বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ঘোষিত এক নির্দেশনায় সবগুলো অপারেটর জনপ্রিয় ৩ দিন ও ১৫ দিনের ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ বিলুপ্ত করেছিল। তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এতে করে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং ইন্টারনেটের দাম কমবে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রথম প্রহর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হয়। এরপর আসলে দেখা যায়, ইন্টারনেটের মেয়াদ বাড়লেও দাম কমেনি, বরং তা আরও বেড়েছে।
ওই নির্দেশনার পর গ্রামীণফোন ৭ দিনের এক জিবি অফারে ৬৯ টাকা, আড়াই জিবি অফারে ৯৮ টাকা প্যাকেজ ঘোষণা করে। রবি ৭ দিনের এক জিবি অফারের দাম নির্ধারণ করে ৬৮ টাকা। আড়াই জিবির দাম ৯৮ টাকা, ৫ জিবির দাম ১৪৮ টাকা। বাংলালিংকের ৭ দিনের এক জিবি ডাটার দাম করা হয় ৬৯ টাকা, তিন জিবির দাম নির্ধারণ করে ৮৯ টাকা।
পরবর্তীতে দেখা গেল, সরকার যে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষা করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিল তা হয়নি। আর জনপ্রিয় ৩ দিনের প্যাকেজ বন্ধ করায় ও ইন্টারনেটের দাম বাড়ায় গ্রাহকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর বিটিআরসি কার্যালয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও অপারেটরদের সিইওরা না থাকায় ক্ষিপ্ত হন মন্ত্রী।
সভায় মন্ত্রী মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের আগে ইন্টারনেটের দাম বাড়ুক এটা তিনি চান না।
এরপর অপারেটরদের সিইওরা বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ থাকায় ইন্টারনেটের দামের বিষয়ে কোনো কথা বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এসময় এও বলা হয়, আগে ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। এরপর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কথা বলবেন।
গত ৭ নভেম্বর ৩ দিনের প্যাকেজের দাম ও পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে শুধু ৭ দিন মেয়াদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া ৩০ দিন ও আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম না বাড়ানোর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দেয় বিটিআরসি। ওই চিটিতে ১০ নভেম্বর রাত ১২টার মধ্যে এই নির্দেশনা কার্যকর করতে বলা হয় সবগুলো অপারেটরকে।
দাম কমানোর ফলে বর্তমানে এক জিবি ইন্টারনেটের দাম ৬৯ টাকা থেকে কমে ৪৮ টাকা হয়েছে, যার মেয়াদ ৭ দিন। এর আগে প্যাকেজ কমানোর নির্দেশনার পর অপারেটরগুলো ৩ তিন ও ৭ দিনের প্যাকেজগুলো বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে ৩ দিনের প্যাকেজের মেয়াদ ৭ দিন করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে বিটিআরসি যে, দেশে গ্রাহকদের ৬৯.২৩ শতাংশ ৩ দিনের প্যাকেজ, ১৬.৮৪ শতাংশ ৭ দিনের প্যাকেজ, ৩.৮২ শতাংশ ১৫ দিনের প্যাকেজ এবং ১০.১১ শতাংশ ৩০ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করছেন। অথচ এবার সেই জনপ্রিয় ডেটা প্যাকটি তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস বাংলাদেশের (এমটব) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মোবাইল টেলিকম শিল্পখাত তার সূচনা লগ্ন থেকেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের মোবাইল অপারেটররা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করে এবং উৎকৃষ্ট সেবা ও সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য নিশ্চিত করে। গত ১৫ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশাবলী অনুযায়ী নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অপেরেটররা তাদের ইন্টারনেট প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও আপডেট করে। দুর্ভাগ্যবশত এর মাত্র ১৫ দিন পরে আবারও প্রোডাক্ট পোর্টফলিও পরিবর্তন করতে নতুন নির্দেশনাবলী দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা ইতিমধ্যেই এই জটিল পোর্টফোলিও পরিবর্তন করেছেন। মোবাইল অপারেটররা সন্দেহাতীতভাবেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি বাংলাদেশির জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে ও দেশকে এগিয়ে নিবে বলে তারা আশা করেন।