ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মানা নিয়ে আইক্যানের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার(২৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ।বুধবার স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এই আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের সাথে বসা এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানানো হয় ঐ বিবৃতিতে ।
ওই বৈঠকে মন্ত্রী আইক্যানের কাছে ইউনিকোডে বাংলা ভাষার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং এগুলো সমাধানে সহযোগিতা চান। বৈঠকে ছিলেন আইক্যানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গোরান মারবাই এবং চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ডেভিড কনার্ডসহ শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের দলে ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক। এছাড়া মন্ত্রীকে সহায়তা করার জন্য বার্সেলোনায় এমডব্লিউসি সফরে সরকারি প্রতিনিধি দলে যুক্ত টেলিকম বিশেষজ্ঞ টিআইএম নূরুল কবীর বৈঠকে যোগ দেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বার্সালোনার মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস হতে বার্তা ২৪ ডটকমকে জানান, ‘আইক্যান আমাদের মতের সঙ্গে একমত হয়েছে। আইক্যানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন সবারই উচিত জাতীয় মান অনুসরণ করা। তারা আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’
‘আইক্যানের সিইও নিজে বলেছেন, ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে তারা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা জানাবেন। আর আইক্যানের সমর্থনের মানে হলো ইন্টারনেট ডোমেইনে যে সংকটটি ছিল তার দূর করে ফেলতে পারবো।’ বলছিলেন মন্ত্রী।
নূরুল কবীর বার্তা২৪ ডটকমকে জানান, উদ্ভুত সমস্যা নিয়ে গত এক বছর যাবত আইক্যানের সঙ্গে বৈঠক-ডিসকাশন হয়ে আসছে। কিন্তু এটা সমাধানের দিকে এগুচ্ছিল না।
তিনি জানান, ‘বার্সেলোনায় বুধবারের বৈঠকে আইক্যানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং সিটিও একবাক্যে জানিয়েছেন তারা বাংলাদেশের স্ট্যান্ডকে সমর্থন দেবেন। প্রয়োজনে ইউনিকোডের কাছে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের দাবির বিষয় জোর সমর্থন জানাবেন।’
ইউনিকোডে বাংলার কী দাবি আর কী সমস্যা তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন মোস্তাফা জব্বার।
বার্তা২৪ ডটকমকে মন্ত্রী জানান, আমাদের দু’তিনটা ইস্যু ছিল, যে জায়গাগুলোতে ইউনিকোডের সঙ্গে আমাদের সমস্যা।
‘ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। আমরা এই কনসোর্টিয়ামে ঢুকেছি ২০১০ সালে। ফলে এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে বাংলার যেসব ইস্যুগুলো ছিল তা সিরিয়াসলি আনঅ্যাড্রেস ছিল।’
তিনি বলেন, ড়, ঢ়, য় এবং ৎ বর্ণ আছে। কিন্তু হিন্দিতে নাই। যেহেতু আমরা ছিলাম না, সেই কারণে ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বলতে যা বোঝানো হতো বাংলা তার মধ্যে ছিল এবং ইন্ডিয়ানদের মতামত অনুসারে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হয়েছে।
‘ইন্ডিয়াতে দেবনাগরীতে নোক্তা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোক্তা তাদের নানা কাজে লাগে, শব্দের নীচে ব্যবহৃত হয়। আমার নোক্তার যুগে থেকে সেই বিদ্যাসাগরের আমল হতে বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের ভাষায় নতুন চারটি অক্ষর যোগ করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি তাতে রয়ে গেছে। আর আমাদের ড়, ঢ়, য় লিখতে ওরা নোকতা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বরচিহ্নগুলো এগুলোকে আমরা কার চিহ্ন বলি আর ওরা বলে মাত্রা। আরও একটি সমস্যা আছে সেটি হলে ওরা আমাদের টাকা চিহ্নকে বেঙ্গলি রুপি বলে।
‘তার মানে হলো এই ইউনিকোডে বাংলায় ইন্ডিয়া বা দেবনাগরীর প্রভাবটা রয়ে গেছে। আমারা যে আলাদা করে যে অক্ষর নিয়ে সেগুলোকে তারা পরিবর্তন করেনি।’ বলছিলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি তখন বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দুটি করে কোড দিতে হয়। নোক্তা একটা আর ড একটা, নোক্তা একটা ঢ একটা-এমন করে। এটির পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতেও ঝামেলা তৈরি করছে।
মোস্তাফা জব্বার জানান ‘আইক্যানের মিটিংয়ে আমরা এটা বোঝাতে পেরেছি এটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। আমাদের যে জাতীয় মান, আমরা যেটাকে স্ট্যান্ডার্ড করছি-অবশ্যই ইনিকোডকে সেটাই মানতে হবে। এছাড়া ডোমেইন নেইম যখন বাংলায় লিখবো তখন কোনো মৌলিক অক্ষরের জন্য ডবল কোড ব্যবহার করবো না।’