হঠাৎ দেখলেন কোনো এক ভদ্রলোক হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইলের মাধ্যমে আপনাকে মেসেজ করেছে এবং আপনার ফেসবুক পেজে বিনামুল্যে ২-৩ হাজার ডলার বুস্ট করে দেওয়ার অফার করছে।
আপনি খুব আগ্রহের সাথে ভদ্রলোকের অফারে রাজি হলেন,ভদ্রলোক এবার আপনাকে দিয়ে আপনার পেজটি তার বিজনেস ম্যানাজারে কানেক্ট করিয়ে নিবে।
এবার আপনার মাথায় আকাশ ভাঙার পালা,ভদ্রলোক টি আসলে অভদ্র হ্যাকার ছিল,আপনার পেজ অলরেডি হ্যাকারের কন্ট্রোলে চলে গিয়েছে।
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম অনেকটাই ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে।
পাশাপাশি অনলাইন বিজনেস বা ই-কমার্সের বড় একটা অংশ ফেসবুক পেজ নির্ভর।যায়হোক ফেসবুক পেজের গুরুত্ব বা ভূমিকা কমবেশি আমরা সবাই জানি, আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ফেসবুক পেজ হ্যাক নিয়ে।
ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে পাবলিক ফিগার পেজ বা বিজনেস পেজ হ্যাক হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।এক শ্রেণীর হ্যাকার চক্র খুব কৌশলে হ্যাক করে নিচ্ছে মুল্যবান ফেসবুক পেজ গুলো। হ্যাকার দের টার্গেট একটু বড় পেজের দিকে ,অর্থাৎ বেশি লাইকের পেজে।
শুরুতেই বিজনেস ম্যানাজার এর মাধ্যমে হ্যাক হওয়ার ব্যাপার উল্লেখ করেছিলাম, বিজনেস ম্যানাজার এর নাম শুনলেও অনেকেই হয়তো জানেন না এটা কীভাবে কাজ করে, তাই শুরুতেই চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজনেস ম্যানাজার কি এবং কিভাবে কাজ করেঃ
ফেসবুক বিজনেস ম্যানাজার এমন একটি একাউন্ট বা ফাংশন যা একটি ফেসবুক পেজের জন্য সর্বময় ক্ষ্মতার অধিকারি।যদি কোনো ফেসবুক পেজে বিজনেস ম্যানাজার একাউন্টে সংযুক্ত করা থাকে তাহলে সেই বিজনেস ম্যানাজার একাউন্ট থেকে পেজের যেকোনো এডমিন কে যেকোনো সময় পেজ থেকে রিমুভ করে দেওয়া যায়।কিন্তু পেজে থাকা একাধিক এডমিন মিলেও পেজ থেকে বিজনেস ম্যানাজার একাউন্টটি রিমুভ করতে পারবেনা।তাহলে বুঝতেই পারছেন বিজনেস ম্যানাজার একাউন্ট এর ক্ষমতা।
এছাড়াও বিজনেস ম্যানাজার দিয়ে ফেসবুকে বুষ্ট বা এডস রান করা সহ অনেক কাজ করা যায় ,কিন্তু আমরা আজ শুধু আমরা আলোচনা করবো বিজনেস ম্যানাজার এর সাথে ফেসবুক পেজের সম্পর্ক নিয়ে।
ধরুন আপনার একটি বিজনেস ম্যানাজার একাউন্ট আছে ,এখন আপনি যদি চান আপনার বন্ধুর ফেসবুক পেজ আপনার বিজনেস ম্যানাজারে সংযুক্ত করবেন ,এতে আপনার বন্ধুর পেজে আপনি এডমিন না থাকলেও চলবে।আপনাকে আপনার বিজনেস ম্যানাজার এর পেজ অপশন থেকে আপনার বন্ধুর পেজ এড করতে হবে এবং আপনার বন্ধুর ইমেইলে ফেসবুক থেকে মেইল যাবে যে আপনি তার পেজ আপনার বিজনেস ম্যানাজারে এড করতে চাচ্ছেন,আপনার বন্ধু যদি একসেপ্ট করে তাহলে আপনি তার পেজের সমস্ত এক্সেস পেয়ে যাবেন।
এমন আরো কিছু অপশন আছে যার অপব্যাবহার করে হ্যাকার আপনার আমার পেজ হ্যাক করে নিয়ে যাচ্ছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক যেভাবে হ্যাক হচ্ছে ফেসবুক পেজ গুলোঃ
পদ্ধতি ১-
