দেশের প্রথম পায়ে হাঁটা রোবট উদ্ভাবন করেছেন শাজলালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থী। সামাজিক রোবট ‘রিবো’ উদ্ভাবনের পর এবার ‘লি’ নামে পায়ে হাঁটা রোবটটি উদ্ভাবন করে শাবিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পাঁচ সদস্যের একটি টিম।
সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ‘লি’ নামে রোবটটি সবার সামনে উন্মুক্ত করা হয়।
শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রভাষক নওশাদ সজীবের নেতৃত্বে ‘ফ্রাইডে ল্যাব’ নামে পাঁচ জনের একটি টিম এই রোবটটি উদ্ভাবন করেন। এটি দেশের প্রথম পায়ে হাটা রোবট বলে দাবি করছেন তারা।
রোবট ‘লি’-এর বিষয়ে নওশাদ সজীব জানান, বাংলাদেশে তৈরি হিউমেনয়েড রোবটটি দেখতে মানুষের মতো এবং এর উচ্চতা ৪ ফুট ১ ইঞ্চি (১২৬ সেমি)। রোবটটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি মানুষের মতো হাঁটতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এটির ওজন ৩০ কেজি। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের ইনভেশন ফান্ডের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে রোবটটি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন বছর।
তিনি আরও জানান, ফ্রাইডে ল্যাবের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
গত শনিবার (২০ এপ্রিল) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি রোবটটি উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাবি’র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
টিমের সদস্য মেহেদী হাসান রুপক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আইসিটি ডিভিশন থেকে দশ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আরও ভালো মানের রোবট তৈরি করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমিসু বিশ্বের অন্যতম একটি ইন্টিলিজেন্ট রোবট যেটি ভালোভাবে হাঁটতে পারে। এটি কিনতে গেলে ২৫ কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদেরকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হলে আমরা এমন রোবট তৈরি করতে পারব।’
আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শাবিতে তৈরি আগের রোবট ‘রিবো’-এর সঙ্গে বর্তমান ‘লি’-এর পার্থক্য হচ্ছে লি হাঁটতে পারি। রোবটকে হাঁটানোর জন্য অনেক দামি মোটর প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কম বাজেট পেয়েছি। আরও বাজেট পেলে উন্নত মানের রোবট তৈরি করতে পারব।’
টিমের অপর সদস্য জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রোবটটি বাংলায় যাতে কথা বলতে পারে অর্থাৎ কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তার বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করেছি। রোবটটিকে গান, কবিতা ইত্যাদিও শেখানো হয়েছে। সাধারণত বাসা, বাড়ি -অফিসে ব্যবহার করা হয় এমন সব ভাষা ‘লি’-কে শেখানো হয়েছে।’
অপর সদস্য মোহাম্মদ সামিউল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রোবটটি যদি ভালোভাবে হাঁটতে পারে তাহলে আমরা যে কোনো সেক্টরে কাজে লাগাতে পারব। ইন্ডাস্ট্রি, ট্রাফিক কন্ট্রোল কিংবা অফিসসহ যে কোন জায়গাতে মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতে রোবট মানুষের বাসা-বাড়ি অফিসে বিভিন্ন কাজে দেখা যাবে। আর এটিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে উন্নত মানের মোটর প্রয়োজন।’
ফ্রাইডে ল্যাবের সদস্যবৃন্দ: শাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রভাষক নওশাদ সজীব, আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুপক, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ সামিউল হাসান এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি। পাঁচজন টিম সদস্যের বাহিরে গত তিন বছর সাজিদ, শান্ত, খাইরুল, শোভন, সোহান, জান্নাত সহ আরও অনেকে কাজ করেছে বলে জানান ফ্রাইডে ল্যাবের সদস্যবৃন্দ।
‘লি’র প্রধান বৈশিষ্ট্য: মানুষের মতো দুই পায়ে হাঁটতে পারে। বাংলা ভাষা বুঝতে পারে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজিন্সের মাধ্যমে মানুষের কথার উত্তর দিতে পারে। ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে মানুষকে মনে রাখতে পারে। হ্যান্ডশেক, নাচা, স্যালুটসহ বিভিন্নরকম অঙ্গভঙ্গি করতে পারে। মুখে মানুষের মতো চোখ, চোখের পাতা, ঠোট প্রভৃতির মাধ্যমে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন করতে পারে।
নামকরণ: বাংলা স্বরবর্ণ থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি লিপি হল ‘লি’, যা দেখতে ৯ এর মতো ছিল। এ থেকেই নামকরণ করা হয়েছে রোবটটির। রোবটটির নামকরণ করেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিন সুলতানা।