লাইক-কমেন্ট অস্বাভাবিক কম থাকলে সতর্ক হোন।
পণ্য যাচাই-বাছাই: সব দেখেশুনে যদি অর্ডার করতেই চান, তাহলে যে পণ্যটি পছন্দ করেছেন, সেটির বিবরণ বিস্তারিত আছে কি-না দেখে নিন। পণ্যের মাপ, ওজন ইত্যাদি তথ্য জানুন। প্রয়োজনে চ্যাটিংয়ে গিয়ে আরো প্রশ্ন করুন। সন্দেহ হলে বিজ্ঞাপনের ছবি ছাড়াও পন্যটির রিয়েল ছবি চাইতে পারেন। সবশেষে প্রতিষ্ঠানটির রিটার্ন এবং রিফান্ড পলিসি আছে কি-না, থাকলে সেটা কেমন এবং গ্রাহকবান্ধব কি-না, সেটা যাচাই করুন।
অগ্রিম পেমেন্ট: অনলাইন কেনা-কাটায় প্রতারণার একটি বড় হাতিয়ার, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নেয়া। প্রতিষ্ঠিত অনলাইন না হলে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলে অগ্রিম পেমেন্ট না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি অর্ডারটি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে করেন এবং পণ্য হাতে পেয়ে দেখে-শুনে তারপর অর্থ পরিশোধ করেন।