আপনার ফেসবুক পেজ মেনশন হয়েছে এমন একটা নোটিফিকেশন আসবে আপনার কাছে,সেখানে যেয়ে দেখতে পাবেন “ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডাস ,ভেরিফিকেশন পেজ ইত্যাদি টাইপের পেজ থেকে আপনার পেজ সহ আরো অনেক পেজ মেনশন করেছে এবং লিখে রেখেছে আপনার পেজে ভায়োলেশন হয়েছে তাই ভেরিফিকেশন করতে হবে,সেই মর্মে একটা লিংকে ক্লিক করতে বলবে।
আপনি যদি ভুলে সেই লিংকে ক্লিক করেন তাহলে আপনার একাউন্ট হ্যাক হওয়ার দ্বার প্রান্তে চলে গেলেন,কারন লিংকে ক্লিক করার পরে হুবহু ফেসবুকের লগইন পেজের মত একটা পেজ আসবে যেখানে আপনার পাসয়ার্ড দিতে বলবে ,বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী ভুলটা এখানেই করে বশেন,তারা এই ভুয়া লগইন পেজ দেখে আসল ভেবে বসেন তখনই পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন সেখানে,তখন সাথে সাথে আপনার পাসওয়ার্ড চলে যাবে হ্যাকারের কাছে।
আর হ্যাকারের কাছে পাসওয়ার্ড যাওয়া মানে আপনার একাউন্ট হ্যাক সাথে আপনার ফেসবুক পেজ ও হ্যাক হয়ে যাবে।
পদ্ধতি ২
হ্যাকার যেকোনো ভাবে আপনার ফেসবুক একাউন্টে থাকা ইমেইলে সংগ্রহ করবে এবং আপনাকে ফেসবুক এর নাম করে একটা ফেইক ইমেইল থেকে মেইল পাঠাবে এই সংক্রান্তে যে আপনার পেজে ভায়োলেশন পাওয়া গেছে এবং আপিল করার জন্য একটি লিংক পাঠাবে।এরপর পদ্ধতি ১ এ যেভাবে বর্ণ্না করেছি এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে এবং আপনার একাউন্ট সহ পেজ হ্যাক হতে পারে।
পদ্ধতি ৩
লেখার শুরুতে বলেছিলাম এ ব্যাপারে যে কেউ একজন ইমেইলের বা হোয়াটসএপ এর মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে ,সে বলবে আপনার পেজে তার ভালো লেগেছে এবং আপনার পেজের সাথে সে কাজ করতে চায়।আপনার পেজে আনুমানিক ৩-১০ হাজার ডলার বুস্ট/এডস দিয়ে দিবে এমন একটি অফার দিবে।এমন একটি অফার তো কেউ হাতছাড়া করতে চায়বেনা।আপনি যদি রাজি হয়ে যান তাহলে সে আপনার একাউন্টে থাকা ইমেইল চাইবে,আপনি যদি আপনার ইমেইলটি তাকে প্রদান করেন তাহলে সে তার বিজনেস ম্যানাজার এ আপনাকে এডমিন করে দিবে এবং আপনাকে বলবে সেই বিইজনেস ম্যানাজারে আপনার পেজ টি এড করে দিতে।আপনার যদি বিজনেস ম্যানাজার নিয়ে ধারনা না থাকে তাহলে আপনি কোনো প্রকার সন্দেহ ছাড়াই আপনার পেজটি তার বিজেনস ম্যানাজারে এড করে দিবেন,মজার ব্যাপার হলো আপনার যেহেতু বিজেনস ম্যানাজার নিয়ে ধারনা নেই তাই হ্যাকার আপনাকে সব কিছু স্ক্রিনশর্ট দিয়ে দেখিয়ে দিবে কিভাবে আপনার পেজ সেখানে এড করতে হয়
সুতরাং আপনার ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজ হ্যাকার থেকে নিরাপদ রাখতে নিম্নে বর্নিত কয়েকটি নির্দেশনা অনুসরণ ক্রুনঃ
১।ফেসবুক একাউন্টে টু ফেক্টর অথেনটিকেশন ফিচার এক্টিভ রাখুন।
২।আপনার ফেসবুক পেজ আপনার নিজস্ব বিজনেস ম্যানাজার কানেক্ট করে রাখুন।
৩। Facebook.com ব্যাতিত কোনো লিংকে যেয়ে আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৪।ফেসবুকে কোনো নোটিফিকেশন পেলে তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখুন সেটা ফেসবুকের পক্ষ থেকে কিনা এবং সেখানে কি বলা আছে।
৫। আপনার ন্যাশনাল আইডেন্টি কার্ডের সাথে মিল রেখে ফেসবুক প্রোফাইলের নাম করন করে রাখবেন।এতে করে আপনার প্রোফাইল হ্যাক হয়ে গেলেও রিকোভার করতে পারবেন।