আগামী মাসেই দেশে দ্রুতগতির ৫জি সেবা চালুর কথা ছিল। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই সেবা চালুর পরিকল্পনা নিয়েই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তরঙ্গ নিলামও করেছিল। তবে সবকিছুই এখন অনিশ্চিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পরই ৫জি সেবার বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে টেলিটকের মাধ্যমে ৫জি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। জাতীয় সংসদ, সচিবালয়সহ ৬টি জায়গায় এই সুবিধার আওতায় আসে। এর আগে গেল বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে মোবাইল অপারেটরেরা।
বর্তমানে দেশে ৩জি ও ৪জি সেবা চালু রয়েছে। ২০১৩ সালে ৩জি চালু হয় আর ৪জি সেবা চালু করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। বিশ্বে ২০১৯ সালে প্রথম ৫জি সেবা চালু করে দক্ষিণ কোরিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫জি চালুর এক মাস আগেও এ সংক্রান্ত কোনো লাইসেন্স এখনো হাতে পায়নি অপারেটরেরা। কথা ছিল বিটিআরসি এজন্য ইউনিফায়েড লাইসেন্স প্রদান করবে। আর অপারেটরেরাও এখনো এই লাইসেন্স হাতে পায়নি। তাই তাদের তরফ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, দ্রুত ৫জি কানেকটিভিটি দেওয়ার জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছেন। ৫জি চালু করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই, তবে এজন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্র্রায় বিপুল পরিমাণ সফটওয়্যার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে।
‘৫জির শুরুতে আমাদের ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে, টাওয়ারগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে, ৫জি প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক সহজলভ্য এবং অ্যাকটিভ শেয়ারিং বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। নেটওয়ার্কগুলো কোথায় কোথায় প্রয়োজন আছে, গ্রাহকরা ৫জি সেবায় কতটা উপকৃত হবেন বা চাহিদা কেমন হবে এসব বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রস্ততি নেওয়া হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪জিতে সেকেন্ডে যেখানে সর্বনিম্ন গতি ৭এমবিপিএস, সেখানে ৫জি এর গতি ২০এমবিপিএস। ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি ব্যবহৃত হবে শিল্পখাতে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট খাত চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। আর এই খাত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অপারেটরদের পক্ষে এই সেবা নিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।
টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫জি চালু করতে বিনিয়োগ লাগবে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়িক ক্ষেত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় বিনিয়োগের ঝুঁকি নেয়নি কোনো অপারেটর। ইউনিফাইড লাইসেন্স পেলেই তবে বিনিয়োগ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে অপারেটরেরা।
যদিও এরই মধ্যে সবগুলো অপারেটর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫জি ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু খোদ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের কাছেও ডিসেম্বরে ৫জি চালু না হওয়ার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তারা অপেক্ষা করছেন। নির্বাচনের পরে ৫জি’র বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করা হবে।