সীমার বাইরে মোবাইল ফোনে কলড্রপ হওয়ায় তিন মোবাইল অপারেটরের সিইওকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সাম্প্রতিক সময়ে কলড্রপ নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষও বেড়েছে। কথা বলার মাঝখানে কল কেটে যাওয়ার গ্রাহকদেও যেমন ক্ষোভ বাড়ছে, তেমনি এ নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্বয়ং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, গ্রাহক পর্যায়ে অভিযোগ কয়েকগুণ বেড়েছে।
কলড্রপ নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে অপারেটরদের কাছে এর ‘প্রকৃত অবস্থা ও এ সংক্রান্ত অভিযোগ’বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে একের অধিক কলড্রপের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সৃষ্টি হয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। এমনকি এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কলড্রপ নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহকের দিনে একটির বেশি কলড্রপ হলেই অপারেটরকে এক মিনিটের টকটাইম ফেরত দিতে হবে। কিন্তু বিগত এক বছরে কোনো অপারেটরই এই টাকা ফেরত দেয়নি।
অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরেরা বলছে, তাদের কলড্রপের হার বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সীমার মধ্যেই রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অভিযোগ এসেছে তার বিচারে প্রকৃত পরিসংখ্যান এক নয় বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপারেটরদের কলড্রপের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছে বিটিআরসি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের এক মিনিটের বেশি কলড্রপ হয়েছে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ। গ্রামীণফোন গ্রাহকের ১৭.৪৭ কোটি মিনিটই ফেরত দেয়নি। আর ফেরত দিয়েছে মাত্র ১০ কোটি ৩০ লাখ মিনিট। অন্য অপারেটর রবির কলড্রপ ছিল ২৪ কোটি ৪৭ লাখ। তারা ফেরত দেয়নি ১৭.৬৫ কোটি মিনিট। আর ফেরত দিয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৮২ লাখ মিনিট। এদিকে বাংলালিংকের কলড্রপ ছিল ১৭ কোটি ১৪ লাখ। তারা ফেরত দিয়েছে ১২.২ কোটি মিনিটই ফেরত দেয়নি। আর ফেরত দিয়েছে তারা ফেরত দিয়েছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ মিনিট। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের এই একের অধিক কোনো কলড্রপ ছিল না।
এছাড়া তিন মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক গ্রাহকের প্রায় ৪৭.৩২ কোটি টাকা ফেরত দেয়নি। কলড্রপের কারণে গ্রাহকেরা এই তিন অপারেটরের কাছে এই টাকা পাবেন। এদিকে কলড্রপে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।
একজন গ্রাহকের দিনে একটির বেশি কলড্রপ হলেই অপারেটরকে এক মিনিটের টকটাইম ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর এই নির্দেশনা অনুযায়ী এই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু বিগত এক বছরে কোনো অপারেটরই এই টাকা ফেরত দেয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটরগুলোর সিইও বরাবর সোমবার (২২ অক্টোবর) পাঠানো ওই চিঠির জবাব আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলেছে বিটিআরসি। বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল অপারেটরদের কলড্রপ সংক্রান্ত অভিযোগ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও কথা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।